কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চোর ধরে পুলিশে দেওয়া কেন্দ্র করে ভুমি অফিসের এক পিয়নকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। তার আব্দুর রাজ্জাক (৫৫)। এ ঘটনায় অন্তত ৮ জন আহত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি বাজারে এঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুর রাজ্জাক কোমরকান্দি গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে ও খোকসার গোপগ্রাম ভূমি অফিসের পিয়ন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে বাড়িঘরে। ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে অনেকে। আহতরা হলেন নিহত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাশেদ (২৫), মেয়ে রোজিনা ও তাঁর স্ত্রী রেবেকা খাতুন (৪০), মৃত আতর আলীর ছেলে জাফর, আজেদ আলী (৬৫), আজেদ আলীর ফারুক (৪০), আমদ শেখ ও মজনু শেখ। আহতদের বেশ কয়েকজন কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন । নিহতের স্বজনরা ও এলাকাবাসী জানায়, গত শুক্রবার রাতে এলাকায় চোর ঢুকেছিল। ৫ নং ওয়ার্ডের পরাজিত মেম্বর ফিরোজ খাঁর লোকজন চোরকে ধাওয়া করেছিল। ধাওয়া খেয়ে চোর বর্তমান মেম্বর আব্দুস সাত্তারের সমর্থক নিহত রাজ্জাকের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল। এ সময় রাজ্জাক ও তার লোকজন চোরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এনিয়ে ফিরোজা খাঁ শনিবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে মীমাংসার কথা বলে রাজ্জাককে কোমরকান্দি বাজারে ডেকে আনে। আব্দুর রাজ্জাক কোমরকান্দি বাজারে পৌছালে প্রতিপক্ষের সুরুদ্দিন তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। একই সাথে রাজ্জাকসহ তাঁর সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায় তারা। এতে নিহতের ছেলে, স্ত্রীসহ কমপক্ষে ৮জন গুরুতর আহত হয়। অপরদিকে এঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আব্দুর রাজ্জাকের সমর্থকরা প্রতিপক্ষের বেশকিছু ঘরবাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। বর্তমানে কোমরকান্দি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও ডিবি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১১ টার দিকে কোমরকান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও ডিবি পুলিশের অবস্থান। বেশকিছু ঘরবাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাটের চিহৃ রয়েছে। হামলাকারিদের বাড়িতে নেই কোনো পুরুষ। আতঙ্কে পালাচ্ছে মহিলারাও। পুলিশ জানায়, চোর ধরাকে কেন্দ্র প্রথমে আব্দুর রাজ্জাকের ওপর হামলা করা হয়। পরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। বেশ কয়েকজন আহত হয়ে রয়েছে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনার পর থেকেই পরাজিত মেম্বর ফিরোজ খাঁসহ তাঁর লোকজন পারিয়েছে। এবিষয়ে তাঁর সমর্থক মন্টুর স্ত্রী খালেদা খাতুন বলেন, ‘সাত্তারের মেম্বর অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে ভাংচুর চালিয়েছে। টাকা, স্বর্ণ, গরু বাছুর সব লুট করে নিয়ে গেছে।’ আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে শামিমা খাতুন বলেন, ‘সকালে বসাবসির কথা বলে ফিরোজ, শহিদুল, লিমনরা বাবা ডেকে নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। পরে বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। আমার মা, ভাই, বোন সবাইকে কুপিয়েছে।’ ৫ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার আব্দুস সাত্তার জানান, শুক্রবার রাতে চোরকে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে শনিবার সকালে বৈঠকের কথা বলে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে শত শত লোকের সামনে কুপিয়ে আব্দুর রাজ্জাককে হত্যা করা হয়েছে। কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন,’ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রনে আছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই নাম পরিচয় বলা যাচ্ছেনা।’
You cannot copy content of this page
Leave a Reply