নিজ সংবাদ ॥ গতকাল শুক্রবার কুষ্টিয়া জেলায় লকডাউনের ছিল ৫ম দিন। ছুটির দিন থাকলেও লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, সুশীলসমাজ সকলের সমন্বিত প্রচেষ্ঠা চলছে তারপরেও মানুষজনেরা মানছে না লকডাউনের নির্দেশনা। শুক্রবার ছুটির দিন হলেও সকাল ৯টার পর থেকে শহরের মোড়ে মোড়ে শুরু হয় পুলিশের ধারাবাহিক কার্যক্রম। সড়কগুলোকে অবরোধ করে মানুষজনের চলাচলকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা কিন্তু তাতেও বাধ সাধে সাধারন মানুষেরা। প্রয়োজন অপ্রয়োজনে পাঁয়ে হেটে আবার মোটর বাইকের তৎপরতা এখনো কমেনি। জেলা প্রশাসক মোঃ সাইদুল ইসলাম প্রতিদিনই শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পরিদর্শন করছেন। সেই সাথে সাধারন মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছেন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সারাদিনই মাঠে থাকছে একাধিক ভ্রাম্যমান আদালত। জেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারাও বসে নেই। মাঠ পর্যায়ে করোনা মোকাবিলায় মিটিং সিটিংয়ের পাশাপাশি লকডাউন অমান্যকারীদের সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অর্থ জরিমানাও করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) বিস্তার রোধকল্পে কুষ্টিয়া জেলায় কঠোর বিধি-নিষেধ (লকডাউন) আরোপ সংক্রান্ত নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশি¬ষ্ট আইনে ও তফসিলভূক্ত অন্যান্য আইনে কুষ্টিয়া শহর ও বিভিন্ন উপজেলাসমূহে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালিত হয়৷ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে বিভিন্ন রকম সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও মানবিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অর্থদন্ড করা হয়। গতকাল শুক্রবার সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মুল) আইন, ২০১৮ এবং দন্ডবিধি, ১৮৬০ ও ২০০৯ এর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ৭ টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় মামলা করা হয় ২৪ টি। মোবাইল অভিযানে ২৫ জনকে অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। এবং ৬৫ হাজার ৪শ টাকা জরিমানার অর্থ আদায় করা হয়।
এদিকে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সমগ্র জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। উলে¬খ্য, করোনাকালে সাময়িক সময়ের জন্য উলে¬ক্ষিত চেকপোস্ট ডিউটিগুলো জনসাধারণ, বাস, ট্রাক, কভারভ্যান, মোটরসাইকেল, অটো রিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহনে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বিস্তার রোধকল্পে কাজ করছে জন্মযোদ্ধা বাংলাদেশ পুলিশ তথা কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ। সরকার কর্তৃক আরোপিত বিধি নিষেধ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার কুষ্টিয়া শহরসহ কুষ্টিয়া থানা এলাকার চেক পোস্টগুলিতে সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে তদারকী করেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মোঃ খাইরুল আলম।
এসময় পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বলেন ‘আগে জীবন, পরে জীবিকা’ জীবন বাঁচলে জীবিকা আসবে। সবাই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে এই অদৃশ্য শক্তির মোকাবেলা করতে হবে। এসময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের প্রতিও তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। চলমান পরিস্থিতিতে কেউ বিধি-নিষেধ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন পুলিশ সুপার।
লকডাউন তদাকরীকালে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা) মোঃ ফরহাদ হোসেন খাঁন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর), মোঃ রাজিবুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল মোঃ আতিকুল ইসলাম, কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সাব্বিরুল আলমসহ টিআই-১, জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ও জেলা পুলিশের সকল অফিসার ও ফোর্সগণ। মোড়ে মোড়ে এবং বিভিন্ন সড়কের পয়েন্টে পুলিশি বাঁধা উপেক্ষা করে মানুষজন ঘরের বাইরে বের হচ্ছে।
এদিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহর আওয়াীমীলীগের সাধারন সম্পাদক আতাউর রহমান আতা প্রতিদিনই দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন হাট বাজারে মানুষের মাঝে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। জনগনের মাঝে মাস্ক ব্যবহার বৃদ্ধি এবং করোনাকালীন লকডাউন মেনে ঘরে অবস্থান করার আহবান জানান। এদিকে সড়কে মানুষের উপস্থিতি কমলেও হাটে বাজারে মানুষের উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে মানুষের মাঝে সচেতনতার দারুন অভাব। সেই সাথে সরকারের এত সদিচ্ছাকে তুচ্ছ মনে করছেন। হাটে বাজারে মানুষের মাঝে সামাজিক দুরত্ব মেনে চলাচলর প্রবনতা নেই। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২০ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী জেলার সকল ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, শপিংমল, দোকান, রেস্টুরেন্ট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, বিনোদন কেন্দ্র, জেলার অভ্যন্তরে আন্তঃজেলা ও দুরপাল¬ার সকল ধরণের গণপরিবহণ চলাচলের উপর কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ চলছে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply