ঢাকা অফিস ॥ ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করার চুক্তি পুনরায় সক্রিয় করা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সহযোগী দেশগুলোকে ইরানের হুমকির বিষয়ে ‘সজাগ হওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনেট বলেছেন, ইরানের ‘নিষ্ঠুর জল্লাদ’ ক্ষমতাসীনরা পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হতে চায়। অবশ্য এমন অভিযোগ ইরান বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
কূটনীতিকেরা বলছেন, পারমাণবিক চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। তবে, এখনও বেশ কিছু অসঙ্গতি ঠিক করা বাকি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ইসরায়েল বরাবরই এই চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে। ইরানের সাম্প্রতিক নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন কট্টরপন্থি ইব্রাহিম রায়িসি। তিনি দেশটির শীর্ষ বিচারপতি ছিলেন। আগস্টে তিনি শপথ নিতে যাচ্ছেন। রায়িসির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অতীতে রাজনৈতিক বন্দিদের মৃত্যুদ- দেওয়ার ঘটনায় রায়িসির সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। পরমাণু চুক্তি পুনরায় চালু করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানিÑএই ছয় পরাশক্তির সঙ্গে ইরানের আলোচনা গত এপ্রিলে শুরু হয়েছে। চুক্তি কার্যকর করে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বদলে পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করবে ইরান। তবে, যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানও চুক্তি আর মানেনি। গত রোববার উল্লিখিত দেশগুলোর প্রতিনিধিরা অস্ট্রিয়ার ভিনেয়ায় ষষ্ঠবারের মতো আলোচনায় বসেছিলেন। এরপর প্রতিনিধিরা তাঁদের রাজধানীতে ফিরে যাওয়ার জন্য আলোচনা স্থগিত করা হয়। ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেছেন, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে তাঁরা এখন চুক্তি কার্যকরের কাছাকাছি পৌঁছেছেন। তবে তিনি এও উল্লেখ করেছেন যে, দেশগুলোর মধ্যে এখন যে দূরত্ব রয়েছে, তা দূর করা সহজ হবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি এনরিক মোরা ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেছেন, কারিগরি বিষয়ে অগ্রগতি হওয়ায় আলোচনা অনেক পরিষ্কার হয়েছে। তাঁরা এখন বুঝতে পারছেন রাজনৈতিক সমস্যাগুলো কোথায়। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেছেন, ‘এখনও অনেক দূর যেতে হবে’Ñবিশেষ করে নিষেধাজ্ঞা এবং ইরানের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ইরান সবচেয়ে বেশি পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। যদিও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জনে তাদের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। ইসরায়েল চুক্তির বিরোধিতা করছে কেন? ইরান ও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে আসছে। যার ফলে দুই দেশই ‘ইট মারলে পাটকেল খেতে হবে’ নীতি অবলম্বন করে আসছে। যদিও তারা উভয়েই সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে আসছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি অনেকবার ইসরায়েল রাষ্ট্র বিলুপ্ত করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ২০১৮ সালে এক বক্তৃতায় তিনি ইসরায়েলকে ‘ক্যানসার সৃষ্টিকারী টিউমারের’ সঙ্গে তুলনা করে বলেন, দেশটিকে ওই অঞ্চল থেকে সরিয়ে দেওয়া দরকার। ইরানকে বড় হুমকি হিসেবে মনে করে ইসরায়েল। তারা বারবার বলে আসছে যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনেট তাঁর মন্ত্রিসভাকে বলেছেন, ‘এটাই বিশ্ব শক্তির জেগে ওঠার… এবং উপলব্ধি করার শেষ সুযোগ যে, তারা কার সঙ্গে কারবার করছে।’ বেনেট বলেন, ‘নিষ্ঠুর জল্লাদদের সরকারকে কখনোই গণবিধ্বংসী অস্ত্রের মালিক হতে দেওয়া ঠিক হবে না।’ সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে শত্রুতা আবারও বেড়েছে। ইরানি শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীকে গত বছর হত্যা করা এবং পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে ইরান।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply