নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় মাছ চুরির অভিযোগে খুটিতে বেঁধে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার খোকসা ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে এঘটনা ঘটে। নিহত কৃষক জসীম শেখ (৩৫) ওই গ্রামের রওশন আলী শেখের ছেলে। অভিযুক্তরা হলেন, খোকসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বিশ্বাস, তার তিন ছেলে তানজির বিশ্বাস, তানভীর বিশ্বাস, জুমেজো বিশ্বাস এবং ভাতিজা সালাউদ্দিন। এঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও ভাতিজাকে আটক করেছে পুলিশ। এলাকাবাসী জানায়, মাছ চুরির অভিযোগে জসীমকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে পেটানো হচ্ছেÑএমন খবর পেয়ে তারা চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান। গিয়ে তারা দেখেন, জসিম মুমূর্ষু অবস্থায় উঠানে পড়ে আছে। সেখানে চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যানের তিন ছেলে, ভাতিজা, পুলিশ ও অনেক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এসময় জসীম শুধু পানি পান করার জন্য বারবার আকুতি জানাতে থাকেন। প্রতিবেশী এক নারী পানি পান করান এবং পুলিশ একটি ভ্যানযোগে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহতের স্ত্রী আছিয়া খাতুন বলেন, রাতে খেলা দেখা শেষে বাড়ি ফেরেন। এরপর ফজরের আযানের আগ মূহূর্তে খেচুরি খাওয়ার জন্য একটি ফোন আসে। ফোন পেয়ে তিনি বাড়ির বাইরে গিয়ে আর ফিরেনি। এরপর ভোরে শুনতে পান চেয়ারম্যান ও তার ছেলেরা খুঁটিতে বেঁধে পেটাচ্ছে। তাঁর স্বামীর কারও কোন ঝামেলা ছিল না। তবে মাঝে মাঝে খালে বিলে মাছ ধরতো কিন্তু চোর না। নিহতের ভাই আসলাম আলী শেখ বলেন, ভোর পাঁচটার দিকে স্থানীয় মেহেদী হাসান নামের এক ব্যক্তি তাঁকে ফোনে জানায় জসিমকে চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বিশ্বাসসহ তাঁর ছেলে ও ভাতিজারা বাড়িতে ধরে নিয়ে পেটাচ্ছে। চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান মারাত্মক আহত অবস্থায় উঠানে পড়ে আছে। এসময় পানির জন্য আকুতি জানালে পানি পান করানো হয়। সেসময় হাসপাতালে নেওয়া হলে হয়তো বাঁচানো যেতো।
একপর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার রাকিব হোসেন কাঁধে তুলে ভ্যানের ওপর নেয়। এবং দড়ি দিয়ে বেধে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চেয়ারম্যানের বাড়ির প্রতিবেশী জবেদা খাতুন বলেন, ‘সকালে শুনলাম ওই বাড়ি চোর ধরেছে। তারপর গিয়ে দেখি ওই ছেড়া (জসিম) আছারি বিছারি (মাটিতে গড়াগড়ি) করছে। মারাটারা দেখি নাই। খালি পানি পানি করছে। এরপর দুইবার পানি দিলাম, ও (জসিম) খালো (পান করল)।’ খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) প্রেমাংশ ঘোষ বলেন, অচেতন অবস্থায় সকাল ৬ টা ৩৫ মিনিটে একজন চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) জসিমকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেবার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহৃ ছিল। খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, মাছ চুরির সন্দেহে চেয়ারম্যান আইয়ুুবের বাড়িতে জসিমকে পেটানো হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান। এঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন আসামী হয়েছে। স্ত্রী জাহিদা খাতুন ও ভাতিজা সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। চেয়ারম্যানসহ তার ছেলে ও অনান্য ভাতিজারা পলাতক রয়েছে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply