নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ মেয়াদের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রথম দিন শনিবার পৌর এলাকার সর্বত্র বিধি নিষেধ বাস্তবায়ন হতে দেখা গেছে।
কুষ্টিয়ায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার মোঃ খাইরুল আলম অবস্থান নেয়। এ সময় জেলা প্রশাসনের সাথে ট্রাফিক পুলিশ, কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ, ডিবি ও এসএএফ পুলিশ সদস্যরা তিনটি রাস্তা থেকে আগত সকল সাইকেল, মোটর সাইকেল, ইজিবাইক, প্যাডেল চালিত রিক্সা, অটোরিক্সাসহ সকল ধরনের যানবাহন শহরের যে দিক দিয়ে আসার চেস্টা করে ঠিক সেই দিকেই গাড়িগুলো ফেরত পাঠানো হয়। এ জন্য শহর ফাকা হয়ে যায়।
জেলা প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনীর আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় বিধি নিষেধ কার্যকর করতে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ অত্যন্ত ফলপ্রসু বলে পৌরবাসী মনে করছেন। করোনায় দ্বিতীয় পর্যায়ের ঢেউ শুরুর পর থেকে লকডাউনে কুষ্টিয়ায় তেমন প্রভাব পড়েনি। জনগণ যেমন সচেতনতাবোধ থেকে লক ডাউন কার্যক্রমে ভূমিকা রেখেছে তেমনিভাবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন থেকে উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
এই পরিস্থিতিতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি গত ১১জুন মধ্য রাত থেকে অধিক সংক্রমিত কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় ৭ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। তবে এই বিধিনিষেধ অনেকটা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। একেবারে ঢিলেঢালে লকডাউনে কুষ্টিয়ার সর্বত্র করোনা রোগীর সংখ্যা হুহু করে বেড়েই চলেছে। মাঠ পর্যায়ে তা খুব একটা কার্যকর হতে দেখা যায়নি। গত শুক্রবার ওই বিধি নিষেধের মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে আরো ৭ দিনের করোনা প্রতিরোধ কমিটি। তবে গতকাল শনিবার সকাল থেকে প্রথম দিনেই এই বিধিনিষেধ কার্যকর করতে প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। কঠোর লক ডাউনে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা চোখে পড়েছে। শুক্রবার সন্ধার পর পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম পৌর এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সরেজমিনে ঘুরে দেখেন সেই সাথে শুক্রবার সন্ধার পর থেকেই পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়। শনিবার ভোর থেকেই পৌর এলাকার প্রবেশ মুখের সড়কগুলো বেরিকেড দিয়ে বিনা প্রয়োজনে রিকসা,অটো ও সিএনজি চলাচলে ছিল কঠোর বিধি নিষেধ। শহরতলী চৌড়হাস, ত্রিমোহিনী, লাহিনী মোড়, মোল্লাতেঘরিয়া মোড় এবং হরিপুর সেতুর হরিপুর অংশে। পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করা হয় অটো রিকসা, রিকসা এবং ভ্যান চলাচল। সরেজমিনে দেখা গেছে হরিপুর এলাকার প্রবেশ দ্বার হরিপুর-কুষ্টিয়া সংযোগ সেতুর হরিপুর অংশে সকাল থেকেই কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশ মুখে কঠোর নিয়ন্ত্রন। একান্ত প্রয়োজনে কিছু কিছু অটো রিকসা চলাচলে অনুমতি পেলেও অধিকাংশ অটো রিকসা ও ভ্যান ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার অনেককে পায়ে হেটে হরিপুর সেতু পার হতে দেখা গেছে। হরিপুর নিয়ন্ত্রনের ফলে কুষ্টিয়া শহরের উপর অনেকাংশে চাপ কমেছে। এদিকে শহরের মজমপুরগেটে কঠোর পুলিশি নজরদারীতে রিকসা, ভ্যান, অটো রিকসা চলাচলে বাঁধার সম্মুখিন হতে হয়েছে। শহরের চৌড়হাস মোড়ের সকল সড়কের সংযোগে পুলিশি তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। ত্রিমোহিনী থেকে শহর অভিমুখে রিকসা,অটো রিকসা চলাচলে ছিল কঠোর বিধি নিষেধ। মোলক্ষাতেঘরিয়া, লাহিনী মোড়েও ছিল পুলিশের তৎপরতা। শহরের মজমপুর গেট থেকে শুরু করে থানা মোড়, সিঙ্গার মোড়, বড় বাজার সর্বত্র ছিল পুলিশের নজরদারীতে। এদিকে শহরের সর্বত্র পুলিশের তৎপরতা থাকায় রিকসা, অটো রিকসা চলাচলও ছিল একেবারেই কম। তবে শহরের অলিগলিতে কিছু রিকসা ও অটো রিকসা চলাচল করতে দেখা গেছে। এদিকে পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম শনিবার বিকেলে পৌর এলাকার মজমপুর গেট, চৌড়হাস মোড়, মোল্লাতেঘরিয়া মোড়, লাহিনী মোড়, বড় বাজার ও হরিপুর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডমিন) মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( জেলা বিশেষ শাখা) ফরহাদ হোসেন খাঁন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রাজিবুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আতিকুল ইসলাম, অফিসার ইন চার্জ কুষ্টিয়া মডেল থানা সাব্বিরুল আলম, ওসি ডিবি, টিআই-১,আরআরআই কুষ্টিয়াসহ জেলা পুলিশ কুষ্টিয়ার সকল র্যাংকের অফিসার ও ফোর্স।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডমিন) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, করোনা প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের নেয়া কঠোর বিধি নিষেধ বাস্তবায়নে জেলা পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শুক্রবার থেকে পুলিশের যে তৎপরতা শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। তিনি জানান-কুষ্টিয়ায় করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সকলের সহযোগিতা করা প্রয়োজন। বিনা প্রয়োজনে মানুষ যাতে ঘরের বাইরে না আসে সে ব্যাপারে নিজের থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।
গতকাল শনিবার ভোর থেকেই বৃষ্টি ছিল। তারপরেও একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষজনকে বাইরে বের হতে তেমন একটা দেখা যায়নি। দিনের বাকী সময়টা বাইওে মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। আর পুলিশ রিকসা, অটো রিকসা ও সিএনজি চলাচলে বাঁধা প্রদানে সড়কে যানবাহন একেবারেই কম ছিল। বিভিন্ন মোড়ে চায়ের দোকানগুলো বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। এদিকে জেলা ছাত্রলীগের একটি মিছিল দুপুর ১টার দিকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে শ্লোগান দিতে দেখা গেছে। এদিকে রিকসা, অটো রিকসা চলাচল কম থাকায় অনেককে দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে যেতে দেখা গেছে। আবার এই সুযোগে অনেক স্থানে রিকসা ও অটোর ভাড়া বৃদ্ধির অভিযোগ উঠে। সারাদিনে শহরের অধিকাংশ সড়কেই মানুষ শুন্য দেখা গেছে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply