1. andolonerbazar@gmail.com : AndolonerBazar :
মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৩:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

কোরবানির চাহিদার তুলনায় এবার দেশেই বেশি উৎপাদন হয়েছে গরু ও ছাগল

  • সর্বশেষ আপডেট : শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১
  • ১১১ মোট ভিউ

ঢাকা অফিস ॥ কোরবানির চাহিদার তুলনায় এবার দেশেই গরু ও ছাগল বেশি উৎপাদন হয়েছে। দেশে এবার কোরবানিযোগ্য দেড় কোটি গবাদি পশু রয়েছে। দার মধ্যে কোরবানিযোগ্য গরু রয়েছে ৫৫ লাখ এবং ছাগল ভেড়া ও মহিষ রয়েছে ৯৫ লাখ। ফলে হাটে কোরনাবীর পশুর কোনো সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা নেই। কোরবানি সামনে রেখে বিপুলসংখ্যক খামারে গরু-ছাগল লালন পালন করা হচ্ছে। সারাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম পর্যায়ে খামার গড়ে তোলা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর ১ কোটি ২০ লাখ গবাদি পশু কোরবানি করা হয়েছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবার কোরবানির পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে এবারও অনলাইনে বিপুল পরিমাণ গরু কেনাবেচা হবে বলে খামারীরা আশাবাদী। তবে অনলাইনে গরু কেনাবেচায় প্রতারণা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে থাকবে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এ্যাসোসিয়েশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারাদেশে ছোট বড় মিলিয়ে এখন সাড়ে ১২ লাখ খামারে গবাদি পশু লালন পালন করা হচ্ছে। ভালো দাম পাওয়া এবং সরকারী নীগিতগত সহায়তার কারণে প্রতিবছরই প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ হারে গবাদি পশু পালনে খামার বাড়ছে। আর সেক্ষেত্রে শিক্ষিণ তরুণ বেকাররা এগিয়ে আসছে। চাকরির পেছনে না ছুটে তারা এখন নিজেরাই কিছু করার চেষ্টা করছে। আর সফল হওয়ার দৃষ্টান্তও উল্লেখযোগ্য। আগে পাবনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, নাটোর এবং সীমান্ত জেলাগুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গবাদি পশু পালন করা হলেও এখন সারাদেশেই খামার গড়ে উঠেছে। গ্রামাঞ্চলের বাড়িগুলোতে সাধারণ মানুষ ছোট ছোট খামার গড়ে তুলছে। ওসব খামারে গরু, মহিষ ও ছাগল লালন-পালন করা হচ্ছে। মূলত গরু আমদানি কমে যাওয়ায় ভাল দাম পাওয়ার কারণেই দেশী জাতের গরুর খামারের হার অনেক বেড়েছে।  সূত্র জানায়, মাংসের চাহিদা মেটাতে কয়েক বছর আগেও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বছরে ৫৫-৬০ হাজার কোটি টাকার গরু ও ফ্রোজেন মাংস আমদানি করা হতো। কিন্তু এখন নিজস্ব উৎপাদন বাড়ায় আমদানির তেমন প্রয়োজন হয় না। সেজন্যই প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরাসরি ফ্রোজেন মাংস ও গরু আমদানি পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করে তার ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ করা হয়েছে। ফলে দেশে মাংস আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। মূলত ভালো দাম পাওয়া, খামার মালিকদের প্রণোদনা প্রদান এবং সরকরাী নীতিগত সহায়তা অব্যাহত থাকায় বর্তমানে গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। কোরবানিতে দেশে ৪৫-৫০ লাখ গরু এবং ৭০-৭৫ লাখ ছাগল ও ভেড়ার চাহিদা রয়েছে। এবার চাহিদার প্রায় সোয়া কোটি পশুর পুরোটাই অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে মেটানো হবে। সেজন্য কোরবানীর মাসাধিককাল আগেই এবার কোরবানির গরু-ছাগল ও ভেড়া বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছে খামার মালিকরা। এবার কোরবানিতে গবাদি পশু সঙ্কটের কোন আশঙ্কা নেই।

সূত্র আরো জানায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতির অন্যান্য খাত চাপের মুখে থাকলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে তার বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিবছর এ খাতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার খামারের সংখ্যা। চাকরির পেছনে না ঘুরে শিক্ষিত বেকাররা এখন খামার করে পশু লালন-পালনে এগিয়ে আসছে। যে কারণে গবাদি পশু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। ফলে শুধু কোরবানি নয়, সারাবছরের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে মাংস রফতানি করারও উদ্যোগ নিচ্ছে এ খাতের বিনিয়োগকারীরা। ইতিমধ্যে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে হালাল মাংস আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের গবাদিপশুর জাতগত বৈচিত্র্য নিয়ে এক গবেষণায় বাংলাদেশের গরুর ৪টি জাতকে বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উন্নত জাত বলে জানানো হয়। তার মধ্যে চট্টগ্রামের লাল গরু, পাবনার গরু, উত্তরবঙ্গের ধূসর গরু ও মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের গরুর মাংসের মান ও স্বাদ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সেরা। আর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ছাগলের সংখ্যা, মাংস ও দুধ উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ বৈশ্বিক সূচকে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। তবে এই খাতে শীর্ষে রয়েছে ভারত ও চীন। বাংলাদেশ ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়। আর ছাগলের সংখ্যা ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। সামগ্রিকভাবে ছাগল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ হচ্ছে ভারত ও চীন। আর গরু-ছাগল-মহিষ-ভেড়া মিলিয়ে গবাদিপশু উৎপাদনে বিশ্বে ১২তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। শুধু উৎপাদনের দিক থেকেই নয়, গবাদিপশুর জাতগত বৈচিত্র্যের দিক থেকেও বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী দেশ বলছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থাসহ (এফএও) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহায়তাতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে ছাগল লালন-পালন করা হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও রাজশাহীতে ২০ হাজার খামারে প্রায় ৫০ লাখ ছাগল লালন পালন করা হচ্ছে। ওসব ছাগলের অধিকাংশই বাংলাদেশী ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের। আর পিকেএসএফের অর্থায়নে চলতি বছর গরু লালন পালন করা হয়েছে ১০ লাখ।  এদিকে কোরবানী ঘিরে এবার প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে গরু আসা বন্ধে সীমান্ত এলাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকবে। শুধু কোরবানি ঈদের আগে দেশে ২৫ থেকে ৩০ লাখ গরু-ছাগল বৈধ-অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসতো। এর মধ্যে ভারত থেকেই সিংহভাগ পশু আনা হতো। এর পাশাপাশি মিয়ানমার থেকেও দেশে গরু আসতো। এবার চোরাপথে কোরবানির পশু যাতে কোনভাবেই দেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশে মোট গরু, মহিষ ও ছাগলের সংখ্যা ২ কোটি ৪৯ লাখ। এবার ওই সংখ্যা আরো বাড়বে। প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে কোরবানির চাহিদা বাড়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে গতবছর কিছুটা কম হয়েছে। এবারও করোনা পরিস্থিতির ওপর পশুর চাহিদা নির্ভর করবে। ইতিমধ্যে দেশের সীমান্ত জেলাগুলোতে করোনা পরিস্থিতি বাড়ছে। তবে পরিস্থিতি ভাল হবে এমন আশা রেখেই হাটে পশু সরবরাহের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি মোঃ শাহ ইমরান জানান, গবাদি পশু উৎপাদনে দেশে বিপ্লব ঘটে গেছে। যে কারণে আর আমদানির প্রয়োজন নেই। দেশীয় খামারে গবাদি পশু উৎপাদন করা হলেও সেগুলো উন্নত বিদেশী জাতের। বকনা বাছুর প্রজননের জন্য বিদেশী উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন ব্যবহার করা হচ্ছে। যে কারণে দেশীয়ভাবে লালন পালন করা হলেও মূলত এগুলো বাইরের জাত। উন্নত জাতের হওয়ায় খামারে পালন করা গরু ও ছাগলে মাংস হচ্ছে অনেক। দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। যে কারণে দেশে দ্রুত খামারের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু কোরবানি নয়, মাংসের জন্যও আর বাইরে থেকে গরু আনার প্রয়োজন নেই। কারণ পশু পালন ও উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। তবে কোরবানিতে যাতে উদ্যোক্তারা ভালো দাম পায় সেজন্য পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধ এবং হাটগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করা এবং খামারিদের থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা করা জরুরি। খামার মালিকরা এখন গরু বিক্রির প্রস্তুি নিচ্ছে। বেপারিদের কাছে বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। কোরবানিতে দেশে এবার গরু নিয়ে কোন সঙ্কট হবে না।  আর অনলাইনে গবাদি পশু কেনাবেচাতে প্রতারণা প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, অন্য পণ্যসামগ্রীরর মতো কোরবানির সময় অনলাইনে গরু, ছাগল ও অন্যান্য পশু বেচাকেনা হয়ে থাকে। তবে কোরবানির পশু কিনে যাতে কেউ প্রতারিত না হয় সে বিষয়ে সরকার সজাগ দৃষ্টি রাখবে। অনলাইনে প্রদর্শিত গরু বিক্রি, নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ এবং নির্ধারিত দামের বাইরে প্রতারণা করে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার সুযোগ নেয়া হলে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। সার্বিক প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, আমদানি নয়, দেশীয় গরুতে এবার কোরবানি ঈদ পালিত হবে। কোরবানি সামনে রেখে খামার মালিকরা পর্যাপ্ত গরু উৎপাদন ও প্রস্তুত রেখেছে। যে কারণে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের গরু রফতানির প্রস্তাব সম্প্রতি নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এখন দেশ গবাদি পশু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ফলে আমদানির প্রয়োজন নেই। ভারত থেকেও আর গরু আনা হবে না। তাতে দেশীয় গবাদি পশু খামার বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। কোরবানি করার মতো পর্যাপ্ত গরু ও ছাগল দেশে থাকায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে কেনাবেচা হয় সেদিকে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। শিগগিরই কোরবানি গরু, কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও কেনাবেচা নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে একটি বৈঠক করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর
© All rights reserved ©2021  Daily Andoloner Bazar
Theme Customized By Uttoron Host

You cannot copy content of this page