বিশেষ প্রতিনিধি ॥ খরায় এবার আমন আবাদ ব্যাহত হলেও জিকের সেচের আওতায় আমন চাষীরা ভাল ফলন পেয়েছেন। ধান গবেষনা ইন্সস্টিটিউট উদ্ভাবিত নতুন জাতের ব্রি-ধান ৭৫ মাঠ পর্যায়ে আবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছেন। একই সাথে জিকের সক্ষমতা বাড়াতে নেওয়া হচ্ছে আড়াই হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প। এ প্রকল্প পাশ হয়ে আসলে বাস্তবায়ন শেষে ৪ জেলার লাখো কৃষক সুবিধা পাবেন। বছরে সেচ সুবিধার আওতায় আসবে ১ লাখ হেক্টর জমি। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়ার কৃষক রুহুল আমিন। গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকের) পানিতে সারা বছর ধান আবাদ করেন। এবার ধান গবেষনা ইন্সস্টিটিউট উদ্ভাবিত নতুন জাতের ব্রি ধান-৭৫ আবাদ করেছেন ২০ বিঘা জমিতে। ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করেছেন। ৩৩শতক (এক বিঘা) জমিতে ফলন পেয়েছেন ২২ মণের ওপরে। সময়মতো বেশি হলে এ ধানের ফলন আরো বেশি হতো বলে জানান এ কৃষক। তারপরও জিকের পানি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় ভাল ফলন পেয়েছেন এ কৃষক। দামও পাচ্ছেন ভালো। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকের) সেচ প্রকল্পের আওতায় কুুষ্টিয়াসহ ৪ জেলার কৃষকরা এবার আবাদ করার সুযোগ পান। তবে এবার দুটি পাম্প নষ্ট হওয়ায় তিনটি জেলার কৃষকরা সেচ সুবিধা পান। তিন জেলার প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধানি জমিতে এবার সেচ সুবিধা দেওয়া হয়। একই সাথে নতুন ধানের জাত কৃষক পর্যায়ে চাষ করার জন্য প্রযুক্তিগত সুবিধা দেওয়া হয়। এদিকে মিরপুরে রুহুলের পাশাপাশি অন্য চাষীরাও জিকের পানিতে ধান আবাদ করে সুফল পাচ্ছেন। তারাও এবার উন্নত জাতের সরু এ ধানের আবাদ করে ভাল ফলন পেয়েছেন। এ ধানে রোগ বালাই কম। এছাড়া বিঘা প্রতি ২৫ মণের ওপরও ফলন হয়। রহুল আমিন বলেন,‘ সবমিলিয়ে তার ৪০ বিঘা জমিতে এবার ধান আবাদ রয়েছে। আর ২০ বিঘায় ছিল ব্রি-ধান ৭৫। তার ধান কাটা ও মাড়াই প্রায় শেষের দিকে। খরা থাকায় কিছুটা বিলম্ব হয় ধান আবাদে। তবে ধান রোপনের পর জিকের পানি পেতে কোন সমস্যা হয়নি এবার। এ কারনে আবাদ করতে কৃষকদের সুবিধা হয়। বিঘা প্রতি তিনি ফলন পেয়েছেন ২২ মণ পর্যন্ত। প্রতিমণ ধান বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৩০০ টাকার ওপরে।’ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জুগিয়া এলাকার কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন,‘ এবারই প্রথম তিনি ব্রি-৭৫ আবাদ করেছেন। ভাল ফলন পেয়েছেন। এ ধানে রোগ বালাই কম। কম সময়ের মধ্যে কর্তন করা যায়। সময়মতো রোপন করলে অন্য যে কোন ধানের চেয়ে আগে ঘরে তোলা যায়। সম্প্রতি জিকের সহযোগিতা নিয়ে ব্রি-ধান ৭৫ আবাদ করা কৃষকদের আবাদ করা ধান কর্তন করা হয়েছে। এ কর্তন অনুষ্ঠানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ও কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ধান কাটা ও মাড়াই করেন তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রধান সম্প্রসারন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন,‘ এবার জিকের আওতায় কুষ্টিয়াসহ ৪টি জেলার প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। এবার খরার আধিক্য ছিল বেশি। কারন এ অঞ্চলে খরাটা বেশি হয়। যার ফলে সেচ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় কৃষকরা উপকৃত হয়েছে। মাঠে ফসল ফলন ভাল হয়েছে। বিশেষ করে ব্রি ধান ৭৫ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কৃষকদের মাঝে। এ ধানের আবাদ ছড়িয়ে যাবে কৃষকদের মাঝে। এদিকে খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন জাতের ধান কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতেও কাজ চলছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের মুখ্য সম্প্রসারন কর্মকর্তা আইয়ুব আলী। তিনি বলেন,‘ এ অঞ্চল এমনিতেই খরা প্রবণ। তাই কৃষকরা যাতে সমস্যায় না পড়েন তাই আমাদের সেচ উইং সময়মতো সেচ সরবরাহ করেছে। আমাদের ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্য থাকলেও আমরা ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সরবরাহ করেছি। এ কারনে খরা হলেও জিকের আওতায় থাকায় কৃষকরা সমস্যা খুব একটা বুঝতে পারেননি। ফলনও হয়েছে ভাল।’ আর জিকের সক্ষমতা বাড়াতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আব্দুল হামিদ। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ৪ জেলার ১৩টি উপজেলার প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমিতে সেচের আওতা আসবে। তাতে খরিপ-১ খরিপ-২ ও রবি মৌসুমে কৃষকরা পানি পাবেন প্রায় বিনা মুল্যে। আব্দুল হামিদ বলেন,‘ দেশে খাদ্যের ঘাটতি কমানো, অনাবাদী জমিকে আবাদের আওতায় নিয়ে আসার জন্যও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ৬০ এর দশকের প্রকল্প জিকের অবস্থা এখন ভাল নয়। তাই জিকে প্রকল্পকে আধুনিক রূপ দিতে নতুন করে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। এটি অচিরেই পাশ হয়ে আসবে বলে আমরা মনে করছি। এ প্রকল্প পাশ হয়ে আসলে সেচের আওতা বাড়বে। দেশে সব ধরনের ফসল উৎপাদন বাড়বে কয়েকগুন। জিকের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি চাষীদের কাছ থেকে সেচ চার্জ আদায়ের জন্য তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply