ঢাকা অফিস ॥ দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে আরও ১৩২ জনের প্রাণ। যা এক দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৪ হাজার ৭৭৮ জনে। ২৬ জুন বাদ দিয়ে গত ২৫ জুন থেকে এ পর্যন্ত প্রতিদিনই শতাধিক মৃত্যুর তথ্য মিলেছে। গত ২৭ জুন ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ৩০ জুন মারা যান ১১৫ জন। গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হিসেবে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আট হাজার ৪৮৩ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল নয় লাখ ৩০ হাজার ৪২ জনে। এদিকে দেশে প্রতিদিনই চলছে করোনার রেকর্ড ভাঙা-গড়া। প্রায় প্রতিদিনই শনাক্ত আর মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হচ্ছে, ভাঙছে পুরনো রেকর্ড। তবে কোনো কোনো দিন আগের দিনের চাইতে মৃত্যু কিছুটা কমলেও শনাক্তের হার প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ২৮.২৭ শতাংশ। গত বছরের মার্চ মাসে দেশে করোনা শনাক্তের ১৬ মাসে এটিই সর্বোচ্চ শনাক্তের হার। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা যায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৩৮৫টি ও নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩০ হাজার ১২টি। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ৯৯৪টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মৃত ১৩২ জনের মধ্যে পুরুষ ৮১ এবং নারী ৫১ জন। এদের মধ্যে ১৩ জন বাসায় মারা গেছেন। বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪ হাজার ৫০৯ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৮ লাখ ২৫ হাজার ৪২২ জন। সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মৃত ১৩২ জনের মধ্যে বয়সের হিসেবে দশোর্ধ্ব একজন, ত্রিশোর্ধ্ব ১৪, চল্লিশোর্ধ্ব ২০, পঞ্চাশোর্ধ্ব ৩০ এবং ষাটোর্ধ্ব ৬৭ জন মারা যান। একই সময়ে করোনায় মৃত ১৩২ জনের মধ্যে বিভাগওয়ারি হিসাব অনুযায়ী, ঢাকায় ৩০, চট্টগ্রামে ২৪, রাজশাহীতে ২৪, খুলনায় ৩৫, বরিশালে ২, সিলেটে ২, রংপুরে ৯ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জনের মৃত্যু হয়। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের জুন-জুলাই মাসে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলেও আগস্ট মাসের দিকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে। চলতি বছরের মার্চে এসে আবার পরিস্থিতির অবনতি শুরু হয়। এপ্রিলে এসে পরিস্থিতি খারাপ হলে সরকার লকডাউন ঘোষণা করে। এর মাঝেই দেশে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট (ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে পরিচিত) শনাক্ত হয়। চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো করোনায় মৃত্যু শতক ছাড়ায়। সে সময় দৈনিক শনাক্তও ছাড়িয়ে যায় সাত হাজার। মে মাসের শেষ দিকে পরিস্থিতির আবারও উন্নতি হতে থাকে। এরপর কিছু শর্ত দিয়ে লকডাউন শিথিল করে দেয়া হয়। তবে জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। ১৪ জুন প্রায় ৫ সপ্তাহ পর করোনায় ৫৪ জনের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে পরিস্থিতি প্রতিদিনই ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছে। প্রতিদিনই হচ্ছে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের নতুন রেকর্ড।