নিজ সংবাদ ॥ দিনকেদিন দানবীয় রূপ ধারণ করেছে কুষ্টিয়া জেলার করোনা পরিস্থিতি। প্রতিদিন লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। সেইসঙ্গে আক্রান্তের রেকর্ড তৈরি হচ্ছে প্রতিদিনই। গত ২৪ ঘন্টায় কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়াদের সবাই করোনা পজেটিভ হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত এই ১২ জন মারা যান। এদের সকলের পরিচয় জানা গেছে। এরা হলেন, কুষ্টিয়া পৌরসভার হাউজিং বি ব্লকের রওশনারা (৭০), দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের আব্দুলপুরের জরিনা খাতুন (৬৫), মিরপুর পৌরসভার নোয়াপাড়ার সায়রা বানু (৭০), কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া এলাকার শেফালী খাতুন (৫৫), সদর উপজেলার জিয়ারখি ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামের আকমল হোসেন (৮৫), কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুর এলাকার রোজিনা খাতুন (৪৫), কুমারখালী উপজেলার চাপড়া এলাকার কামরুজ্জামান (২৮), ভেড়ামারার পূর্ব বামনপাড়া এলাকার আমিরন বেগম (৬৫), খোকসা উপজেলার নিশ্চিন্তবাড়িয়া এলাকার রফিক শেখ (৬৫) ও দৌলতপুরের কাউসার বিশ্বাস (৮০), খোকসার উত্তর শ্যামপুরের হবিবর খান (৬০), ভেড়ামারার সাতবাড়িয়ার রহিমা (৫৫)। গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় নতুন করে ১৬৪ জন করোনা রোগি সনাক্ত হয়েছে। সনাক্তের হার প্রায় ২৮ শতাংশ।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনা আক্রান্ত ১১ জন মারা গেছে। এটাই এখন পর্যন্ত এ জেলায় একদিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা। হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ১০০ শয্যার বিপরীতে বর্তমানে ১১৩ জন রোগি ভর্তি রয়েছেন। ওয়ার্ডে নতুন করে আর কোন রোগি ভর্তির সুযোগ নেই। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৩০ জন সাধারণ রোগিকে পাশের মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক হাসপাতালে স্থানাস্তর করেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে, হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো থেকে যেসব রোগিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে, সেসব রোগির প্রত্যেকেরই অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি গত ১১ জুন মধ্য রাত থেকে অধিক সংক্রমিত কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় ৭ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। তবে এই বিধিনিষেধ অনেকটা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। মাঠ পর্যায়ে তা খুব একটা কার্যকর হতে দেখা যায়নি। গতকাল শুক্রবার ওই বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে আরো ৭ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে করোনা প্রতিরোধ কমিটি। তবে গতকাল শনিবার সকাল থেকে এই বিধিনিষেধ কার্যকর করতে প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ করা গেছে।
প্রসঙ্গত, ঈদের পর থেকে কুষ্টিয়ায় করোনা সংক্রমনের মাত্রা কিছুতেই বাগে আসছেনা, ক্রমশ বেড়েই চলেছে। গতকাল শনিবার আক্রান্তের সংখ্যা জেলায় করোনা আক্রান্তের নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। এদিন নতুন করে আরো ১৬৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিন জেলার মোট ৫৪৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এরমধ্যে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পিসিআর ল্যাবে ২৬৪টি, এন্টিজেন টেস্ট ২০২ টি এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পিসিআর ল্যাবে ৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে ১৬৪টি নমুনা পজিটিভ আসে। পরীক্ষার বিপরীতে আক্রান্তের হার প্রায় ২৮ শতাংশ। নতুন শনাক্ত হওয়ার রোগীর মধ্যে সদর উপজেলায় সর্বোচ্চ ১০০ জন, কুমারখালী উপজেলায় ২৪ জন, মিরপুর উপজেলায় ৭ জন, দৌলতপুরে ১৬ জন, খোকসা উপজেলায় ৪ জন ও ভেড়ামারা উপজেলায় ১৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৩৩৯ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৯৮৫ জন মানুষ। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন জন ১৫১ জন মানুষ।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply