নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়া জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে ভোট গ্রহন শুরুর আধা ঘন্টা পর নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ব্যালেট পেপারে নাম এবং প্রতীকের অসাঞ্জস্যপূর্ণ একাধিক ভুল থাকায় ভোটার ও প্রার্থীদের আপত্তির কারনে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহন স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের গাফিলতি ও অবহেলার কারনে ব্যালেট পেপারে অসংখ্য ভুল বলে অভিযোগ করেছে শ্রমিকরা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং সাধারন সদস্যরা এডহক কমিটি ও নির্বাচন কমিশন বাতিল করে জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রনে নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষনার দাবী জানিয়েছেন। এদিকে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান এ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী জানিয়েছেন ব্যালেট পেপারে অস্পষ্টতার কারনে প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যে থেকে আপত্তি তোলা হয়। বিষয়টি নিয়ে খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক শ্রম অফিসের উপ-পরিচালক মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের এডহক কমিটির পরবর্তীতে পদক্ষেপ গ্রহন করবে।
নির্বাচন কমিশন চেয়ারম্যান এ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী গত ২৮ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের ভোট গ্রহনের দিন ধার্য্য করে বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয় ২৮এপ্রিল থেকে। যাবতীয় কার্যক্রম শেষে গতকাল শুক্রবার ২৭ মে ভোট গ্রহনের দিন ছিল। বিগত এক মাস যাবত প্রার্থীরা তাদের সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায় অংশ নিয়েছেন। তাদের নির্ঘুম প্রচার প্রচারনা এবং আর্থিক ব্যয়ের বিষয়টি ছিল গুরুত্বপুর্ণ। গতকাল শুক্রবার ভোট গ্রহন শেষে ফলাফলের মাধ্যমে নির্বাচনের বেসরকারীভাবে কার্যক্রম শেষ হবে। সেই মোতাবেক শুক্রবার কুষ্টিয়ার কলকাকলী মাধ্যমে বিদ্যালয় এবং এর আশে পাশে সড়কগুলোতে প্রার্থীরা বিপুল ব্যয় করে নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরী করে সেখানে সমর্থকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। এ সময় হাসপাতালের সড়কে ভিড় হওয়ার পাশাপাশি সমর্থকদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করতে থাকে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসতে থাকেন। নির্বাচনকে ঘিরে কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সড়কে দেয়া হয় অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ। বেলা ৯টায় ভোট গ্রহন শুরু হয়। ২৮টি ভোট পোল হওয়ার পর একজন ভোটার ভোট দিতে যেয়ে তাঁর কাঙ্খিত একাধিক প্রার্থীর নাম এবং প্রতিকের মধ্যে ভুল ধরা পরলে তিনি বিষয়টি সাথে সাথে নির্বাচন কমিশনকে জানান। এ বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র এবং বাইরে প্রার্থী এবং সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মুল প্রতিক হবে রেঞ্চ কিন্তু ব্যালেটে ছবি দেয়া হয়েছে ২টি সেলাই রেঞ্জ, মুল প্রতীক হবে কেচি কিন্তু ব্যালেটে ছবি দেয়া হয়েছে ধান কাটার কাচি। মগ প্রতিকের স্থানে অস্পষ্ট হয়ে জগ হয়েছে আর বড় গাড়ির টায়ার প্রতিকের স্থলে ২টি মোটর সাইকেলের টায়ার দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাস আর ট্রাকের ছবিতেও অস্পস্টতা রয়েছে। ভুলে ভরা ব্যালেট পেপারের বিষয়টি নির্বাচন কমিশন এ্যাড. অনুপ কুমার নন্দীর নিকটের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যালেটে কিছু অস্পষ্টতার কারনে ভোটার এবং প্রার্থীদের অনুরোধে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তিতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এসময় নির্বাচন কমিশন বিষয়টি দেখেন এবং আমলে আনার জন্য সাময়িক ভোট গ্রহন বন্ধ রাখেন। নির্বাচন কমিশনের এই ভুলের খেসারত দিতে হলো শ্রমিকদের। এঘটনার খবর শুনে ভোট কেন্দ্রে ছুটে আসেন জেলা প্রশাসন এবং জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাগন। পরে খুলনা আঞ্চলিক শ্রম অফিসের উপ-পরিচালকের উপস্থিতিতে নির্বাচনের ব্যালেট পেপার পর্যবেক্ষন করে ভোট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত দিয়ে মাইকে ঘোষণা দেন। নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষনার পর শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেনা সৃষ্টি এবং হাতাহাতির খবর পাওয়া গেছে। কুষ্টিয়া জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে প্রার্থীরা দীর্ঘদিন নির্বাচনী প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করেছে। নির্বাচন কমিশনের ভুলের খেসারত দিতে হলো শ্রমিকদের। পরবর্তি নির্বাচন কবে নাগাদ হবে তা আগামী রবিবার মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা যায়। কুষ্টিয়া জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের এডহক কমিটির আহবায়ক ইমরুল ইসলাম জানান- নির্বাচন কমিশনের অসহযোগিতা এবং অদক্ষতার কারনেই এই মারাত্বক ভুল হয়েছে যা মেনে নেয়া যায় না। কমিশন গুরুত্ব দিয়ে এই কাজটি করলে এই ভুল হতো না। তিনি জানান নির্বাচনী তফসিল মোতাবেক প্রতীক এবং প্রতীকের নামের বিভ্রান্তির বিষয়টি ভোট শুরুর আগেই নির্বাচন কমিশন জানতো কিন্তু আমলে আনেনি বরং এই ভুল দিয়েই ভোট গ্রহন সম্পন্ন করতে চেয়েছিল কিন্তু একাধিক ভুল ধরা পড়ায় নির্বাচন কমিশন ভোট স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও এবারকার নির্বাচনে সাধারন সম্পাদক প্রার্থী মোকাদ্দেস হোসেন জানান- আমরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে ভোট দিতে এসে নির্বাচন কমিশনের বলির শিকার হলাম। এই ঘটনাটি একজন প্রার্থীর জন্য খুবই কষ্টকর এবং মর্মান্তিক। এই ভুলে দায় কে নেবে ? তিনি নির্বাচন কমিশন ও এ্যাডহক কমিটির বাতিল করে পুনরায় এ্যাডহক কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠন করে জেলা প্রশাসনের অধীনে নির্বাচনের দাবী জানান। সাবেক সভাপতি ও এবারকার নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হাসানুজ্জামান স্মরণ জানান- নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়েছে একজন প্রার্থী হিসেবে আমি আশাহত। বর্তমান প্রচার সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদক প্রার্থী আনিছুর রহমান জানান- নির্বাচন কমিশনের ভুলের কারনে ভোট স্থগিত হওয়ায় একজন প্রার্থী হিসেবে আমি আর্থিক এবং মানষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি পাশাপাশি আমার অনেক শ্রমিক ভাইয়েরা এই ক্ষতির শিকার তাই আমি এই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। নির্বাচনে কার্যনির্বাহী পরিষদের ১৭টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ছিল ৫৫জন। সাড়ে ৫ হাজার ভোটার নির্বাচনে ভোট দেয়ার কথা ছিল।
Leave a Reply