খোকসা প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার খোকসার জানিপুর ও জয়ন্তীহাজরা ইউনিয়ন দুটি জুড়ে নির্বাচনী সহিংসতা থামছে না। প্রতিপক্ষের বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা পাল্টা হামলা ফসল তছরুপ নিত্যকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উভয় পক্ষের ভুক্তভোগীরা নিজেদের আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক বলে দাবি করছেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা ৯ ইউনিয়নের ৮টিতে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ফলে ৬টিতে নৌকা প্রতীকের ভরাডুবি হয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মীরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পরে। এক পর্যয়ে সংঘাত সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে দলটির স্থানীয় নেতা কর্মীরা।
ইউপি নির্বাচনের পর উপজেলা জয়ন্তীহাজরা এবং জানিপুর ইউনিয়নে সর্বাধিক হামলা পাল্টা হামলা ঘটনা ঘটে। জানিপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র আনারস প্রতীকের প্রার্থী মজিবর রহমান মজিদের কাছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হবিবর রহমান হবি পরাজিত হন। নির্বাচনের পর দিন সকাল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা হামলা জড়িয়ে পরে। এসব হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়। ধারাবাহিক হামলার জের ধরে গত ২২ এপ্রিল দিনের আলোয় বহরমপুরের কৃষক আব্দুল আজিজের প্রায় ১৮০টি বড় বড় কলার গাছ কেটে জমি দখল নিয়েছে হারুন অর রশিদ নামের এক বিজিবি সদস্য। এ ঘটনায় আজিজ থানায় মামলা করেন। সে রাতে পুলিশ গাছ কাটা মামলার দুই আসামীকে আটক করে। এর এক ঘন্টা পরেই কৃষক আজিজের বাড়িতে হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর করে প্রতিপক্ষের লোকেরা। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মামলা করার পর থেকে পুনঃ হামলার ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন।
জয়ন্তীহাজরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক পরাজিত হয়ে মাঠ ছাড়েন। এ ইউনিয়নে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শকিব খান টিপু। তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগের আর এক বিদ্রোহী প্রার্থী আরিফুল ইসলাম নয়ন। বিরোধ এসে দাঁড়ায় বিজয়ী আর নিকট পরাজিত দুই বিদ্রোহীর মধ্যে। নির্বাচন পরবর্তী দুই মাসে কমপক্ষে ১৩ বার হামলা পাল্টা হামলা ঘটনা ঘটেছে এ ইউনিয়নে। পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১৪ জন আহত হয়েছেন। টিপুর সমর্থক ২ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রাজ্জাক মেম্বরের বাড়িসহ ৫ বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা হয়েছে। এই ইউনিয়নে দুই পক্ষ থেকে থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে। যার অধিকাংশই আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক। গত সপ্তাহের উপজেলা সদরের কাছে মালিগ্রামে হামলার শিকার হয়েছেন জয়ন্তীহাজরা ইউনিয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফুল ইসলাম নয়ন। গুরুতর আহত হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এসব হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তাদের দাবি রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিযোগীতায় এসব সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হচ্ছে। তারা এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি করেন।
উপজেলার বহরমপুরের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আজিজ ও বাদশা বিশ্বাস জানান, শুধু নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধেই দিনের আলোয় তাদের কয়েকশ কলার গাছ কেটে দিয়েছে প্রতিপক্ষ। পুলিশ মামলার আসামী ধরায় গভীর রাতে তাদের বাড়িতে হামলা করেছে ওই প্রতিপক্ষ। পাকা ঘরের একাধিক জানালা ভেঙ্গেছে। তারা এ সব ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচারের দাবি করেন। বহরমপুরের কৃষকের বাড়িতে হামলায় অভিযুক্ত বিজিবি সদস্য হারুন অর-রশিদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তিনি বাড়িতে থেকেও সাংবাদিকের সাথে কথা বলেননি। তবে তার স্ত্রী জেসমিন দাবি করেন, তারা তাদের খরিদি জামি থেকে কলাগাছ কেটে আবার সেখানে নতুন করে গাছ লাগিয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধিন আহত জয়ন্তীহাজরা ইউনয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফুল ইসলাম নয়ন মুঠোফোনে জানান, তার নিকট প্রতিপক্ষ ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শকিব খান টিপু স্বদলবলে তার উপর হামলা করেন। তিনি মামলা করেছেন, আসামীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি করেন। জয়ন্তীহাজরা ইনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শকিব খান মুঠো ফোনে জানান, আরিফুল ইসলাম নয়ন ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা তার পরিষদের নবনির্বাচিত এক মেম্বরের বাড়িসহ তার লোকজনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৭ বার হামলা করেছে। মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে আরিফুল ইসলাম নয়নের উপর হামলা হয়েছে। উল্টো করে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য জনগণ মানববন্ধন করেছে।
জানিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজিদ বলেন, বহরমপুরে যা ঘটছে তা নিছকই জমি জায়গা নিয়ে। হামলাকারীরা তার দলের নয় বলে তিনি দাবি করেন। এ ছাড়া হামলার নেতৃত্বে থাকা হারুন অর রশিদ বিডিআরকে তিনি দেখেননি এবং চেনেন না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হবিবর রহমান জানান, বহরমপুরে হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা আওয়ামী লীগের লোক। নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে তাদের উপর হামলা হয়েছে। খোকসা থানা পুলিশের এসআই নৃপেন্দ্র নাথ দাস জানান, কৃষক আজিজের দায়ের করা একটি মামলার তদন্ত শুরু করেছেন। সোমবারেও তিনি সেই মামলার তদন্তে গিয়েছিলেন।
Leave a Reply