নিজ সংবাদ ॥ হাতে ক্যানুলা লাগানো। নাকে লাগানো অক্সিজেন মাস্ক। মায়ের কোলে শুয়ে প্রিন্স লাল। বয়স তাঁর মাত্র দেড় মাস। মাঝে মাঝে কান্না করছে। বুকের দুধ পান করিয়ে শান্ত করার চেষ্টা মা জয়ারাণীর। তবুও যেন কান্না থামানো যাচ্ছে না। কারণ প্রিন্স লাল করোনায় আক্রান্ত। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইশোলেসন ১নং ওয়ার্ডের ১৩নং বিছানায় চিকিৎসাধীন প্রিন্স লাল। চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রিন্সের নিউমোনিয়ার সাথে করোনা আক্রান্ত হয়েছে। তাই তাঁকে করোনা ওয়ার্ডে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দেড় মাস বয়সী শিশু করোনায় আক্রান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ হাসান সরওয়ার কল্লোল বলেন, ‘এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। গত এক বছরে শিশুদের আক্রান্ত হবার কোন চিত্র কুষ্টিয়া তেমন ছিল না। কিন্তু গত পনের দিন ধরে প্রতিদিনই ৫ থেকে ৭ জন শিশু (এক থেকে ৭ মাস বয়স পর্যন্ত) আসছে যারা করোনায় পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কুষ্টিয়ায় করোনা ব্যাপক বিস্তার শুরু করেছে। এবং বড়দের মাধ্যমে শিশুরা বেশি বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
এই চিকিৎসক প্রতিদিন বিকেলে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ব্যক্তিগত চেম্বার করেন। গত পনের দিনে তিনি গড়ে প্রতিদিন ৩০টি শিশুর চিকিৎসা দিয়েছেন। তারমধ্যে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ জন করোনা আক্রান্ত শিশু পেয়েছেন। এজন্য মঙ্গলবার থেকে তিনি চেম্বার কয়েকদিনের জন্য বন্ধ রেখেছেন। যাতে করোনা আক্রান্ত শিশুদের থেকে অন্য শিশুরা আক্রান্ত না হতে পারে।
এই চিকিৎসকের পরামর্শ, বাড়িতে থাকা বড়দের খুব সাবধানে শিশুদের কাছে যেতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বা ভালোভাবে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়েই তবেই শিশুদের স্পর্শ করা উচিত। প্রয়োজন ছাড়া কোনভাবেই শিশুদের কাছে যাওয়ার দরকার নাই। মায়েদেরও সচেতন হতে হবে।
শহরের বড়বাজার এলাকায় সুইপার কলোনীর বাসিন্দা আকাশ লালের ছেলে প্রিন্স লাল। আকাশ কুষ্টিয়া পৌরসভার কর্মচারী। কথা হলে আইশোলসন ওয়ার্ড থেকে প্রিন্স লালের দাদি জয়ারাণী বলেন, ‘প্রিন্স লাল পরিবারের প্রথম সন্তান। বিয়ের তিন বছর পর বাচ্চা হল। কিন্তু চার পাঁচদিন আগে হঠাৎ তাঁর জ¦র আসে। এরপর চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়। সোমবার বিকেলে দ্রুত তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সকালে করোনা অ্যান্টিজেন টেস্ট করে পজিটিভ শনাক্ত হয়। এরপরই তাকে করোনা ওয়ার্ডে রাখা হয়। এর আগে গত পরশুদিন পাঁচ মাস বয়সী এক শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিল। তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকাতে রেফার্ড করা হয়েছে।