নিজ সংবাদ ॥ করোনা সংক্রমণের উর্দ্ধমূখী কমাতে কুষ্টিয়ায় কঠোর লকডাউনের আরো একটি দিন অতিবাহিত হলো। জেলার সর্বত্র চলা সপ্তাহব্যাপী এই লকডাউনের ২য় দিনেও পুলিশের কঠোর নজরদারী এবং তৎপরতা সর্বমহলে প্রশংসিত। সাধারন মানুষের চলাচলে সতর্কতা সৃষ্টির পাশাপাশি অহেতুক ঘর থেকে বের হওয়া মানুষের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত কমেছে। শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ সুপার খাইরুল আলমের নেতৃত্বে আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায় ব্যস্ততম সড়কগুলোতে একেবারেই স্থবিরতা নেমে এসেছিল। তবে শহরের আনাচে কোনাচে রিকসা ও অটো রিকসা চালকদের চতুরতা লক্ষ্য করা গেছে।
শহরে আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায় মানুষের চলাচলে শিথিলতা লক্ষ্য করা গেলেও শহরতলী ও গ্রামাঞ্চলের পরিবেশে ছিল একেবারেই ভিন্ন। গ্রামের মানুষেরা করোনাকে তেমন একটা আমলে আনছে না। করোনায় কুষ্টিয়ার অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে গেলেও গ্রামাঞ্চলের সাধারন মানুষের মাঝে বিরুপ কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন মোড় এবং পয়েন্টের চায়ের দোকানগুলোতে অহেতুক মানুষের ভিড় এখন লক্ষ্য করা গেছে। অনেক স্থানে প্রশাসনের গাড়ি দেখেই সাধারন মানুষদের লুকাতে দেখা গেছে।
কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় সকাল ৯টার পর থেকেই পুলিশী তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সুপার খাইরুল আলমের নেতৃত্বে পুলিশের বেশ কয়েকটি টহল টিমের উপস্থিতি এবং রিকসা ও অটো রিকসা চলাচলে বাধা সৃষ্টিতে অনেক মানুষকে পায়ে হেটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। পুলিশের এ ধরনের মাঠ পর্যায়ের অভিযানে অযাচিত চলাচল অনেকাংশে কমেছে। পুলিশ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে রিকসা অটো রিকসা থামিয়ে দেয়ায় জনসাধারনকে দুর্ভোগে পড়তে দেখা গেছে। পুলিশের কঠোরতার মধ্যদিয়েও মানুষজনকে পায়ে হেটে আবার মোটর সাইকেল অথবা রিকসা ও অটো রিকসায় চলে যেতে দেখা গেছে। তবে একাধিক বাঁধার সম্মুখে মানুষজনকে রাস্তায় চলাচলে আগ্রহ হারাতে দেখা গেছে।
মানুষকে ঘরে রাখতে সোমবার ভোর থেকেই মাঠে তৎপর রয়েছে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই শহরের প্রবেশ মুখে আটটি পয়েন্টে পুলিশ সদস্যদের কড়া পাহারা চলছে। জেলায় সবধরনের (অত জরুরি সেবা বাদে) যানবাহন বন্ধ রয়েছে। মাঠে ম্যাজিষ্ট্রেটের ভ্রাম্যমান নামানো হয়েছে।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ছয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ডসহ জেলা প্রশাসনের ম্যাজিষ্ট্রেটদের সমন্বয়ে একাধিক টিম মাঠেই আছে। সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। জেলার মানুষের কল্যাণের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কঠোর লকডাউনের দুই দিনে তেমন কোন ভালো ফল আসবে না। এখনকার লকডাউনের ভালো ফল এক সপ্তাহ পর আসে।
এদিকে প্রতিদিনের মত গতকাল মঙ্গলবারও জেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সাধারন মানুষকে বিনা কারনে ঘর থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেন এবং সর্বদা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও মাস্ক ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এদিকে মঙ্গলবার ডিসি কোর্ট এবং আদালত পাড়ায় সাধারন মানুষজনের চলাচল ছিল একেবারেই সীমিত। সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল কম থাকায় সেখানেও মানুষজনের চলাচল ছিল একেবারেই কম। তবে বাজারগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় এখন লেগেই আছে।
করোনায় দ্বিতীয় পর্যায়ের ঢেউ শুরুর পর থেকে লকডাউনে কুষ্টিয়ায় তেমন প্রভাব পড়েনি। জনগণ যেমন সচেতনতাবোধ থেকে লকডাউন কার্যক্রমে ভুমিকা রেখেছে তেমনিভাবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন থেকে উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
এই পরিস্থিতিতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি গত ১১জুন মধ্য রাত থেকে অধিক সংক্রমিত কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় ৭ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। তবে এই বিধিনিষেধ অনেকটা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। একেবারে ঢিলেঢালে লকডাউনে কুষ্টিয়ার সর্বত্র করোনা রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়েই চলেছে। মাঠ পর্যায়ে তা খুব একটা কার্যকর হতে দেখা যায়নি। গত শুক্রবার ওই বিধি নিষেধের মেয়াদ শেষ হলে করোনা প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্তমতে নতুন করে আরো ৭ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ অর্থাৎ লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট। এ ঘোষণায় গত সোমবার সকাল থেকে প্রথম দিনেই এই বিধিনিষেধ (লকডাউন) কার্যকর করতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। কঠোর লকডাউনে জেলা পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা চোখে পড়েছে মত।
গতকাল দুপুরের পর থেকেই লকডাউনে পৌর এলাকায় আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা প্রশংসার দাবী রাখে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কে পুরোপুরি বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিকল্প ব্যবস্থায় বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আসতে হয়েছে। মজমপুর এলাকায় পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত।