1. andolonerbazar@gmail.com : AndolonerBazar :

খালেদা জিয়া ক্ষমা চাইলে অবশ্যই দোষ স্বীকার করতে হবে : আইনমন্ত্রী

  • সর্বশেষ আপডেট : বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১

 

ঢাকা অফিস ॥ বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হলে রাষ্ট্রপতি অথবা সরকারের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল হক। তিনি বলেন, ক্ষমা চাইতে গেলে সেকশনের ৪০১ ধারায় অবশ্যই তাকে দোষ স্বীকার করতে হবে। যদি কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে মুক্ত করতে হয় সেটা একমাত্র আইনের মাধ্যমে মুক্ত করতে হবে। আরেকটি আইন আছে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। আর না হলে প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের কাছে সেকশন ৪০১ অনুযায়ী ক্ষমা চাইতে পারেন। ক্ষমা চাইলেও যদি তারা বিবেচনা করেন, তবে ক্ষমা করতে পারেন। এ ছাড়া ক্ষমা চাইতে গেলে অবশ্যই দোষ স্বীকার করতে হবে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে বাজেট পাসের প্রক্রিয়ার সময় বিরোধীদলের সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন ছাঁটাই প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে আইনমনন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে বিএনপির সংসসদ সদস্য হারুনুর রশীর ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবি জানান। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিভিন্ন শর্তে মুক্তি দেয়া হয়। শর্তগুলোর একটা হচ্ছে তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন। আরেকটি হচ্ছে তিনি দেশে থেকে চিকিৎসা নেবেন। এটাকে ৪০১ ধারায় দরখাস্ত হিসেবে তারা সাবমিট করে। এই শর্তে তার দ-াদেশ স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দান করি। তারা এটা গ্রহণ করেছে এবং গ্রহণ করে এটা কার্যকর করেছে। মাননীয় স্পিকার আপনি একজন দক্ষ আইনজীবী হিসেবে বুঝবেন- একটা দরখাস্তে যখন অ্যাক্টিভ হয়ে যায় তখন সেই দরখাস্ত কি পুনর্বিবেচনা করা যায়? ওনারাতো এই দুটি কথা বলে ওনাকে মুক্ত করে রেখেছেন। তারপর আবার এখন তারা বলছেন, তাকে বিদেশ পাঠাতে হবে। এটা কি এ রকম কথা? ওই দরখাস্ত তো শেষ। ওই দরখাস্তের ওপরে তো আর কেউ কিছু করতে পারবে না। আইনমন্ত্রী বলেন, ৪০১ ধারা সংক্রান্ত দরখাস্ত গৃহীত হয়েছে। এরপরে আর কিছু করা যায় না। আইনটা পড়েন। আইনের শাসনের মধ্যে যদি কোথাও থাকে যে আপনি আবার দরখাস্ত করতে পারবেন, আবার পুনর্বিবেচনা করতে পারবেন তাহলে আমি আর আইন পেশা করবো না। তিনি বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) এভারকেয়ার হাসপাতাল চিকিৎসা নিয়েছেন। ওনার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল। উনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাই চিকিৎসা পান নাই এ কথাটা বলতে পারেন না। হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে না, বাধাগ্রস্ত করি এমন নজিরও দেখাতে পারবেন না। তাহলে ওনারা চিকিৎসা পান না এ কথা বলেন কেন? নিরর্থক শুধু পলিটিক্যাল স্টান্টবাজি করলে তো হবে না। এজন্য এই পার্লামেন্টের বক্তব্য দিয়ে ওনাকে মুক্ত করা যাবে না।

এদিকে, ধর্ষণ মামলায় ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির চরিত্র নিয়ে ‘নেতিবাচক’ মন্তব্য করার বিধান আইন থেকে বাদ যাচ্ছে। এ ধরনের বিধান বাদ দেয়াসহ বিদ্যমান সাক্ষ্য আইন সংশোধন করে সংসদের আগামী অধিবেশনে তোলা হবে বলে জানান আইনমন্ত্রী। এর আগে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও গণফোরামের সদস্যরা ছাটাই প্রস্তাবেরও পর তাদের বক্তব্য দেন। এ সময় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানসহ একাধিক সংসদ সদস্য সাক্ষ্য আইনটিকে যুগোপযোগী করার প্রস্তাব তোলেন। এসময় আইনমন্ত্রী বলেন, সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ ধরা, এখানে রেপ কেসে (ধর্ষণ মামলা) ভিকটিমের চরিত্র নিয়ে কথা বলার একটা সাব সেকশন আছে। সেটাকেও পরিবর্তন করার জন্য আমি নির্দেশনা পেয়েছি। সেটাও পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা মনে হয় পূর্ণাঙ্গভাবে সেপ্টেম্বর মাসে যে সংসদ অধিবেশন হবে সেখানে আইন নিয়ে আসতে পারবো। সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-এর ১৫৫ (৪) ধারা অনুসারে কোনো ব্যক্তি যখন বলাৎকার বা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারী সাধারণভাবে ‘দুশ্চরিত্রা’। সাক্ষ্য আইনে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার যুক্ত করা হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, সাক্ষ্য আইনের কথা বলা হয়েছে। এখানে একটু বলে রাখি, অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট যুগোপযোগী করার জন্য কাজ চলছে। আমার মনে হয় আগামী সংসদে আমরা এটা আনতে পারবো। বিশেষ করে এটা হবে ভার্চুয়াল। করোনকালে ভার্চুয়াল আদালত চালুর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, করোনার কারণে গত বছর ২৫ মার্চ থেকে মে পর্যন্ত আদালত বন্ধ ছিল। যে কারণে অনেক মামলা জমে যায়। যার কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলা পরিচালনার বিধান হয়। এ কারণে এক লাখ ৩৭ হাজার ৩৩০টি মামলা নিষ্পত্তি সম্ভব হয়েছে। এই ভার্চুয়াল কোর্ট না হলে আজকে ৩৯ লাখ মামলার জায়গায় আমাদের ৪১ লাখ মামলা পেন্ডিং থাকার কথা শুনতে হতো। সাক্ষ্য আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাক্ষ্য আইনে ভার্চুয়াল ট্রায়াল করার কোনো সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী কাশিমপুর এবং কেরানীগঞ্জ জেলে আদালত যাতে ওখান থেকে ভার্চুয়ালি করতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন আইনের পরিবর্তন করে এই সাক্ষ্য আইনে পরিবর্তন করার কাজ করছি। প্রসঙ্গত, ধর্ষণের অভিযোগে সাধারণত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়। গত নভেম্বর মাসে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে সরকার। সেখানে ‘ধর্ষিতা’ শব্দটি বদলে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দ দুটি বসানো হয়। এ ছাড়া ধর্ষণের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা হয়। সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারা সংশোধনের বিষয়ে অধিকারকর্মীদের দাবি দীর্ঘদিনের।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর
© All rights reserved ©2021  Daily Andoloner Bazar
Site Customized By NewsTech.Com