নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়ার সব শ্রেনীর মানুষের পরিচিত মুখ, লেখক, কবি ছড়াকার ফ্যাশান ডিজাইনার শহরের আড়–য়াপাড়ার বাসিন্দা কাজল তালুকদার আর আমাদের মাঝে নেই (ইন্নাল্লিহি–রাজেউন)। তিনি শনিবার রাত ১টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধিন থাকা অবস্থায় মারা যান। কাজল তালুকদার কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের প্রয়াত শিক্ষক অধ্যাপক ধীর আলী তালুকদারের জেষ্ঠ্য পুত্র। কাজল তালুকদার কুষ্টিয়া হতে প্রকাশিত দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকার প্রথম সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। দীর্ঘ কয়েক বছর তিনি এই সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকার বজ্রমুষ্টি লোগোটিও উদ্ভাবকও কাজল তালুকদার।
তাঁর অকাল মৃত্যুতে সাহিত্যাঙ্গনসহ জেলার সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। মমতাময়ী মা, স্ত্রী, ২ পুত্রসহ ভাইবোন ও অসংখ্য আত্মীয় স্বজন গুনগাহী রেখে যান। গতকাল সোমবার বাদ জোহর কুষ্টিয়া পৌর গোর স্থানে জানাজা শেষে কাজল তালুকদারের দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় বিপুল সংখ্যক মানুষ শরীক হন।
কাজল তালুকদারের বন্ধু শামসুজ্জোহা খান জন জানান-মরহুম কাজল তালুকদার লোকজ ফ্যাশান ডিজাইনার হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিল তাছাড়া কবি ও ছাড়কার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত ফেব্র“য়ারিতে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নেন। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ভারতের বেঙ্গালুরুর নারায়না হার্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট এবং হাসপাতালে যান। গত ২৭ ফেব্র“য়ারী থেকে সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল। সেখানে চিকিৎকগন এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে চারটি ব্লক পান এবং বাইপাস অপারেশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তার ঘাড়ের দুটি ভেইনেও ব্লক ধরা পড়ে। অপারেশনের প্রস্তুতির জন্যে ডাক্তারগন তাকে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছিলেন এক পর্যায়ে তিনি সেখানে গত ৬ এপ্রিল কোভিড আক্রান্ত হয়ে শারিরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় দেশে ফিরে আসেন এবং বাড়ীতেই চিকিৎসকের পরামর্শে আইসোলেশনে থাকেন। গত ২৫ এপ্রিল তিনি করোনা নেগেটিভও হন। কিন্তু পরবর্তীতে কোভিড পরবর্তী শারিরীক সমস্যায় তিনি শনিবার রাত ৮টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধিন অবস্থায় রাত ১টার দিকে সে শেষ নিঃশেষ ত্যাগ করেন। কাজল তালুকদারের ২পুত্র সন্তান রয়েছে বড় ছেলে ৯ম শ্রেনী আর ছোট ছেলে ৫ম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত।
সমাজ ও রাজনীতি সচেতন কাজল তালুকদার ছিলেন আপাদমস্তক সৃজনশীল মানুষ। সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অব্যবস্থাপনা ও সংকট নিরসনে তিনি লিখেছেন, মানুষকে জাগ্রত করার চেষ্টা করেছেন। মৃত্যুর ১৫/১৬ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্তও তিনি ফেইসবুকে সরব ছিলেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বৃক্ষ নিধনের প্রতিবাদ জানিয়ে অনেকগুলো পোস্ট দিয়েছেন, লিখেছেন কবিতা ও ছড়া। করোনার ঝুঁকি বাড়িয়ে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ফেরিঘাটের ছবি দিয়ে তিনি সচেতনতামূলক ছড়া লিখেছেন, স্ট্যাটাস দিয়েছেন। কাজল তালুকদার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মান শেষে “থানা সমাজসেবা কর্মকর্তা” হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও সৃষ্টিশীল কাজ করার মনোভাবে চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি ফ্যাশন ও ডিজাইন হাউজ ‘লোকজ’-এর কর্ণধার ছিলেন। শাহবাগের আজিজ মার্কেটে তার একটি শো-রুম ছিল। কাজল তালুকদার কুষ্টিয়ায় ডাসুসের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লেখক, ছড়াকার কাজল তালুকদারের অকাল প্রয়ানে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা ও শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক মনজুর এহসান চৌধুরী এবং বর্তমান সম্পাদক-প্রকাশক আনিসুজ্জামান ডাবলু। তারা বলেন- কাজল তালুকদার একজন বিনয়ী, নম্র ও বড় মনের মানুষ ছিলেন। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তাৎক্ষনিক ছড়া লেখে সকলকে তাক লাগিয়ে দিতেন। তিনি স্বাধীনচেতা লেখক হিসেবে সকলের কাছে প্রিয় মানুষ ছিলেন। তাঁর এই অকাল মৃত্যুতে কুষ্টিয়াবাসী একজন বড় মাপের ছড়াকার ও ফ্যাশান ডিজাইনারকে হারালো। তার এই শূন্যতা কোনদিন পূরণ হবার নয়। কাজল তালুকদারের মৃত্যুতে ডুসাস কুষ্টিয়া শাখা শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। অনুরুপ রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় এ্যালামনাই রাকসার পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply