1. andolonerbazar@gmail.com : AndolonerBazar :
শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন

কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে নারী

  • সর্বশেষ আপডেট : শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১
  • ২৯১ মোট ভিউ

কৃষি প্রতিবেদক \ ইতিহাস থেকে জানা যায় আদিম কৃষির সূচনা হয়েছিল নারীর হাতেই। সভ্যতার বিবর্তনে সেই অংশগ্রহণ ক্রমেই বেড়েছে, কমেনি এতটুকুও। কৃষি শিক্ষা, গবেষণা, স¤প্রসারণ কোথায় নারীরা। ফসলের মাঠ থেকে গবেষণাগার, সর্বত্রই রয়েছে নারীর অবদান ও অংশগ্রহণ। নারীর হাত ধরেই কৃষিব্যবস্থার আধুনিকায়ন হয়েছে। আধুনিক কৃষিতে তাদের অংশগ্রহণ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণাগার কিংবা গবেষণা মাঠে নারী-পুরুষ কাজ করছে সমান তালে। ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন ও উৎপাদন বৃদ্ধি, গবাদি পশুপালন, মাছের জাত উন্নয়ন এবং কৃষিবিষয়ক উদ্ভাবনে তারা ঈর্ষাণীয় সফলতা লাভ করছে। বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০১৪ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে চারটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ছাত্রী। ২০০৯ সালে যা ছিল ৩০ শতাংশ মাত্র। এর মধ্যে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৬ শতাংশ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭.৪৪ শতাংশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৬.০৫ শতাংশ এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭.৮৯ শতাংশ ছাত্রী বর্তমানে অধ্যয়নরত। এ পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছেথ কৃষি শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বেড়ে চলছে। চারটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ যেসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে এখানকার প্রতিটি ছাত্রীই তাদের মেধার স্বাক্ষর রাখছে। শিক্ষক আর গবেষকদের নয়া প্রযুক্তি নিয়ে মাঠপর্যায়েও তারা কৃষাণ-কৃষাণিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে, পরামর্শ দিচ্ছে। ভালো ফলাফল করার জন্য মেয়েরা আজ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী পদক থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে সফল হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশা থেকে শুরু করে বিসিএস, কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যাংক, প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে আজ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। অন্যদিকে কৃষি ক্ষেত্রে নারীর অপরিসীম অবদান থাকা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রেও তারা অবহেলিত। কৃষাণি হিসেবেই এখনো তেমনভাবে স্বীকৃতি মেলেনি। বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষা অনুযায়ী কৃষিতে নারীর অবদান গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ। বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত জায়গা নারীর হাতের আলতো স্পর্শেই শাক-সবজি, শিম, কুমড়ো, লাউ, শসা ইত্যাদির ফলন হয়ে থাকে, যা ওই পরিবারের শাক-সবজির প্রাথমিক চাহিদা  পূরণ করে, এমনকি অনেক সময় বাড়তি অংশটুকু বিক্রি করে বাড়তি আয় করাও সম্ভব হয়ে থাকে। এছাড়া দেশের অনেক এলাকায় নারীরা বপন, রোপণ, নিড়ানিসহ ফসল পরিচর্যার কাজে সরাসরি নিয়োজিত আছেন। ১৯৯৫-৯৬ সালে নারীকে প্রথমবারের মতো নারী যে কৃষক তার স্বীকৃতি দেয়া হয়। তবে এত বছর পরও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) তাদের অবদান অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। কৃষাণিদের নিয়ে আলাদা কোনো পরিসংখ্যান নেই। কৃষি ক্ষেত্রে কর্মরত নারীর শ্রমমূল্য পুরুষের অর্ধেক! তবে আশার কথা হলো- শিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের নারীরা নিজেদের উপযোগী করার ক্ষেত্রে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এক দশক আগেও দেশে কর্মসংস্থানে নারীর অংশগ্রহণ ছিল খুবই কম। সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। নারীদের কর্মসংস্থানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয়। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যানুযায়ী, এক দশকে যেখানে কৃষি ক্ষেত্রে পুরুষের অংশগ্রহণ কমেছে, সেখানে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। মাঠভিত্তিক কৃষিকাজ ও গৃহভিত্তিক কৃষিকাজ এ দুটি পর্যায়েই নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা কৃষি উৎপাদন প্রক্রিয়ার তিনটি পর্যায় যথা- প্রাক-বপন প্রক্রিয়া, বীজ বপন ও ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং ফসল-উত্তর প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থাকেন। তাছাড়া ফসল কর্তনোত্তর প্রক্রিয়ায় মাড়াই, বাছাই শুকানো ও আহারযোগ্য করে তোলার কাজের বেশির ভাগ দায়িত্বই পালন করেন নারী। ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কৃষি খাতে নিয়োজিত পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান শতকরা ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ বেশি। তবুও কৃষি কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের মূল্যায়ন পুরুষের সমান নয়। সমতা আর সম্মানের প্রশ্নে আজো পিছিয়ে কৃষি কাজে নিয়োজিত নারীসমাজ। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরে কৃষি খাতে অংশগ্রহণকারী নারী শ্রমিকের কোনো সংখ্যা তথ্য নেই। কৃষি কাজে সম্পৃক্ত নারী কৃষক মজুরি প্রাপ্তিতে বৈষম্যেরও শিকার হন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের নামমাত্র মজুরি দেয়া হয়। ফলে কৃষি কাজে পুরুষের সমান অংশগ্রহণ করেও নারীর পরিচয় থাকছে কেবল গৃহিণী হিসেবে। সরকারি তথ্যানুযায়ী, বিগত এক দশকে ১ কোটি ২০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি, বনায়ন ও মৎস্য খাতেই যুক্ত হয়েছে ২০ লাখ নারী শ্রমিক। কৃষিতে নতুন কর্মসংস্থানের ইঙ্গিত দিলেও দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে কৃষিতে নারী শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি অথবা নারী শ্রমিকের অধিকার কিছুই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। শ্রমশক্তির সংখ্যা অনুযায়ী ২৯ শতাংশ নারী অবৈতনিক পারিবারিক কাজে নিয়োজিত থাকার পরও শ্রমশক্তির অংশ হিসেবে অদৃশ্যই থেকে যাচ্ছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৮১ শতাংশ নারী গৃহস্থালিসহ কৃষিকর্মে সরাসরি অবদান রাখছেন। কিন্তু তাদের শ্রমকে শ্রমশক্তি হিসেবে গণ্য করা হয় না। কারণ তাদের এ কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাহাতুল জান্নাত মৌলি জানান, গবেষণা, উদ্ভাবন আর সময়োপযোগী প্রযুক্তি আবিষ্কারে ছেলেদের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে শিক্ষার্থীরা। ফসলের মাঠ থেকে কর্মক্ষেত্র, কোথাও পিছিয়ে নেই তারা। কৃষি ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, প্রয়োগ ও কৃষি গবেষণায় যুগান্তকারী সাফল্য কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ ত্বরান্বিত করছে। কৃষিতে নারীর অবদান বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিভাগের প্রফেসর ড. সোলায়মান আলী ফকির বলেন, পুকুরে মাছ চাষ, হাঁস-মুরগিসহ কবুতর প্রতিপালন, গরু-ছাগল ও মহিষ দেখাশোনায় নারীরা শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। আর বাংলাদেশের চা উৎপাদন কথা বললে বলতেই হবে যে, চা উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী শ্রমিকের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণের ফলে একদিকে যেমন দেশের খাদ্যনিরাপত্তা বাড়ছে অন্যদিকে মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই কৃষি খাতকে গতিশীল করতে হলে সঠিক বিবেচনার ভিত্তিতে কৃষাণিদেরও ‘কৃষক কার্ড’ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নারীদেরও দিতে হবে সরকারি কৃষি প্রণোদনা। তাহলেই কেবল সামনের দিনে নারীরা কৃষিতে নতুন সবুজ বিপ্লব ঘটাতে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
© All rights reserved ©2021  Daily Andoloner Bazar
Theme Customized By Uttoron Host

You cannot copy content of this page