ঢাকা অফিস ॥ আইনমন্ত্রীর কথায় সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা প্রকাশ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সাহেল প্রিন্স। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রিন্স বলেন, জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তিনি তার বক্তব্যে ‘দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সু-চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই’ বলে যা উল্লেখ করেছেন তাতে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারের ইচ্ছাকৃত প্রতিবন্ধকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী ‘দোষ স্বীকার করে ক্ষমা না চাইলে বিদেশে যাওয়ার’ সুযোগ দেখছেন না, কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে আবেদন করা হলে তিনি বলেছিলেন ‘সরকার যে শর্তে তাকে মুক্তি দিয়েছেন, সেই শর্ত শিথিল করলে খালেদা জিয়ার বিদেশে যেতে আইনগত কোনো বাধা থাকে না। এটা নির্ভর করছে একেবারেই সরকারের সিদ্ধান্তের উপর’ এবং তিনি আরো বলেছিলেন, ‘সরকার বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে’। আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে সেসময় ফলাও করে প্রচারিত হয়েছিল। কিন্তু ২/১ দিন পরই তিনি ইউটার্ন নিয়ে বলেছেন, ‘সম্ভব নয়’ এবং এখন বলছেন ‘ক্ষমা চাইতে হবে’। এগুলো সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রিত ও কলুষিত করার ব্যর্থ চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। প্রিন্স বলেন, যিনি কোনো অপরাধই করেন নাই তার ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটেছে, যা ভ্রষ্টাচার ছাড়া কিছুই নয়। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন করতে যারপরনাই চেষ্টা করেছে এবং এখনও তা অব্যাহত রেখেছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রারম্ভে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার শর্তসাপেক্ষে তাদের দেয়া ফরমায়েশি রায় স্থগিত করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলেও কার্যত তিনি গৃহবন্দী। সরকার প্রথম দফায় বেগম খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসার শর্ত দিলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশের যেকোনো হাসপাতালে চিকিৎসার শর্ত দেয়। তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে অসুস্থ। তিনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ৫৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময় তার স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি কতটা জটিল এবং শোচনীয় ছিল তা তার চিকিৎসকরা ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার কোভিড পরবর্তী জটিলতা নিরসন হলেও বর্তমানে তিনি লিভার, কিডনি ও হার্টের বিভিন্ন জটিলতায় তীব্র অসুস্থ অবস্থায় নিজ বাসভবনে চিকিৎসাধীন আছেন। তার চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্বারা গঠিত মেডিকেল বোর্ড উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে আরও উন্নত সেন্টারে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। যা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। প্রিন্স বলেন, আমরা সরকারকে ছলচাতুরি ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করে বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় নেত্রী, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছি। সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতেই বারবার লকডাউন দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করে প্রিন্স বলেন, দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেছে। করোনা মোকাবিলায় এবং জনগণের জীবন রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনজীবন বিপন্ন হচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় সরকারের ভুল পদক্ষেপ, সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারা এবং দ্রুত জনগণকে টিকার আওতায় আনতে না পারার কারণে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা দেখা যাচ্ছে। সরকারের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমসহ করোনা প্রতিরোধে সামগ্রিক ব্যর্থতা ঢাকতেই সরকার বারবার লকডাউন দিচ্ছে এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সেগুলোও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। দিন আনে দিন খায়, নিম্ন আয় এবং কর্মহীন মানুষকে অর্থ ও খাদ্য সহায়তা না দিয়ে লকডাউন, শাটডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ কখনো কার্যকর কিংবা বাস্তবায়িত হয় না। তিনি বলেন, জনগণের জীবন হচ্ছে বিপন্ন, অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছে জনগণ। সরকার তাদের অনুগত একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে গিয়ে টিকাসহ করোনা প্রতিরোধের সামগ্রী নিয়ে অবাধ দুর্নীতি ও লুটপাটে জড়িয়ে পড়ছে। টিকা কূটনীতিতেও ব্যর্থ হয়েছে নিশিরাতের সরকার। যখন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই বলছেন ‘সবাই নাকি টিকা দেবে কিন্তু কেউ দিচ্ছে না, সবাই মুলা দেখাচ্ছে’। আবার তিনি বলেছেন- প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার কারণেই প্রথমবার টিকা কার্যক্রম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে, তখন সহজেই বলা যায়- সরকার টিকা কূটনীতিতে ব্যর্থ হয়েছে। সাহায্য বা উপহারের টিকা দিয়ে সমগ্র জাতিকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা সম্ভব নয়। সরকারের আশ্বাসে জনগণ আর আস্থা রাখতে পারছে না। সরকার যদি টিকা সংগ্রহ করে তা সঠিকভাবে মানুষকে দিতে পারতো তাহলে দেশে করোনা পরিস্থিতি এত ভয়াবহ আকার ধারণ করতো না, জনগণের জীবন বিপন্ন হতো না, দেশের অর্থনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হতো না। প্রিন্স বলেন, একইসাথে করোনা সংক্রমিত জেলাগুলোতে চিকিৎসা সংকট দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় বেড, অক্সিজেন সিলিন্ডার-পয়েন্ট-হাইফ্লো নেজাল, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে এই সংকট আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। পাশাপাশি করোনা পরীক্ষাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল্য। বিএনপির পক্ষ থেকে করোনার অতি ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে এই চিকিৎসা সংকট দূরীকরণে জেলা সিভিল সার্জন বরাবরে স্মারকলিপি দেয়া চলমান রয়েছে। তারপরও সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে অবিলম্বে দেশব্যাপী জেলা-উপজেলায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত বেড, অক্সিজেন সিলিন্ডার-পয়েন্ট-হাইফ্লো নেজাল, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বেড স্থাপন/বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং একইসাথে বিনামূল্যে অধিকহারে করোনা পরীক্ষা, সকলকে অতিদ্রুত টিকার আওতায় এনে নিম্ন আয় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে করোনা চিকিৎসার আহ্বান জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভেকেট আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, ছাত্রদলের দপ্তর সম্পদাক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply