1. andolonerbazar@gmail.com : AndolonerBazar :
রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৬:২২ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়ার বাড়ি বাড়িতে বিক্রির অপেক্ষায় কোরবানীর গরু ও ছাগল

  • সর্বশেষ আপডেট : বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১
  • ১৬৩ মোট ভিউ

 

আ.ফ.ম নুরুল কাদের ॥ বৈশ্বিক করোনার কারনে কুষ্টিয়া অঞ্চলের হাজার হাজার গো-খামারী ও কৃষকদের দুঃচিন্তার শেষ নেই। কুরবানীর ঈদ আসন্ন তাই কোরবানীর গরু এবং ছাগল প্রস্তত করে রাখার পরেও দুঃচিন্তার পিছু ছাড়ছে না তাদের। আর দিন কয়েক পরেই কোরবানীর ঈদ। প্রতি বছর রোজার ঈদের পর থেকেই কোরবানীর পশু কেনা বিক্রি শুরু হয় অথচ হাতে গোনা কয়েক দিন বাকী থাকলেও এলাকায় কোরবানীর  পশু কেনা বিক্রি শুরু করতে না পারায় সকলের মাঝে আতংক কাজ করছে। জেলায় সরকারী তথ্যে ৯০হাজার গরু ও ছাগল কোরবানীর জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানানো হলেও বেসরকারীভাবে এর পরিমান দ্বিগুনের চেয়ে বেশি। প্রতিবারের মত এবারো কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলায়  কয়েক লাখ গরু-ছাগল লালন পালন করা হয়েছে। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখেই স্থানীয়দের এই প্রচেষ্ঠা। প্রতি বার রোজার পর পরই কোরবানীর পশু কিনতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা সাধারন গরু ও ছাগল কিনতে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়ান। খামারী এবং কৃষকের বাড়ি থেকেই বড় একটি অংশ পশু কেনা বিক্রি হয়। এতে গোখামারী ও চাষীরা বড় ধরনের দুঃচিন্তা মুক্ত হয়। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে-এবার এখন ব্যাপারী ও ব্যবসায়ীদের দেখা মিলছে না। করোনার কারনে কেউ এলাকায় ভয়ে আসছে না। তাছাড়া কুষ্টিয়া অঞ্চলে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চলছে কঠোর লক ডাউন। সারাদেশের সাথে কুষ্টিয়ার সড়ক ও রেল পথের যোগাযোগ বন্ধ থাকায় অন্য জেলা থেকে ব্যাপারী ও ব্যবসায়ীরা আসতে পারছে না। আবার কুষ্টিয়ার সকল পশু হাট বন্ধ থাকায় ব্যাপারীরা পড়েছে আরো বিপাকে।

জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান-জেলায় খামারী ও কৃষকদের বাড়িতে সরকারী হিসাবে ৯০হাজারের বেশি গরু এবং ছাগল রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ হাজার গরু আর ৩০হাজার ছাগল রয়েছে। তবে বেসরকারী হিসেবে আরো অনেক বেশি হবে। তিনি জানান-জেলায় পর্যাপ্ত গরু এবং ছাগল রয়েছে। খামারী এবং কৃষকদের বাড়িতে বাড়িতে কোরাবানীর জন্য গরু ও ছাগল লালন পালন করে অপেক্ষা করছে তবে এই করোনার মাঝে হাট বন্ধ থাকায় কি অবস্থা হবে তা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। তিনি জানান-আমরা হাটে না যেয়ে অন লাইনে গরু এবং ছাগল বিক্রির বিষয়ে জোর দিয়েছি। আমাদের উপজেলা এবং জেলা অফিস অন লাইনে গরু-ছাগল কেনা ও বিক্রির জন্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কুমারগাড়া গ্রামের এনামুল মেম্বার জানান-এলাকায় প্রচুর ছোট এবং  বড় গরু রয়েছে। দেশাল এবং ছোট গরুর চাহিদা এলাকায় বেশি। যারা গরু বিক্রির আশায় আসে তারা ভাল দাম পাবে বলে আশা করা যায়। তিনি জানান- কুরবানীর আগে সড়কে গরুবাহী ট্রাকের যাতায়াত সহজ করার ব্যাপারে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে।

সদর উপজেলার কবুরহাট গ্রামের গো-খামারী শাওন কাটেল ফার্মের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মজিদ জানান- প্রতি বছর গরু নিয়ে চট্টগ্রামে যায়। এবারো যাওয়ার নিয়তে প্রস্তুতি নিয়েছি। ৫০টি গরু ইতিমধ্যে রেডি করেছি কিন্তু করোনার কারনে এবার কোরবানীর বাজার কি হবে তা নিয়ে সংশয়ে আছি। তিনি জানান- আমার খামারের সব গরুই বড় আকারে। ৯মন থেকে শুরু করে ১৪মন পর্যন্ত গরুগুলোর ওজন। ভাল পরিবেশ পেলে চট্রগ্রামে গরু নিয়ে যাবো। আশা করছি এবার ভাল মুল্য পাবো তবে করোনার কারনে সামনের দিন গুলোতে কি অবস্থা হবে তা ভেবেই কুল পাচ্ছি না। আইলচারা গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান জানান-তার স্ত্রী ২টি গরু লালন পালন করেছেন কোরবানীতে বিক্রির জন্য। বেশি মূল্যের গো-খাদৗ ও আনুসাঙ্গিক অনেক খরচ হয়েছে জানি না কি হবে? তিনি জানান এলাকার ঘরে ঘরে গরু আর ছাগল রয়েছে। শিমুলিয়া গ্রামের চাষী ইসমাইল জানান-এলাকায় বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারী গরু বেশি। করোনার কারনে গোখামারী ও কৃষকেরা আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। করোনার কারনে হাট বন্ধ থাকায় বেচাকেনার কোন হাল বুঝা যাচ্ছে না। সদর উপজেলার বটতৈল, কবুরহাট, স্বস্তিপুর, হাতিয়া, ঝাউদিয়া, জিয়ারখি, মোল্লাতেঘরিয়া, কাঞ্চনপুর, পাটিকাবাড়ি, হাতিয়া আব্দালপুর, উজানগ্রাম, কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রাম,পান্টি, সাঁওতা, পাহাড়পুর, মধুপুর, সান্দিয়ারাসহ সব এলাকায় এবারো ঘরে ঘরে গরু দেখা যাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী এবং কৃষকেরা গরু নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট এলাকার বিভিন্ন গরুর হাটে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এলাকার গো-খামারী ও কৃষকেরা আশা করছেন ঈদের আগেই করোনা পরিস্থিতি ভাল হবে এবং সরকার গরু যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তুলে নিবে সেই সাথে ভাল দামে গরু বিক্রি করে লাভবান হবে। গতবার করোনা থাকলেও কুষ্টিয়া অঞ্চলের গো-খামারী ও কৃষকেরা ভাল দামে গরু ও ছাগল বিক্রি করতে পেরে দারুন খুশি। তবে করোনার কারনে এবার কোরবানীর ঈদে গরু ছাগল বিক্রি করে চাষীরা লাভবান হতে না পারলে তাদের সারা বছরের কষ্ট আর ব্যয় স্বার্থক হবে বলে আশা করা যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
© All rights reserved ©2021  Daily Andoloner Bazar
Theme Customized By Uttoron Host

You cannot copy content of this page