কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এক বাড়ি মালিকের বিরুদ্ধে চতুর্থ (১১) ও হেফজী (১২) শ্রেণীর দুই মাদরাসা ছাত্রীকে যৌনপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। নানা ধরনের হুমকি দিয়ে তাঁদের ওপর নিয়মিত যৌনপীড়ন করা হচ্ছিল বলে ছাত্রীদের অভিযোগ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন কুমারখালী ফয়জুল উলুম ক্বওমী মহিলা মাদরাসার দুই ছাত্রী ও পরিচালনা পরিষদের নেতৃবৃন্দ। ঘটনা জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার সকালে পালিয়েছে অভিযুক্ত বাড়ির মালিক। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানাগেছে, স্থানীয় একটি মহল বাড়ির মালিকের সাথে সমঝোতা করতে তৎপর রয়েছে। ওই বাড়ি মালিকের নাম শহিদুল ইসলাম। তিনি পৌরসভার দুর্গাপুর এলাকার মৃত নুরুল হক বিশ্বাসের ছেলে। তিনি উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ট্যাক্স কালেক্টর। মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাড়ার চুক্তিতে প্রায় ৭ মাস পূর্বে মহিলা মাদ্রাসাটি দুর্গাপুর এলাকার শহিদুল ইসলামের বাড়িতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেনীর ৩৩ জন ছাত্রী ও ৩ জন শিক্ষিকা রয়েছেন। মাদ্রাসার একটি কক্ষে বাড়ি মালিক ও তাঁর স্ত্রী থাকেন। মোবাইল চার্জ দিতে শিক্ষার্থীরা তাঁদের (বাড়ি মালিকের) কক্ষে যাওয়া আসা করে। সেই সুযোগে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে মাসখানেক আগে প্রথমে যৌন নিপীড়ন করেন বাড়ির মালিক শহিদুল ইসলাম। এরপর হত্যার হুমকি দিয়ে ওই ছাত্রীকে নিয়মিত যৌন নিপীড়ন করে আসছিল সে। এরপর গত বুধবার হেফজী পড়ুয়া আরেক ছাত্রী মোবাইল চার্জ দিতে গিয়ে শহিদুলের অপকর্ম দেখে ফেলে। সে সময় শহিদুল ওই ছাত্রীকেও টাকা দেওয়ার প্রস্তার করেন। ছাত্রী টাকা নিতে অসম্মতি জানালে দুই জনকেই হত্যার হুমকি প্রদান করে ঘটনা চেপে রাখার কথা বলে। মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণীর ওই ছাত্রী বলেন, হত্যার হুমকি দিয়ে বাড়িওয়ালা অনেকদিন ধরে আমার সাথে খারাপ কাজ করে আসছে। সর্বশেষ গত বুধবার আমার সাথে খুব খারাপ কাজ করেছেন। আমার বুকে, গলায় হাতের আঙ্গুলের আচঁর লেগে আছে। ঘটনার শিকার আরেক ছাত্রী বলেন, মাঝে মাঝেই দাদু (বাড়িওয়ালা) ওকে (ছাত্রী) ডেকে আনতে বলত। না ডাকলে হত্যার ভয় দেখাত। গত বুধবার আমি খারাপ অবস্থায় দেখে ফেললে টাকা দিতে চান। আমি টাকা না নিলে আমার সাথেও খারাপ কাজ করে। পরে অনেক খাবার খাইয়ে কাউকে না বলার জন্য হুমকি দিয়েছিল। ঘটনা শিকার করে এক ছাত্রীর বাবা বলেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমার মেয়ে এমন ঘটনার শিকার হয়েছে। আমি কর্তৃপক্ষসহ থানায় মামলা করব। ঘটনার পর দুই ছাত্রী বাড়ি চলে গেছে। অন্য ছাত্রীরাও আতংকের মধ্যে আছে। নারী শিক্ষকরা জানান,‘ ঘটনাটি দু:খজনক। আমরা বিষয়টি জানার পর পরিচালনা কমিটিকে জানায়। এখন সব ছাত্রীদের মধ্যে ভীতি বিরাজ করছে। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীর শাস্তি দাবি করেন তারা। কুমারখালী ফয়জুল উলুম ক্বওমী মহিলা মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আকাম উদ্দিন আকাই বলেন, কয়েকদিন আগে জানতে পেরেছি ছাত্রীদের হত্যার হুমকি দিয়ে যৌন নিপীড়ন করেছেন বাড়ির মালিক। খুব খারাপ কাজ করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে বাড়ির মালিকের সাথে বসাবসি করেছি। আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ জানতে চাইলে পলাতক অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ২০১৯ সালে হজ্জ করেছি। এমন কাজ আমি করতে পারি না, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’ কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান বলেন,‘ বিষয়টি নিয়ে এখনো কেউ থানায় আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply