ঢাকা অফিস ॥ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের জন্যও ‘পরীক্ষা’ হিসেবে দেখছিলেন বিশ্লেষকরা; বড় কোনো গ-গোল ছাড়া সেই পরীক্ষা শেষ করতে পেরে কমিশনের কর্মকর্তাদের চোখেমুখে এখন স্বস্তি। বৃহস্পতিবার দিনভর ভোট শেষে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়া নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের কথায় সেই স্বস্তিরই প্রকাশ ঘটল। তিনি বললেন, “আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। জনগণ ও ভোটাররা সন্তুষ্ট। প্রার্থীরা সন্তুষ্ট। আপনাদের প্রতিনিধিরা (সাংবাদিক) সন্তুষ্ট। গণমাধ্যমেই তারা এ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।” এদিন সকাল ৮টায় দেশের সবচেয়ে বড় এ সিটি করপোরেশনের ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বড় কোনো গোলযোগ ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শেষ হয় বিকাল ৪টায়। জাতীয় নির্বাচনের আট মাস বাকি থাকতে গাজীপুরের এ ভোটের দিকে ছিল সবার নজর। শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট করতে পারা নির্বাচন কমিশনের জন্যও চ্যালেঞ্জ ছিল। সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সকাল থেকেই ঢাকার নির্বাচন ভবনে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ভোটের পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন। পরে বিকাল সাড়ে ৫টায় প্রতিক্রিয়া জানাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চার নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, “গাজীপুরের ভোট মিডিয়াসহ সবাই দেখেছেন; সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষেভাবে ভোট হয়েছে। প্রার্থী সবাই সন্তুষ্ট, যেই ফলাফলই হোক, সবাই মেনে নেবে বলেছেন।” ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী আজমত উল্লা খান শুরু থেকেই ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে এসেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি এবং জায়েদা খাতুন তাদের এজেন্টদের ‘ভয় দেখানোর’ অভিযোগ করলেও বড় কোনো অনিয়মের অভিযোগ কোথাও আসেনি। কিছু কেন্দ্রে যান্ত্রিক জটিলতায় ধীর গতিতে দীর্ঘ লাইনে থাকা ভোটারদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। তবে ইভিএম নিয়ে বড় কোনো দুর্বিপাকে পড়তে হয়নি ইসিকে। আলমগীর বলেন, “নির্বাচন কমিশনের আমরা দেখেছি; রিটার্নিং অফিসার, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষকসহ সবার কাছ থেকে একই তথ্য পেয়েছি- গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধভাবে হয়েছে। ভোটে যারা অংশ নিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা, বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীরা বলেছেন, নির্বাচনী পরিবেশ ও ব্যবস্থায় তারা অত্যন্ত সন্তুষ্ট।” প্রায় ১২ লাখ ভোটারের এ নির্বাচনে দিনভর ভোটার উপস্থিতি ছিল ভালো, বিকালের দিকেও অনেককে কেন্দ্রের চৌহদ্দীর মধ্যে দেখা যায়। প্রথম ছয় ঘণ্টায় প্রায় ৫০ শতাংশের মত ভোট পড়েছে বলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ধারণা দিয়েছিল। ভোট শেষে তা কত হয়েছে, সে তথ্য এখনও জানায়নি নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, “ভোট পড়ার হার এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। আমরা আশা করছি, ৫০ শতাংশের নিচে হবে না। ভোট শেষে সব ফলাফল হওয়ার পর সঠিক ভোটের হার জানা যাবে।” ইসির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৩ সালে গাজীপুরের নির্বাচনে ৬৮ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৫৮ শতাংশ ভোট পড়েছিল। মো. আলমগীর বলেন, ভোট দিতে লাইনে অপেক্ষা, পরে এসে আগে ভোট দেওয়া এবং দুয়েকটি কেন্দ্রে এজেন্ট প্রভাবিত করার চেষ্টার ঘটনা কমিশনের নজরে এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে কমিশন সেসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে। দুটি কেন্দ্রে এজেন্টরা ভোটারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল, তাদের আটক করা হয়েছে। আমাদের নজরে অন্যান্য কেন্দ্রে অনিয়মের তথ্য আসেনি। যেটা নজরে এসেছে সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছি। চার হাজারের বেশি সিসি ক্যামেরা। একবারে সব দেখা সম্ভব না। সব অপরাধীকে একসঙ্গে হয়ত ধরা যাবে না, যাকে দেখা যাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে। তবে যে উদ্যোগটা, যে সিসি ক্যামেরার জন্য অনেকেই অনিয়ম করতে ভয় পেয়েছে, এটাই আমাদের সফলতা।” নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা ও মো. আনিছুর রহমানও ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply