বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনার দুটি ওয়ার্ডে ৫৬টি শয্যা রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে করোনা পজিটিভ ও সন্দেহভাজন হিসাবে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন ৬৭ জন। এরমধ্যে পজিটিভ রোগী ৫০ জন। বাকি ১৭ জন অভর্জাভেশনে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনাকালে এযাবৎ আজকেই সবোর্চ্চ রোগী ভর্তি। এতে সেবা দেওয়া একটু হিমশিম পোহাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাই হাসপাতালে অতি জরুরি রোগী ছাড়া অন্য কোন রোগী ভর্তি ও সেবা দেওয়া থেকে মানুষকে নিরুৎসাহিত করছেন তাঁরা।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি সূত্র জানায়, গত ৪৮ ঘন্টায় ৪১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে জেলায় ১০৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। নমুনা অনুপাতে শনাক্তের হার ২৫ শতাংশের বেশি। গত ৭দিনে শনাক্ত হয়েছে ২৭৭ জন। এই সাত দিনে মারা গেছেন ৭জন রোগী।
সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়া জেলায় রোগী বৃদ্ধির এই পরিস্থিতিতে সোমবার থেকে আগামী সাতদিন জেলায় কিছু বিধি নিষেধ জারি করেছেন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। অবশ্য রোগী বৃদ্ধির উর্দ্ধমূখী দেখে গত ৩ জুন সিভিল সার্জন সংবাদ সম্মেলনে কঠোর লকডাউনের দাবি জানিয়েছিলেন।
চিকিৎসকেরা বলছেন, সিভিল সার্জনের দাবি মেনে নিলে হয়তো রোগী বৃদ্ধির উদ্ধমূখীতা কমতে পারতো।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে এগারটায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, করোনার নমুনা দিতে ফ্লু কর্নারে অন্তত ৫০ জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। নারী-পুরুষের মধ্যে তরুন যুবকেরাও রয়েছে। সেখানে ১০০ টাকা ফি দিয়ে তাঁরা নমুনা দিচ্ছেন। ফ্লু কর্নারের দুজন কর্মি নমুনা সংগ্রহ করছেন।
একই হাসপাতালের দোতলায় করোনার ১ নম্বর ওয়ার্ডে গেলে সেখানে ফটকের সামনে করোনা রোগীদের স্বজনদের ভিড় লেগে আছে। ভেতরে থাকা রোগীদের খোজ খবর নিচ্ছে তাঁরা। এই ওয়ার্ডে ৩৬ বেডের বিপরীতে ৪২ জন রোগী ভর্তি। ৬ জন রোগী মেঝেতে শুয়ে সেবা নিচ্ছেন। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। এই ওয়ার্ডের সামনেই করোনার দ্বিতীয় ওয়ার্ড। সেখানে সন্দেহভাজন করোনা রোগী সাধারণত ভর্তি রাখা হয়। তবে পজিটিভ রোগী বেড়ে যাওয়ায় সেখানে ৮জন রোগী রাখা হয়েছে। সন্দেহভাজন রোগী ভর্তি সেখানে ১৭ জন। তবে এই ওয়ার্ডে রোগীদের স্বজনদের ভিড় লক্ষ্য করা গেল। রোগীদের বিছানায় অন্তত তিনজন করে স্বজন গল্পে মশগুল। তাদের কয়েকজনের মুখে মাস্ক ছিল না। মাস্ক না থাকায় তারা করোনা আক্রান্ত বা বাইরে করোনা ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকছে।
এদিকে হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তির হার বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। বেলা বারটার দিকে তত্বাবধায়ক কোভিড রোগীদের সেবা দেওয়া অন্তত ১২ জন চিকিৎসক ও ২০ জন নার্সদের নিয়ে জরুরি সভা করেন।
ওই সভায় হাসপাতালের তত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন, সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার, জেষ্ঠ্য মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এএসএম মুসা কবির উপস্থিত ছিলেন।
ঘন্টাব্যাপী চলা সভা শেষে আরএমও তাপস কুমার সরকার বলেন, ‘কোভিড রোগী ভর্তি চাপ বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য কিভাবে সেবা বৃদ্ধি করা যায় সেব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু রোগী বাড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই অবস্থায় অতি জরুরি রোগী ছাড়া অন্য কোন রোগী ভর্তি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এএসএম মুসা কবির বলেন, ‘করোনা রোগী ভর্তির চাপ ব্যাপক। এজন্য দুটির বাইরে আরও একটি ৩৬ শয্যার ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামীকাল (বুধবার) ওই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি শুরু করা হবে।
তত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, ‘পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকলেও এদিক সেদিক করে চালানো হচ্ছে। তবে অবকাঠামোর খুবই অভাব। চিকিৎসা সরঞ্জাম যা আছে তা আপাতত চলবে। হাই ফ্লো ক্যানুলা নজেল যা আছে তা সীমিত। আরও ১৫ থেকে ২০টা এই মূহুর্তে সরবরাহ করা হলে ভালো হতো।’
You cannot copy content of this page
Leave a Reply