বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়া সুগার মিলের প্রায় ৫২.৭৭০ মেট্রিক টন চিনির হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। মিলের গুদামে ১০০ টনের বেশি চিনি মজুদ থাকলেও এখন প্রায় অর্ধেকটার সন্ধান মিলছে না। এ ঘটনায় গুদাম কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। এদিকে গতকাল শনিবার রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারন ডায়েরি করেছে মিল কর্তৃপক্ষ।
জানাগেছে, গত মৌসুমে উৎপাদন বন্ধ থাকা কুষ্টিয়া সুগার মিলের গুদামে শতাধিক টন এর বেশি চিনি মজুদ ছিল। গত বৃহস্পতিবার মিলের কর্মকর্তারা স্টক রেজিষ্ট্রারের সঙ্গে মজুদ চিনির পরিমান মেলাতে গিয়ে দেখতে পান সেখানে প্রায় ৫২.৭০০ মেট্রিক টন চিনি কম আছে। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সুগার মিল প্রশাসনে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক গুদাম কর্তকর্তা ফরিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন সদস্েযর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
মিলের সিবিএ সাধারন সম্পাদক আনিস মাহমুমদ বলেন, এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। বিষয়টি ধরা পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র এ কাজ করে আসছিলো। মিল বন্ধ না হলে হয়তো বিষয়টা ধরা পড়তো না। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন সিবিএ সভাপতি ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ফ্যাক্টারি, গোডাউন আর কর্মকর্তাদের কেউ কেউ জড়িত। ১০ ১২ বছর ধরে এমন কাজ চলে আসছিলো বলে মনে হয়। এখন বিষয়টি সামনে এসেছে। চিনির দামও কম নয়। প্রায় ৩৩ টাকা। একদিনে এত চিনি পাচার হয়নি। তাই সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের সামনে আনতে হবে।
এ ঘটনায় গোডাউন কিপার ফরিদুল ইসলামকে সাসপেন্ডসহ তদন্ত টিম গঠন হয়েছে। ফরিদুল স্টোর কিপার ছিলেন। সম্প্রতি তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে সোহেল নামের একজন দায়িত্বে ছিলেন। তার সময় চিনি চুরি ঘটনা হয়ে থাকতে পারে বলে বেশির ভাগ শ্রমিক-কর্মচারী মনে করেন। তার সময় তেল চুরিও হয়েছে। যার প্রমান পেয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে জিএম ফ্যাক্টারি কল্যাণ কুমার দেবনাথকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
মিলের জিএম (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান বলেন,‘ বিষয়টি গত বৃহস্পতিবারে নজরে আসে। সেদিনই ফরিদুল ইসলামকে বরখাস্ত ও তদন্ত টিম গঠন করে কর্পোরেশনকে জানানো হয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন মিলের গোডউন খালি হয়নি। এ সুযোগে চিনি কখনো একেবারে শেষ হয়নি। এবার মিল বন্ধ হওয়ার পর চিনির স্টক শেষ হয়ে আসে। তাই রেজিষ্ট্রার ও গোডাউনের চিনির হিসাবে গরমিল পাওয়া যায়। তার পরিমান ৫০টনের বেশি। তদন্ত চলছে। বিষয়টি তদন্তে উঠে আসবে। যারা অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে শনিবার রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেছে মিলের সহ-ব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) হায়দার আলী। সেখানে কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। ৫২.৭০০ মেট্রিক টন চিনির দাম নির্ধারন করা হয়েছে ৩৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।
কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাব্বিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সাধারন ডায়েরির পর বিষয়টি তারা তদন্ত করবেন বলে জানান। কারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তা বের করাই হবে আমাদের প্রথম কাজ।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন চিনিকলের একটি চক্র বাইরে চিনি বিক্রির সময়ে গোপনে ট্রাকে চিনি পাচার করে আসছে। এ বছরেও দিন ছাড়া রাতেও চিনির ট্রাক গেছে। তবে এক বছরে এমন হয়নি। সম্প্রতি কয়েক বছরে এ কাজ হয়ে আসছে। এর আগে গোডাউন ধ্বসেও কিছু চিনি নষ্ট হয়। সে সময় চিনি পাচার হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। এদিকে চিনি গায়েবের ঘটনা কথা বলতে রাজী হননি এমডি রাকিবুর রহমান।