কৃষি প্রতিবেদক ॥ গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু শীতকালীন সবজি। তবে এখন গাজর প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। গাজরের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণে আধিক্যতার কারণে গাজরকে বলা হয় সুপার ফুড। কাঁচা ও রান্না দুভাবেই খাওয়া যায় গাজর, তাই গাজরকে সবজি এবং ফল দুটিই বলা যায়। গাজর যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তেমনি ত্বকেও এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গাজরে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে।
গাজরের মধ্যে থাকা বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। চোখের অন্যান্য সমস্যা, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ইত্যাদির মতো সমস্যায় বাধা দেয়। সবজি হিসেবে গাজরের ব্যবহার ব্যাপক। গাজরের হালুয়া অনেকের কাছেই প্রিয়। সালাদ হিসেবে গাজর বেশ জনপ্রিয়। সামান্য লবণ মিশিয়ে এটি কাঁচাই খাওয়া যায়।
গাজরে রয়েছে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার। আর এই ফাইবারে থাকে পেপটিন নামক উপাদান- যা রক্তের কোলেস্টেরল হ্রাসে সহায়ক। বিশেষজ্ঞরা উলে¬খ করেছেন, প্রতিদিন এক কাপ করে গাজরের রস তিন সপ্তাহ খেলে সুফল পাওয়া যায়। গাজরের আলফা ক্যারোটিন বায়োফ্লাভোনয়েডস ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়ক, বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যানসার। তবে বিটা ক্যারোটিন ধূমপায়ীদের জন্য ক্ষতিকর। ভিটামিন এ-এর অন্যতম উৎস হলো গাজর। গাজর দাঁতের সুরক্ষা দেয়। দাঁত পরিষ্কারক হিসেবে যেমন কাজ করে, তেমনি দাঁতের গোড়ায় ক্যালকুলাস জমতেও বাধা দেয়। গাজর খেলে পেট ভরবে ঠিকই, আবার বেশি ক্যালরিও যোগ হবে না শরীরে। তাই ওজন কমাতে বেশি বেশি গাজর খেতে পারেন। শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় দ্রুত। গাজর খেলে ত্বকে পটাশিয়ামের অভাব দূর হবে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। গাজরের মধ্যে থাকা বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। চোখের অন্যান্য সমস্যা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ইত্যাদির মতো সমস্যার সমাধান করে গাজর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লাল, সাদা, হলদে নানা বর্ণের গাজর দেখা যায়। আমাদের দেশে জন্মে কমলা রঙের গাজর। এটা শীতকালীন সবজি। গাজর দেখতে যেমন সুন্দর ও আকর্ষণীয় তেমনি খেতেও সুস্বাদু। গাজর নিজে যেমন সুন্দর তেমনি মানুষের রঙ উজ্জ্বল করতেও এটি সহায়ক।
গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য গাজর খুব ভালো সবজি। গাজরের রসে শিশুর জন্ডিস হওয়ার ঝুঁকি কমে। গাজরের উপকারী উপাদানগুলো ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধে অংশ নেয়। এটি কৃমিনাশক হিসেবে পরিচিত। নিয়মিত গাজর খেলে পেটে কৃমি হওয়ার শঙ্কা কমবে। গাজরে ক্যারোটিনয়েড রঞ্জক পদার্থ রয়েছে। এ উপাদানটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। গাজরের মধ্যে ক্যারটিনয়েড অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। ক্যানসার প্রতিরোধে এবং রক্ত শুদ্ধ করতে সাহায্য করে এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এ ছাড়া বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে গাজরের জুস। গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে ৩৩ শতাংশ ভিটামিন এ, ৯ শতাংশ ভিটামিন ‘সি’ এবং ৫ শতাংশ ভিটামিন বি-৬ পাওয়া যায়।
হার্টকে সুস্থ রাখতে শারীরিকভাবে কর্মক্ষম রাখা ও পর্যাপ্ত ঘুমানো জরুরি। গাজর ডায়েটরি ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ থাকে। এই উপাদানগুলো ধমনির ওপর কোনো কিছুর আস্তরণ জমতে না দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। ?সুস্থ থাকে হার্ট। কোলেস্টেরল এবং ব¬াড সুগার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গাজরের জুস অনেক উপকারী। গাজরের মধ্যে থাকা পটাশিয়ামই এর মূল কারণ। গাজরে ক্যালোরি এবং সুগারের উপাদান খুবই কম। এ ছাড়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে গাজর।
গাজর মেমোরি লস বা স্মৃতিশক্তি হ্রাসের প্রবণতার গতিকে কমিয়ে দেয়। গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন সেন্ট্রাল নার্ভস সিসেটমে বিটা ক্যারোটিন এজিং প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেয়। হারভার্ড স্ট্যাডিতে উলে¬খ করা হয়েছে যদি কেউ দৈনিক ৫০ গ্রাম বিটা ক্যারোটিন আহার করে তবে মস্তিষ্ক ক্ষয় হ্রাস পায়। গাজর দেহের রক্তকে বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি গাজরের মাঝে থাকা ক্ষারধর্মী উপাদান এর অ¤¬তার ভারসাম্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। হঠাৎ কোনো কারণে হাত পা মচকে গেলে গাজর বেটে হালকা গরম করে প্রলেপ দিলে ২-৩ দিনের মধ্যে ব্যথা ও ফোলা কমে যাবে।
বয়সের ছাপ কমাতে গাজরের রস সাহায্য করে। গাজর বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ- যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং কোষের ক্ষয় রোধে সহায়ক। ফলে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়াকে রোধ করে। মহিলাদের মাসিক সমস্যায় অসময়ে স্রাব হলে ৭৫০ গ্রাম গাজর প্রতিদিন ২-৩ বার পানিসহ খেতে হবে। এভাবে ২-৩ দিন খেলে ঋতুস্রাব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। গাজরের রস লিভারের চর্বি ও পিত্ত কমাতে সাহায্য করে। গাজরের রস ত্বকের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বককে সুরক্ষা করে। বয়সজনিত যে কোনো ব্যথা-বেদনা ও শরীরের জ্বালাপোড়া কমাতে গাজরের রস উপকারী। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে এই সবজি। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। এই সবজির আলফা ক্যারোটিনসহ আরও কিছু উপাদান হৃদরোগ ও হৃৎপিন্ডের সুরক্ষায় ভালো কাজ করে। গাজরের উপকারী উপাদানগুলো ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ছাড়া শ্বাসনালির প্রদাহ দূর করে দেয়। গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য গাজর খুব ভালো সবজি। গাজরের রসে শিশুর জন্ডিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়। যারা দীর্ঘদিন পেটের সমস্যায় ভুগছেন, এবার গাজরে সমাধান খুঁজতে পারেন, এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর। এটি কৃমিনাশক হিসেবে পরিচিত। নিয়মিত গাজর খেলে পেটে কৃমি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। গাজর ও গাজরের পাতায় রয়েছে পিটুইহারি গ¬্যান্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির উপাদান। যা সেক্স হরমোন বাড়িয়ে তোলে। তাই অস্বাভাবিক শুক্রক্ষয় হয়ে থাকলে কিছুদিন গাজরের হালুয়া খেলে উপকার পাওয়া যায়।
লেখক ঃ ইমরান সিদ্দিকী
You cannot copy content of this page
Leave a Reply