ঢাকা অফিস ॥ ঈদের জামাত উন্মুক্ত স্থানে করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, আমরা জীবনে আরও অনেকগুলো ঈদ উপভোগ করতে চাই। কিন্তু আমরা এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নেই। সুতরাং এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যে ঈদ সামনে এসেছে সেটাকে যদি আমরা ঘরের মধ্যে সীমিত আকারে পালন করি তাহলে আমাদের জীবনে আরও অনেক ঈদ উপভোগ করার সুযোগ আসবে। তা না হলে যেভাবে সংক্রমণ ছড়ায়, উন্নত দেশ পর্যন্ত রোগীর চাপ নিতে পারছে না। দেশের প্রস্তুতিরও কিন্তু সবসময় একটা সীমাবদ্ধতা থাকবে। সেদিক থেকে রোগীর সংখ্যা যাতে কোনোভাবে বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের ঈদের এই যাত্রা বন্ধ করে নিজেদের ঘরের মধ্যে থেকে ঈদ উদযাপন নিজেদের মধ্যে যাতে সীমাবদ্ধ রাখি সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানাবো। তিনি আরও বলেন, ঈদ জামাত কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে উন্মুক জায়গায় আয়োজন করা যায় সেই বিষয়টিকে লক্ষ্য রাখার জন্য জনসাধারণকে এবং মসজিদ সংশ্লিষ্ট আলেম-ওলামা যারা আছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিকল্প পদ্ধতিতে ঈদ জামাত আয়োজন করার জন্য বলছি। ঈদ জামাত পরবর্তী সময়ে আমাদের একটা রীতি হচ্ছে কোলাকুলি করা কিংবা হাত মেলানো। সেটাও কিন্তু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণ। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ঈদের সময় আমরা কোলাকুলি না করি, হাত না মেলাই সেই বিষয়ে যেন আমরা লক্ষ্য রাখি। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এবিএম খুরশিদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা। উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল ধর্ম মন্ত্রণালয় আদেশ জারি করে, এবার ঈদের নামাজ পড়তে হবে মসজিদে। গত বছরের মতো এবারও ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের জামাত নিকটস্থ মসজিদে আদায় করার জন্য অনুরোধ জানায় তারা। ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অতি জরুরি। এ ছাড়া মসজিদে নামাজ আদায়েও কিছু নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। ইসলামি শরিয়তে ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বসহ আমাদের দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিজনিত কারণে মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কারণে এবার ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের নামাজের জামাত নিকটস্থ মসজিদে আদায় করার জন্য অনুরোধ করা হয়। প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত করা যাবে বলে জানানো হয়। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ঈদে যেভাবে মানুষ বাড়ি ফিরছে, তাতে দেশে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। আমরা নিজেদের সর্বনাশ নিজেরা ডেকে আনলে, করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া মুশকিল। তিনি বলেন, রাস্তাঘাটে জনসমাগম ও মানুষের চলাচল যেভাবে বেড়েছে, তাতে আমরা শঙ্কিত। যে মানুষগুলো বাড়ি ফিরছে, তারা যখন ঢাকায় ফিরবে তখন করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, সারাদেশের কোভিড হাসপাতালগুলোর অধিকাংশ বেড খালি। শনাক্ত ও মৃত্যুর হারও কমেছে। দেশে করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে সাড়ে ১২ হাজারেরও মতো করোনা ডেডিকেটেড বিছানা রয়েছে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ আছে। হাইফ্লো নেজাল ক্যানুলার পর্যাপ্ত মজুত আছে। মহাপরিচালক বলেন, ভারতে যে সংক্রমণ হয়েছে, তার ভয়াবহতা আপনারা দেখেছেন। করোনা পৃথিবী থেকে কবে যাবে, তা কেউ বলতে পারে না। ফলে যতোদিন করোনা থাকবে ততোদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। ডা. খুরশীদ আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগেও বলেছেন, বাড়িতে থাকুন, বাড়ি থেকে আপনারা ঈদ করুন। যে যেখানে আছেন, সেখানে থাকুন। জায়গা বদল করবেন না। প্রধানমন্ত্রীর উদাত্ত আহ্বান যদি আমরা না মেনে চলি, তাহলে আমাদের রক্ষা করবে কে? আপনারা দয়া করে করে, বিনীত অনুরোধ করছি, আপনাদের এই যে চলাচল, জনসমাগম বন্ধ না হলে করোনার সংক্রমণ শেষ হবে না। তাই নিজে সচেতন হোন ও অন্যকেও সচেতন করুন। ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুই অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা (প্রশাসন) ও অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) উপস্থিত ছিলেন।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply