ঢাকা অফিস ॥ দেশে করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে চলমান ‘লকডাউন’ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার বলেন, আমাদের পরিকল্পনা আছে আর এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানোর। কারণ দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এটা ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। সংক্রমণ এড়াতে এই সিদ্ধান্ত আগামী ১৬ মে জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক পরলেই নিরাপদ, আর না পরলে বিপদ- এই কথাটি মাথায় রাখতে হবে। চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বাড়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন পালন হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করে সরকার। আর এবারের ঈদে লঞ্চ-ট্রেন এবং দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে ত্রিশ রোজা পূর্ণ ধরে এবছর পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের ছুটির আগে আজ বুধবার সরকারি অফিস খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল মঙ্গলবার (১১ মে) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি বৃহস্পতিবার (আগামীকাল) থেকে তিনদিন অর্থাৎ শনিবার। বুধবার অফিস খোলা থাকবে। এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, এটা (ঈদের ছুটি কবে থেকে) স্টিল আন-নোন। চাঁদ দেখা কমিটির মিটিং হবে তারপর…। সরকারি ক্যালেন্ডারে বৃহস্পতিবার থেকে এবারের ঈদের ছুটি নির্ধারিত থাকলেও ৩০ রোজা পূর্ণ না হলে ঈদ হবে একদিন আগে। সেক্ষেত্রে বুধবার থেকেই ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু সরকার এখনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। এদিকে ঈদের চাঁদ বা আরবি শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখতে বুধবার সভায় বসবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। চাঁদ দেখা গেলে বৃহস্পতিবার, আর না দেখা গেলে ৩০ রোজা পূর্ণ হয়ে ঈদ হবে ১৪ মে শুক্রবার। করোনা সংক্রমণের মধ্যে সরকার এবছর ঈদের ছুটি তিনদিনের বেশি না দিতে সবাইকে নির্দেশ দিয়েছে। আর ঈদের ছুটিতে সরকারি-বেসরকারি চাকুরেদেরও কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঈদের ছুটিতে সবাইকে কর্মস্থলে রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাধারণত ২৯ রমজান থেকে ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হয়। ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন ও পরের দিন- এই তিনদিন ছুটি থাকে। তবে রমজান মাস ৩০ দিন হলে ঈদের ছুটি একদিন বেড়ে হয় চারদিন। সেই হিসাবে এবার বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার (১২, ১৩ ও ১৪ মে) এবং রমজান মাস ৩০ দিনে হলে ১৫ মেও ছুটি থাকার কথা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে বুধবার থেকে ছুটি শুরু হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণ রোধে চাকরিজীবীসহ সবাইকে ঢাকায় রাখতে এবার ঈদের ছুটি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে বলে জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, এজন্য আজ বুধবার অফিস খোলা থাকবে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতিতে এই ছুটি দেয়া হচ্ছে। আমরা চাই না কেউ এখান (ঢাকা) থেকে বাইরে চলে যাক। তাই ছুটি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, যাতে সবাই ঢাকায় থেকে যায়। বুধবারও অফিস চলবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে, আপনাদের কর্মীদের ঢাকায় রেখে দেন। তিনি বলেন, এভাবে (গ্রামে) গেলে করোনা মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। আমরা এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ছুটি সাজিয়েছি, ছুটি সংক্ষিপ্ত করেছি। ঈদ যদি বৃহস্পতিবারও হয় অসুবিধা নেই। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দেশে এখন বিধিনিষেধ চলছে। আগামী ১৬ মে পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ বহাল থাকবে। বিধিনিষেধের নির্দেশনা অনুযায়ী, জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ রয়েছে। তবে শিল্প-কারখানা চলছে। সীমিত পরিসরে চলছে ব্যাংক লেনদেন। জেলার মধ্যে চলছে বাস। আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রয়েছে। গত ৫ মে’র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি চাকুরেদের ঈদের ছুটিতে বাধ্যতামূলকভাবে কর্মস্থলে থাকতে হবে। নির্দেশনায় বলা হয়, সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদের ছুটিতে আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ কর্মস্থলে (অধিক্ষেত্রে) অবস্থান করবেন।