ঢাকা অফিস ॥ করোনাভাইরাসের ডেল্টা (ভারতীয়) ধরনে যদি কোনো বাড়ির কেউ একজন আক্রান্ত হন, তবে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা অন্য ধরনগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, এই ধরনটির ক্ষেত্রে টিকার কার্যকারিতাও কম। ভারতে পাওয়া করোনাভাইরাসের এই ধরনটির যুক্তরাজ্যে সংক্রমণ বিশ্লেষণ করে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই) এমন শঙ্কাজনক চিত্র পেয়েছে বলে স্কাই নিউজ জানিয়েছে। দেড় বছর আগে মানুষে সংক্রমিত হওয়া নতুন করোনাভাইরাস রূপ বদল করে চলছে। এর মধ্যে গত বছর ভারতে এর যে পরিবর্তিত রূপ শনাক্ত হয়েছে, তা নাম পেয়েছে ডেল্টা। এই ধরন বা ভ্যারিয়েন্টটি (বি.১.৬১৭.২) অতি সংক্রামক হওয়ায় একে ‘বিশ্বের উদ্বেগ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এর আগে ভয় ধরিয়েছিল যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনাভাইরাসের আলফা ধরন। পিএইচই তাদের গবেষণায় পাওয়া তথ্য তুলে ধরে এক বিবৃতিতে বলেছে, ডেল্টা ধরনটি যুক্তরাজ্যের আলফা ধরনের চেয়ে গৃহস্থালিতে ৬৪ শতাংশ বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্যে এখন কোভিড-১৯ রোগীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যে পাওয়া আলফা ধরনকে (বি.১.১৭) ছাড়িয়ে গত সপ্তাহে ডেল্টা ধরনে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৩২৩ জনে। ভারতেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা লেগেছে এই ধরনটির কারণে। বাংলাদেশেও এই ধরনটির দাপটের মধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। মহামারীর প্রথম ঢেউয়ে করোনাভাইরাসের অন্যান্য ধরনে সাধারণত পরিবারের একজনকে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু ডেল্টা ধরনে এক পরিবারের বেশ কয়েকজন করে সংক্রমিত হচ্ছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে পিএইচই’র বিবৃতি উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘আমরা বি.১৬১৭.২ ধরনটির সঙ্গে বি.১.১৭ ধরনের তুলনায় গৃহস্থালিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বেশি দেখতে পেয়েছি। সাধারণের মধ্যে দ্রুত সংক্রমণের সঙ্গে যেহেতু গৃহস্থালির একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে, সেহেতু কোভিড-১৯ মহামারী ঠেকাতে কৌশল নির্ধারণে এই বিষয়টি প্রধান হয়ে উঠবে।’ পিএইচই’র গবেষণায় বলা হয়, ডেল্টা ধরনটি ঘরের বাইরেও ৪০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। এছাড়া এশীয়দের মধ্যে ডেল্টা ধরনে সংক্রমণের হার বেশি। ড়সাড়ে চার দিন থেকে সাড়ে ১১ দিনের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে ডেল্টা ধরনে সারা যুক্তরাজ্যে দ্বিগুণেরও বেশি সংক্রমণ হয়েছে বলেও জানিয়েছে পিএইচই। যুক্তরাজ্যে গত ১০ এপ্রিলের পর সাম্প্রতিক সপ্তাহে সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ হয়ে ওঠে। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকসের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ জুন প্রতি ৫৬০ জনে একজন সংক্রমিত হয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৬৪০ জনে একজন। ওই সপ্তাহে বেসরকারি আবাসে থাকা কোভিড-১৯ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৮৫ হাজার ৬০০ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬ হাজার ৮০০ জনে। যুক্তরাজ্যে এখন ভাইরাসের ডেল্টা ধরন শনাক্ত হয়েছে ৩৯ হাজার ৬১ জনের মধ্যে। এর মধ্যে দুই হাজার ৩৫ জন স্কটল্যান্ডে, ১৮৪ জন্য ওয়েলসে এবং ৪৩ জন নর্দান আয়ারল্যান্ডে। পিএইচই’র বিবৃতিতে বলা হয়, গত সপ্তাহে ১২ হাজার ৩৪১ জন থেকে বেড়ে এ সপ্তাহে ৪২ হাজার ৩২৩ জন আক্রান্ত হওয়ার একটি কারণ দ্রুত পরীক্ষা এবং ভাইরাসের ধরন শনাক্তের প্রক্রিয়া দ্রুত করা। পিএইচই জানায়, আলফার চেয়ে ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও কম কার্যকর। টিকার একটি ডোজ ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে ১৭ শতাংশ কম কার্যকর। তবে টিকার দুটি ডোজ ডেল্টা ধরনকে প্রতিরোধে তুলনামূলক সক্ষম বলে দেখতে পেয়েছে পিএইপই। গত ৭ জুন পর্যন্ত ইংল্যান্ডে ডেল্টা ধরনে সংক্রমিত হয়ে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং তারা পরীক্ষায় পজিটিভ ফল পাওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে মারা গেছেন। এদের মধ্যে ২৩ জন টিকা নেননি, সাতজন প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২১ দিনেরও বেশি আগে এবং ১২ জন টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১৪ দিনেরও বেশি আগে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply