নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়ায় করোনা রোগী বাড়ার গ্রাফ ১৩০ ডিগ্রি এঙ্গেলে উর্দ্ধমূখী। এই মূহুর্তে লকডাউনের কোন বিকল্প নাই। এবং সেটা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে হাসপাতালের রোগীর চাপ সামলানো যাবে না। এমন বার্তা দিলেন কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম।
গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম তার বক্তব্যে একথা বলেন। বেলা এগারটায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সংবাদ সভাপতিত্বে করোনা বিষয়ক সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। চলে বেলা সাড়ে বারটা পর্যন্ত।
সেখানে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের (তত্বাবধায়ক) আবদুল মোমেন, মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সালেক মাসুদ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এএসএম মুসা কবির, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মৃনাল কান্তি দে, কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আতিকুল ইসলাম, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব, দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকার সম্পাদক ও চ্যানেল আই প্রতিনিধি আনিসুজ্জামান ডাবলু, ইত্তেফাক প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু, প্রথম আলো প্রতিনিধি তৌহিদী হাসান, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাস, আরটিভি জেলা প্রতিনিধি শেখ হাসান বেলাল, দৈনিক সময়ের দিগন্ত পত্রিকার সম্পাদক নাহিদ হাসান তিতাস, নয়াদিগন্তের জেলা প্রতিনিধি নুরুল কাদের। এ সময় জেলা প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ কুষ্টিয়ায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মিরা উপস্থিত ছিলেন।
সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ভ্রাম্যমান আদালতে জেল জরিমানা করে তেমন কোন কাজ হবে না। যে হারে পজিটিভের সংখ্যা বাড়ছে তাতে মানুষকে অন্তত এক সপ্তাহ কঠোরভাবে ঘরে রাখতে হবে। তাহলে করোনার উর্দ্ধমূখী বাড়া ঠেকানো সম্ভব।’
সভার শুরুতেই জেলার সার্বিক করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। তাতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘন্টা (মঙ্গলবার রাত আটটা থেকে বুধবার রাত আটটা পর্যন্ত) জেলায় ১৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৫৪ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। এই সময়ে কুষ্টিয়ায় দুজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। নমুনা অনুপাতে কুষ্টিয়ায় করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় হার উদ্ধমূখী হচ্ছে। গত মঙ্গলবারও জেলায় ৬১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩১ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এদিনও করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দুইজন রোগী।
এরপর বক্তব্য দিতে সবার জন্য উন্মক্ত করে দেন জেলা প্রশাসক। সেখানে জেলার গণমাধ্যমকর্মী, করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য, পুলিশ কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন। এদের বেশিরভাগই বিশেষ লকডাউনের প্রস্তাব দেন।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এএসএম মুসা কবির বলেন, করোনার মতো ভাইরাস প্রতিরোধে দুটি উপায় আছে। এক হল, টিকা প্রদান, অন্যটি লকডাউন। যেহেতু টিকা আমাদের হাতে (কুষ্টিয়ায়) নেই তাই লকডাউন ছাড়া কোন বিকল্প নেই। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এবং কার্যকর করতে হবে।
হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এই চিকিৎসক বলেন, ‘রোগীরা অবর্ননীয় দুর্ভোগে আছে। মেঝেতে পর্যন্ত রোগী রাখতে হচ্ছে। রোগী ভর্তির চাপ ব্যাপকহারে বাড়ছে। অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়ে গেলে তখন লকডাউন দিয়ে লাভ নেই। গ্রাফ উর্দ্ধমূখীর দিকে থাকলে তখনই লকডাউন দিতে হয়।’
বরফ খন্ডের পেছনে বড় বরফ খন্ড থাকেÑএমন উপমা দিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সালেক মাসুদ বলেন,‘বড় বিপদ যাতে না হয় তাই এখনই সাবধান হতে হবে।’
হাসপাতালের তত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্স প্রস্তুত, কিন্তু অবকাঠামো সমস্যা। রোগীতে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে। আজ করোনা ওয়ার্ডে ৪৭ জন রোগী ভর্তি।
লকডাউনের মতো কঠোর সিদ্ধান্তে গেলে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে জানিয়ে কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ‘যারা পজিটিভ হবেন শুধুমাত্র তাদের বাড়ি লকডাউনের আওতায় আনা যায়।’
সবার বক্তব্য শেষে মাত্র দুই মিনিট বক্তব্যে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সবার মতামত বিবেচনা করে এবং করোনা প্রতিরোধ কমিটিসহ অন্য সবার সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা নেওয়া হবে।’
এযাবৎ জেলায় ৫১ হাজার ৪৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৬৩ জন। মারা গেছেন ১১৬ জন। গত ৫ দিনে শনাক্ত হয়েছে ১৩২ জন। এই সময়ে মারা গেছেন ৬ জন।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply