ঢাকা অফিস ॥ গত এক দিনে দেশে আরও ৭ হাজার ৬৬৬ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯ লাখ ৪ হাজার ৪৩৬ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে আরও ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে। এদের নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট ১৪ হাজার ৩৮৮ জনের মৃত্যু হল। আগের দিন দেশে ৮ হাজার ৩৬৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বাংলাদেশে একদিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার এটাই রেকর্ড। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার শনাক্তের সংখ্যা কিছুটা কমে এলেও পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ হয়েছে। শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীদের মধ্যে ৩০৬৮ জনই ঢাকা বিভাগের, যা মোট শনাক্তের ৪০ শতাংশ। এছাড়া খুলনা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগেও হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা আগের দিনের ১০৪ জন থেকে বেড়ে ১১২ জন হয়েছে। এর মধ্যে কেবল খুলনা বিভাগেই ৩৫ জনের প্রাণ নিয়েছে এ ভাইরাস। সরকারি হিসাবে, আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে আরও ৪ হাজার ২৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ১১ হাজার ৭০০ জন। গত বছর ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ২০ ডিসেম্বর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর ৯৯ দিনে আরও এক লাখ রোগী শনাক্ত হওয়ায় ২৯ মার্চ দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়ায়। ততদিনে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়েছে বাংলাদেশ, দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে হু হু করে। মাত্র ১৬ দিনে আরও এক লাখ মানুষের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়লে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ এপ্রিল সাত লাখ পেরিয়ে যায়। এই এক লাখ শনাক্তে সময় লাগে ৪৭ দিন। দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমে আসে মে মাসে। পরের এক লাখ রোগী শনাক্ত হতে সময় লাগে দেড় মাস; দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়ে যায় ৩১ মে। করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায় জুনের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু আবার বাড়তে শুরু করে। সেই পথ ধরে আরও এক লাখ রোগী শনাক্ত হল এক মাসের মধ্যে। নয় লাখ শনাক্ত রোগীর দুঃখজনক মাইল ফলকে পৌঁছানের আগে সোমবার রেকর্ড ৮ হাজার ৩৬৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানায় সরকার। করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১১ মে তা ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ২৭ জুন রেকর্ড ১১৯ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় সোমবার থেকে আবার সারা দেশে লকডাউনের বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। ১ জুলাই থেকে সাত দিনের জন্য কঠোর লাকডাউন জারির ঘোষণাও দিয়ে রাখা হয়েছে। ঢাকা নগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ২২৬৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলায় ৩৬৮ জন, রাজশাহী জেলায় ৩৬৩ জন, খুলনা জেলায় ৩৭৮ জন এবং যশোরে ৩০৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইলে ১৯৩ জন, কুষ্টিয়ায় ১৮০ জন, কুমিল্লায় ১৭৫ জন, নাটোরে ১৬১ জন, বগুড়ায় ১৫২ জন, দিনাজপুরে ১৪৪ জন, নোয়াখালীতে ১৩৭ জন, গোপালগঞ্জে ১২১ জন, ফরিদপুরে ১১৬ জন, বাগেরহাটে ১১৬ জন, নওগাঁয় ১১৩ জন, ফেনীতে ১০৯ জন, ময়মনসিংহে ১০৭ জন এবং ঠাকুরগাঁও জেলায় ১০৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে। বিভাগওয়ারি হিসেবে ঢাকায় দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা আগের দিনের ৩৯৯৮ জন থেকে কমে ৩০৬৮ জন এবং খুলনা বিভাগে ১৪৬৪ জন থেকে কমে ১৩৬৭ জন হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের ৮১১ জন থেকে বেড়ে ১০১২ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৮৮৩ জন থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৫৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৬৫টি ল্যাবে ৩১ হাজার ৯৮২ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮২২টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ঢাকা জেলায় দৈনিক শনাক্তের হার আগের দিনের ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ থেকে সামান্য কমে ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিভাগে এই হার আগের দিনের মতই সাড়ে ১৯ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগে ২২ দশকি ৪৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ২০ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হয়েছে দৈনিক শনাক্তের হার। তবে রংপুর বিভাগে এই হার ৪২ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে কমে ৪০ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে ৪৬ দশমিক ২৮ শতাংশ থেকে কমে ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১৫ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। খুলনায় মারা যাওয়া ৩৫ জনের মধ্যে ৯ জনই ছিলেন যশোর জেলার বাসিন্দা। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ২১ জন, চট্গ্রাম বিভাগে ১৬ জন, রংপুর বিভাগে ১০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এই ১১২ জনের মধ্যে ৬১ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ২৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১০ জনের বয়স ছিল ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৪ জনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যেম ৫ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২১ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের ৬৭ জন ছিলেন পুরুষ, ৪৫ জন ছিলেন নারী। ৭৭ জন সরকারি হাসপাতালে, ২১ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৩ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একজনকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৮ কোটি ১৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৯ লাখ ৩১ হাজারের বেশি মানুষের।