নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ১৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ৬ জন। গত ২৪ ঘন্টায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার। শনিবার রাত ৮ থেকে রোববার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এসব রোগী মারা যান। রোববার সকাল ৮টার পর থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত উপসর্গ নিয়ে আরো ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট রয়েছে। এদিকে আরো একটি ওয়ার্ডে আজ সেন্ট্রাল অক্সিজেন চালুর চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে শনিবার একটি ওয়ার্ডে ৩০টি বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন চালু করা হয়েছে। হাই ফ্লু ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে ১০টি। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার বলেন,‘ শনিবার রাত ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা মারা গেছে ১৫ জন। এরা সকলেই করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসীন ছিলো। আর সকাল ৮টার পর থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে আরো ৬ জন। তিনি বলেন, ২৫০ বেডের বিপরিতে রোগী ভর্তি আছে প্রায় ৩০০ জন। আমরা সাধ্যমত সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে অক্সিজেনের সংকট রয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন চালু করা হচ্ছে। আশা করছি সংকট কেটে যাবে। হাসপাতাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে দোতলা অংশের সবগুলো ওয়ার্ডে করোনা রোগী ঠাসা। বেডে জায়গা না হওয়ায় মেঝেতে কোন রকমে রোগী ঠাসাঠাসি রাখা হয়েছে। সেখানে কোন শারীরিক দূরুত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
সেখানে জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ শেখ চ্যালেঞ্জের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। তারা রোগীদের সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছেন বিরামহীণ ভাবে। রোগী ভর্তি, অক্সিজেন সরবরাহ, ওষুধ ক্রয় থেকে শুরু করে সব সহযোগিতা দিচ্ছেন রোগীদের। তবে রোগীর চাপ বাড়ায় লোকজন বেশি প্রবেশ করে। বাইরের কোন লোককে কারণ ছাড়া করোনা ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না তাদের কর্মিরা। এদিকে হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যাক সিলিন্ডার না থাকায় অনেক রোগীকে বাইরে থেকে সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। প্রতিদিন দুই বার যশোর থেকে সিলিন্ডার রিফিল করে আনতে হচ্ছে। এতে অনেক সময় রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তারপরও স্থানীয় সাংসদ মাহবুবউল আলম হানিফ ও রাজনীতি এবং সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ হাসপাতালে জরুরীভাবে সিলিন্ডার সরবরাহ করছেন। এতে করে সংকট কিছূটা লাঘব হয়েছে। তবে রোগী বাড়ায় সংকট মিটছে না।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বলেন, আমাদের কর্মিরা ২৪ ঘন্টা সেবা দিচ্ছে হাসপাতালে। সব ধরনের সেবা আমরাা দিচ্ছি। তবে রোগী বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কর্মিদের বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা নিরাশ নয়, যে কোন পরিস্থিতিতে কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার জানান, এদিকে হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সম্প্রসারন করা হচ্ছে। এর মধ্যে দুটি ওয়ার্ডে সংযোগ দেয়া হয়েছে। সেখানে এখন ৫৪ জন রোগী অক্সিজেন সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া হাই ফ্লু ন্যাজাল ক্যানুলা সুবিধা পাচ্ছেন ১০জন। আর আজকের বিকেলের মধ্যে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০টি বেডে অক্সিজেন সংযোগ দেয়া হবে। আশা করছি রোগীরা সুবিধা পাবে। অক্সিজেনের চাপ কিছুটা হলেও কমবে।
এদিকে লকডাউন চললেও অবাধে লোকজন চলাচল করছে। গতকাল রাতে জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী জেলায় ২৪ ঘন্টায় পিসিআর ও র্যাপিড এন্টিজেন মিলিয়ে মোট ৮৮৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে পজিটিভ সনাক্ত হয়েছে ২৯২ জন। জেলায় এটায় এখনো পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ রোগি সনাক্ত হলো। যার গড় ৩০.৩০ শতাংশ। এদিকে গত দুই সপ্তাহে রোগীর মৃত্যু শতাধিকের কাছে। আর মোট মৃত্যু হয়েছে ২৩৮ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছে ২৭৮ জন। নতুন সনাক্ত রোগির মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় সবোর্চ্চ ১৫৩ জন, কুমারখালী উপজেলায় ২৪ জন, দৌলতপুর উপজেলায় ৪৪ জন, ভেড়ামারায় উপজেলায় ৩৪, মিরপুর উপজেলায় ২৯ জন এবং খোকসা উপজেলায় ৮ জন সনাক্ত হয়। এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিকের তদারকিতে শহর ছাত্রলীগ ও জেলা ছাত্রলীগের অর্ধশত নেতা রোগীদের বাড়িতে খাবার অক্সিজেন ও ওষুধ পৌছে দিচ্ছে। এছাড়া উপজেলা করোনা পরীক্ষা করতে আসা রোগীদের সিরিয়াল মেইনটেন, পরীক্ষা করাসহ রোগীদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এতে রোগীরা সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক বলেন, করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর থেকে ছাত্রলীগের সব পর্যায়ের কর্মিরা সরসারি কাছ করে যাচ্ছে। আমদের কর্মিরা হাসপাতাল, উপজেলা ও শহরে কাজ করছে। যতদিন করোনা থাকবে আমরা মাঠে থেকে কাজ করে যাব। ২৪ ঘন্টায় আমাদের সেবা অব্যাহত আছে। রাতেও কেউ ফোন দিলে আমরা তার বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছি।’
You cannot copy content of this page
Leave a Reply