1. andolonerbazar@gmail.com : AndolonerBazar :
রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ০৩:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ইবিতে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সমন্বিত পরীক্ষা সম্পন্ন দৌলতপুর সীমান্ত থেকে হত্যা মামলার পলাতক আসামি গ্রেফতার দৌলতপুরে পুরাতন ভবন ঘিরে গড়ে উঠেছে মাদকের হাট মিরপুরের নওয়াপাড়া বাজারে এসকে চঞ্চলের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন খোকসায় সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মাসুদ’র মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত কুমারখালীতে অক্সিজেন লাগাতে দেরি, রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে নার্সকে মারপিটের অভিযোগ কুমারখালীতে সরকারি গাছ কাটলেন ইউপি সদস্য কুষ্টিয়ায় জাগ্রত সাহিত্য ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে এসপি খাইরুল আলম : সভ্যতার বিকাশ ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সৃষ্টিশীল মানুষকে সম্মান করতে হবে ভেড়ামারায় আ.লীগের কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর, ইউপি সদস্যসহ আহত ২ দৌলতপুরে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি

  • সর্বশেষ আপডেট : শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১
  • ২৩২ মোট ভিউ

কৃষি প্রতিবেদক ॥ কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। এখনো মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩.৬ শতাংশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের দিকনির্দেশনায় বর্তমান সরকার কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। এরই অংশ হিসেবে রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নান অভীষ্ট, ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ সহ নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। কৃষি ক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে খরপোষের কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলে দেশে কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট খাতে কর্মসংস্থান সম্প্রসারিত হয়েছে। বিশ্বে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের স্থান এখন দশম। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১৫.৭৭ লাখ টন কিন্তু উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় প্রকৃত উৎপাদন হয়েছে ৪৫৩,৪৪ লাখ টন, যার ফলে দেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ দেশে এত পরিসম্পদ ও কর্মক্ষম জনবল থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার অভাবে ২০০৬ সালে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ২,৬১,৩৩ লাখ টন মাত্র। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অঞ্চল বিশেষে এক ও দুই ফসলি জমিকে প্রায় চার ফসলি জমিতে পরিণত করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে ফসলের নিবিড়তা ২১৬ শতাংশ অথচ ২০০৪ সালে দেশে ফসলের নিবিড়তা ছিল ১৮০ শতাংশ। ফসলের উৎপাদন খরচ হ্রাস করার লক্ষ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার কৃষিবান্ধব সরকার সারের মূল্য পাঁচ দফা কমিয়ে বর্তমানে প্রতি কেজি টিএসপি ৮০ টাকা থেকে কমিয়ে ২২ টাকা, এমওপি ৭০ টাকা থেকে ১৫ টাকা, ডিএপি ৯০ টাকা থেকে ১৬ টাকায় নির্ধারণ করেছে।
২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নার্সভুক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ফসলের ৬৩১টি উচ্চফলনশীল নতুন নতুন জাত এবং ৯৪০টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত ব্রি কর্তৃক ধানের ৫৫টি জাত, বিএআরআই কর্তৃক বিভিন্ন ফসলের ২৫৮টি জাত, বিজেআরআই কর্তৃক পাটের ১৫টি জাত, বিএসআরআই কর্তৃক ইক্ষুর ৯টি জাত ও সুগার বিট, তাল ও স্টেভিয়ার ৪টি জাত, সিডিবি কর্তৃক তুলার ১০টি জাত এবং বিআইএনএ কর্তৃক বিভিন্ন ফসলের ৬৮টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জিএমও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিটি বেগুনের ৪টি জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং বিটি তুলার জাত উদ্ভাবনের কাজ চলমান রয়েছে। দেশি ও তোষা পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কারসহ পাঁচ শতাধিক ফসলের ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন করা হয়েছে। পাট ও পাটজাতীয় আঁশ ফসলের ৫৪টি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন ও উন্মুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয়। বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে গত ১২ বছরে লবণাক্ততা, খরা, জলমগ্নতা সহনশীল জাতসহ এ পর্যন্ত ধানের ১৩৪টি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিশ্বের প্রথম জিংকসমৃদ্ধ ধানের উদ্ভাবন করা হয়েছে। সর্বোপরি বিভিন্ন অভিঘাতসহনশীল ও অনুকূল পরিবেশের উপযোগী জাতগুলোর আবাদ সম্প্রসারণের ফলে ২০০৯ সাল থেকে ধানের উৎপাদন বছরে গড়ে ৬.০ লাখ টন হারে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত আছে। নিবিড় সবজি চাষের মাধ্যমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক কোটি ৫৯ লাখ ৫৪ হাজার টন সবজি উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। ২০১৯ অর্থবছরে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৪৭ হাজার টন সবজি উৎপাদন হয়েছে। অথচ ২০০৬ সালে শাকসবজির উৎপাদন ছিল মাত্র ২০ লাখ ৩৩ হাজার টন। ভাসমান বেডে চাষাবাদ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সবজি ও মসলা উৎপাদন করা হচ্ছে। ভাসমান বেডে চাষাবাদ পদ্ধতিটি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ২০১৫ সালে কৃষিতে বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। ফল উৎপাদনেও বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়েছে। আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে সপ্তম। দেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২২ মিলিয়ন টন আম উৎপাদিত হয়েছে। বছরব্যাপী ফল উৎপাদন, প্রাপ্তি ও ব্যবহারের মাধ্যমে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৫৮ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৮ নারিকেল, তাল, খেজুর ও বিভিন্ন ফলের চারা বিতরণ এবং রোপণ করা হয়েছে। সারাদেশে নারিকেল, তাল ও খেজুর চাষ বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান আছে। বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত ও বিদেশি ফল চাষে উৎসাহ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত কৃষি খাতে মোট ৮১ হাজার ১৪০ কোটি টাকার ভর্তুকি প্রদান করেছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে কৃষি প্রণোদনা/কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেছে। অদ্যাবধি এ কর্মসূচির মাধ্যমে ১০৪২ কোটি ৪৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে- যার মাধ্যমে ৯৮ লাখ ২৪ হাজার ৯৬৪ জন কৃষক উপকৃত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া এবং বিভিন্ন ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন বাবদ ১০৪ কোটি ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ২ কোটি ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৯ জন কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান করেছে। উৎপাদনমুখী কৃষিবান্ধব সরকার কৃষককে মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দেয়ায় দেশের ১ কোটি ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৬৩৫ জন কৃষক ব্যাংকে হিসাব খুলতে পেরেছেন। যার মাধ্যমে কৃষককে প্রণোদনা ও উপকরণ সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে।
সঠিক শস্যবিন্যাস অনুসরণের লক্ষ্যে জলবায়ু ও মৃত্তিকা উপযোগিতা অনুযায়ী ১৭টি ক্রপ জোনিং ম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে। কৃষকের মৃত্তিকা নমুনা সরেজমিন পরীক্ষা করে ফলাফলের ভিত্তিতে সুষম মাত্রার সার সুপারিশ করার লক্ষ্যে ১০টি ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষাগার চালু করা হয়েছে। এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিক ফলাফলের ভিত্তিতে সুষম সার ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করছে।
কৃষি যান্ত্রিকীরণের ক্ষেত্রে দেশের হাওড় ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় কৃষকের জন্য ৭০% এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৫০ শতাংশ হারে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে সরকারি আর্থিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত ৪২২ কোটি ৮০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আমদানিকৃত বীজের রোগবালাই পরীক্ষার জন্য একটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। উন্নত জাতের চারা কলম তৈরির জন্য টিস্যু কালচার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ ফল ও সবজির উৎপাদনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কৃষি খাতে বায়োটেকনোলজি, পার্চিং, ফেরোমন ফাঁদ, আইপিএম, অইসিএম, উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ব্যবহার করে যথাসম্ভব বালাইনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পরিবর্তিত জলবায়ুতে চাষের উপযোগী জাত উদ্ভাবন, বায়োফটিফিকেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমৃদ্ধ শস্য উৎপাদন এবং উদ্ভিদ রোগপ্রতিরোধ ও ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ পাটের জিনোম সিকোয়েন্স করতে এরই মধ্যে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশ এখন টেকসই খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ভিশন-২০২১ ও ২০৪১ সরকারের একটি মহৎ পরিকল্পনাই নয় এটি অর্থনৈতিক মুক্তি চ্যালেঞ্জের ভিশন। ভিশন-২০২১, এসডিজি-২০৩০, ভিশন-২০৪১ ও ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এগুলো বাস্তবায়ন হলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তব রূপ ধারণ করবে।
লেখক: কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন, ঊর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
© All rights reserved ©2021  Daily Andoloner Bazar
Theme Customized By Uttoron Host

You cannot copy content of this page