নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেছেন, দেশের মানুষের ৫টি মৌলিক চাহিদা পুরণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের প্রতিটি ভূমিহীন, গৃহহীন ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবেনা। আশ্রয়ণের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার। জেলা প্রশাসক বলেন একসঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি-ঘর দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে নজিরবিহীন। বিভিন্ন দেশে ভূমিহীন, গৃহহীনদের ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্য সুদবিহীন ঋণ দেওয়ার নজির থাকলেও ভূমিহীন-গৃহহীনদের ডেকে এনে বিনামূল্যে তাদের বাড়ি-ঘর দেওয়ার নজির আর নেই। অসহায় মানুষকে এভাবে ঘর দেওয়াকে “অর্ন্তভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল” মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিশ্বে এটা নতুন মডেল, আগে কখনো কেউ এটা ভাবেনি।
গতকাল রবিবার সকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার সভাপতিত্বে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ২০ পরিবারকে দুই শতক জমির মালিকানা দলিলসহ সেমিপাকা ঘর ও ঘরের চাবী উপহার বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজ্বী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সাধন কুমার বিশ^াস, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান, কুষ্টিয়া আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাড. আ.স.ম.আখতারুজ্জামান মাসুম, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী রফিকুল আলম টুকু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব আনিসুজ্জামান ডাবুল সহ জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ, বিশিষ্টজন ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বটতৈল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মমিন মন্ডল, উপকারভোগীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পাখিরন নেছা। প্রধান অতিথি আরো বলেন- মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’-প্রধানমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তের আলোকে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি এবং গৃহ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কুষ্টিয়াতেও কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় প্রায় ২শত পরিবারের মধ্যে ইতোপূর্বে জমি এবং গৃহ প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, আশ্রয়ণে ছিন্নমূল বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী স্থায়ী আবাসনের পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানেরও সুযোগ পাচ্ছে। এতে দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। জমির মালিকানা দলিলসহ সেমিপাকা ঘর ও ঘরের চাবী উপহার বিতরনী অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ সাইদুর রহমান।
এর আগে সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের ৪৫৯টি উপজেলায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৪০ পরিবারকে দুই শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভূমিহীন ও গৃহহীন এসব মানুষদের হাতে জমির দলিল ও ঘরের চাবি তুলে দেন তিনি। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে আমি যেহেতু যেতে পারিনি। আমার পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, ডিসি এবং ইউএনও জমির দলিল ও ঘরের চাবি তুলে দেবেন। ’ দেশের ৪৫৯টি উপজেলা প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তার প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাত থেকে জমির দলিল ও ঘরের চাবি বুঝে নেন ছিন্নমূল এসব পরিবার। দলিলে জমির মালিকানা স্বামী ও স্ত্রীর যৌথ নামে করে দেয়া হয়েছে। তাদের নামে স্থায়ী দলিলের পাশাপাশি নামজারি করে খাজনা দাখিলাও দেয়া হয়েছে। এদিকে, সেমিপাকা ঘরে আছে দুটি রুম, একটি বড় বারান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট। পাশাপাশি সুপেয় পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও আছে। এ ছাড়াও আত্মনির্ভরশীল করতে ওইসব পরিবারের সদস্যদের জন্য কর্মসংস্থানের জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণও দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’-প্রধানমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তের আলোকে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি এবং গৃহ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে এ বছরের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা বাড়ি ও ব্যারাকে ৬৯ হাজার ৯০৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ গৃহ প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আজকের আশ্রয়ণের মধ্যদিয়ে গত ছয় মাসে মোট এক লাখ ২৩ হাজার ২৪৪টি পরিবারকে ভূমিহীন ও গৃহ প্রদান করা হয়েছে। আমাদের উন্নয়নের একটি মানবিক অবয়বরয়েছে। দারিদ্র ও ঝুঁকির মধ্যে থাকা জনগোষ্ঠির জীবন-মানের উন্নয়ন আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রমের মুল লক্ষ্য। এলক্ষ্য অর্জনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচী এবং অন্তর্ভূক্তিমুলক প্রবৃদ্ধি অন্যতম নিয়মক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ সেমিপাকা ঘর প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এভাবে দেশের সব মানুষের জন্য স্থায়ী আবাসনের বন্দোবস্ত করবে সরকার।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply