কৃষি প্রতিবেদক ॥ অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। করোনাকালীন খাদ্যসংকট মোকাবিলায় এবং গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে এ পুষ্টিবাগানের প্রতি রয়েছে জোর তাগিদ, রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা। এতে ব্যয় হচ্ছে ৪৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হবে। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পারিবারিক শাকসবজি ও পুষ্টিচাহিদা পূরণ হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর কৃষি মন্ত্রণালয়ের মোট বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। আর আজকে শুধুমাত্র বাড়ির আঙিনায় পুষ্টিবাগান স্থাপনে ৪৩৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এখানে প্রমাণ করে বর্তমান সরকার কৃষির প্রতি আন্তরিকতা রয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন’ প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠিন হতে হবে। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের প্রত্যেকটি টাকার হিসাব আমাদেরকে দিতে হবে। যে উদ্দেশ্যে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তার কতটুকু অর্জন হলো সেটি গাণিতিক ও বাস্তবসম্মত হিসাব ও মূল্যায়ন করতে হবে। নির্বাচিত কৃষকরা সবজি উৎপাদন করছেন কিনা, অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছে কিনা ও উৎপাদিত সবজি খেয়ে তাদের পুষ্টিস্তরের উন্নতি হচ্ছে কিনাÑ তার মূল্যায়ন রাখতে হবে। মন্ত্রী বলেন, এসব প্রকল্প গ্রহণের আগে গত বছর দেশব্যাপী ৪ হাজার ৪৩১টি ইউনিয়নে ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ৪৩৮ কোটি টাকার ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন’ প্রকল্পটি চলতি বছরের মার্চে একনেকে অনুমোদিত হয়। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি দেশের সব উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। সূত্র জানায়, দেশে প্রায় ২ কোটি ৫৩ লক্ষ বসতবাড়ি রয়েছে। এ সকল বসতবাড়ির অধিকাংশ জায়গা অব্যবহৃত ও পতিত পড়ে থাকে। কিছু বসতবাড়িতে অপরিকল্পিতভাবে শাকসবজি আবাদ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেকটি ইউনিয়ন এবং পৌরসভার বসতবাড়ির অব্যবহৃত জমিতে ১০০টি করে মোট ৪ লাখ ৮৮ হাজার সবজি, ফল ও মসলা জাতীয় ফসলের পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হবে। বসতবাড়ির স্যাঁতস্যাতে জমিতে কচুজাতীয় সবজির প্রদর্শনীও স্থাপন করা হবে। এছাড়া, মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য ১০০টি কমিউনিটি বেইজড ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন পিট স্থাপন করা হবে। উৎপাদিত ভার্মিকম্পোস্ট নিরাপদ ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হবে এবং গ্রামীণ কৃষক-কৃষাণিদের আয়বর্ধক কাজে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে। এছাড়া, কৃষক-কৃষাণিদের প্রশিক্ষণ ও কৃষক গ্র“প পর্যায়ে ক্ষুদ্র কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে, এ প্রকল্পের আওতায় সবজি সংরক্ষণের জন্য ক্ষুদ্র আকারে দেশজ পদ্ধতির বিদ্যুৎবিহীন ৬৪টি কুল চেম্বার স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে পারিবারিক পর্যায়ে নিরাপদ মানসম্মত শাকসবজি, মসলা এবং মৌসুমি ফল উৎপাদনে সহায়ক হবে। উৎপাদিত ফসল দ্বারা পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষক-কৃষাণির আয়বৃদ্ধি পাবে। কমিউনিটি বেইজড ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষক-কৃষাণিদের আয়বর্ধক কাজে গ্রামীণ পর্যায়ে কৃষকদের দক্ষ জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরে সহায়তা করবে। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সরাসরি কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখছেন। এ কারণে কৃষির ওপর বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, সরকার সবসময় কৃষকের প্রতি নজর রাখছে। এ করোনাকালীন সময় কৃষক যাতে ফসলের মূল্য পায় সে জন্য কৃষিমন্ত্রী সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আর অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছেন বলে জানান।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply