নিজ সংবাদ ॥ সবকিছুই ঠিকমতো চলছিল। হাসপাতালগুলোতে আইশোলেসনে রোগী ভর্তি সব মিলিয়ে ৩০ কিংবা ৩৫ জন। চিকিৎসক, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের সেবা দিচ্ছিলেন। এটা কুষ্টিয়া জেলার করোনায় মে মাসের শেষ সপ্তাহের চিত্র। তবে এই সময়ে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা আঁচ করতে পারছিলেন যে, আসছে দিনগুলোর সুখকর নাও হতে পারে। কেননা পজিটিভ রোগী তখন ধীরে ধীরে বাড়তির দিকে। তাই ওই মূহুর্ত থেকেই জেলায় কড়া লকডাউনের অনুরোধ জানান তাঁরা। কিন্তু সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে আরও কিছুদিন দেখার পরামর্শ দেন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির কর্তারা। ফলে যা হবার তাই! হু হু করে বাড়তে থাকে রোগী। সাথে মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিন রোগী শনাক্তের রেকর্ড ভাঙা গড়া। আর দিন শেষে রাতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা জানা। গেল জুন মাসের জেলায় করোনা ভয়াবহ তান্ডব দেখালো। জুনের মাঝামাঝি থেকে আসলো চলাচলে বিধিনিষেধ। শেষ সপ্তাহে আসলো লকডাউন। কিন্তু ততক্ষনে জেলার আনাচে কানাচে চলে গিয়েছিল করোনা!
গতকাল বুধবার মাসের শেষদিনে জেলায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ একদিনে ৮৩০ নমুনা পরীক্ষায় ৩২৪ জনের শরীরে করোনা পজিটিভি শনাক্ত হয়। নমুনা অনুপাতে শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ। আরও মৃত্যুও হয়েছে ৯জন রোগীর। জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির দেওয়া জুন মাসের তথ্য বিশ্লেষন করে দেখা গেছে, এযাবৎ জেলায় ৮ হাজার ৫০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তারমধ্যে জুন মাসের ৩০ দিনে শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৭২ জন। যা মোট শনাক্তের ৩৮৭ শতাংশ। এযাবৎ মারা গেছেন ২১১ জন রোগী। তারমধ্যে এই জুন মাসেই মারা গেছেন ৯৯ জন। যা মোট মৃত্যু ৪৬ শতাংশ।
ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে রোগীদের চাপ সামাল দিতে ২৫ জুন থেকে ২৫০ শয্যা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেডেট ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে সেখানে ২ শতাধিক করোনা রোগী চিকিৎসাধীন। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক আক্রামুজ্জামান মিন্টু বলছেন, প্রতি ঘরে করোনা পৌছে গেছে। সঠিকভাবে এবং দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ নেই। কিন্তু এই কাজটাই গ্রামের মানুষ করছে না। এতেই মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জেষ্ঠ্য মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এএসএম মুসা কবিরের মতে,‘এখন আর কোন দোষারোপ না করে কাজে মনোযোগ হতে হবে। গ্রামের প্রতি ঘরে ঘরে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু সবাইকে খোজ নিতে হবে। কারও কোন নূন্যতম জ¦র ঠান্ডা কাশি জাতীয় করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই তাকে আইশোলসনে রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা নিতে যত দেরি হবে তত মৃত্যু ঝুঁকি বাড়বে। সিভিল সার্জন এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জুনের তান্ডবের বিষয়ে আগেই ধারণা করতে পেরেছিলাম। কিন্তু এতটা হবে কল্পনাতেও ছিল না। আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু হয়ে উঠলো না। গ্রামের মানুষদের সচেতন করা ছাড়া আর কোন পথ দেখছি না।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply