জহুরুল ইসলাম ॥ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়েছে গোষ্ঠি দ্বন্দ্ব। প্রায় ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর। সর্বশেষ বুধবার রাতে সোহেল রানা লেলিন নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী প্রতিপক্ষের গুলিতে আহত হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিপন্থীদের সঙ্গে স্থানীয় সংসদের বিরোধের জের ধরে দলের ভেতরে হানাহানি বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
হঠাৎ করেই অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে। বিশেষ করে একের পর এক সংঘষর্, হামলা, লুটপাটে জর্জরিত হয়ে পড়েছে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ সোহেল রানা লেনিন (৩৮) নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন নিজ দলের লোকের হাতে। বুধবার রাত ১০টার দিকে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। তিনি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সোহেল রানা লেনিন চাপাইগাছি গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের (সাবেক মেম্বর) ছেলে এবং জগন্নাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহমেদ খানের নিকট আত্মীয়। সোহেল রাতে হোগলা বাজারের একটি মুদি দোকানে বসেছিলেন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে চারজন এসে প্রথমে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। পরে তার উপর গুলি বর্ষণ করে পালিয়ে যায়। আহত সেলিম জানিয়েছেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আজম হান্নানের নেতৃত্বে তার ওপর হামলা হয়। জানা গেছে, জগন্নাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহমেদ খান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খানের অনুগত। আর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আজম হান্নান স্থানীয় (কুমারখালী-খোকসা) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাব জর্জের লোক হিসেবে পরিচিত। এর আগে গত ২৮ এপ্রিল উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের শালঘর মধুয়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্র“পের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। গত ১৯ এপ্রিল জগন্নাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আজম হান্নানের ওপর হামলা হয়। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহমেদ খানের নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে অভিযোগ হান্নানের। ৮ এপ্রিল উপজেলার কোমর ভোগ গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্র“পের সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হন। লুটপাট ও ভাঙচুর চলে বেশ কিছু বাড়িতে। হঠাৎ করে দলের মধ্যে এমন দ্বন্দ্ব-কোন্দল বেড়ে যাওয়ার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিপন্থীদের সঙ্গে স্থানীয় সাংসদের বিরোধকে দায়ী করছেন দলের অনেক নেতা। তারা বলছেন, এলাকার বালু মহাল, হাট, ঘাট ও ঠিকাদারী কাজের কর্তৃত্ব নিয়েই মূলত দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ কিছু নেতার সমর্থকরা। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন জাফর বলেন, ‘স্থানীয় এমপির সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন সমন্বয় নেই। এমপি অনেক বড় ব্যাপার, তার কাছেই সরকারের সব বরাদ্দ আসে। এখন এমপি যদি দলের লোকদের কাছে টেনে না নেন, তাহলে তো সমস্যা হবেই। আর এ কারণেই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। তিনি বলেন, এতে দল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাই জেলা নেতাদের এখনই এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা উচিৎ।’ কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান বলেন, ‘দলে সদ্য যোগ দেওয়া হাইব্রিডদের কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। এর জন্য দায়ী স্থানীয় এমপি। তার দাবি এমপি দলের নেতাকর্মীদের কোন খোঁজ রাখেন না, হাইব্রডদের নিয়ে চলা ফেরা করেন। এ কারণে পোড় খাওয়া নেতাকর্মীরা আজ নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন।’ তবে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের এমপি ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাব জর্জ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘দলের মধ্যে ছোটখাট ঝামেলা থাকবেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার কারো সঙ্গে কোন বিরোধ নেই। আমি হাইব্রিডদের নিয়ে চলি, নাকি আওয়ামী লীগের মূল লোকদের নিয়ে চলি তা এলাকার মানুষ জানেন। আমি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করে কথা বলতে চাই না। যারা ব্যক্তি স্বার্থে দলকে ব্যবহার করছে তারা যখন দলের পদ হারিয়ে ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হবেন তখন নিজেদের ভুল টের পাবেন।’ এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান বলেন, ‘আমি কারো বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে চাই না। কেবল একটি কথা বলব, সেটি হল, যে যেমন কর্ম করবেন সে তেমন ফল পাবেন।‘
You cannot copy content of this page
Leave a Reply