বিশেষ প্রতিবেদক ॥ কুষ্টিয়ার শহরের চরমিলপাড়া এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী মাসুদ খান(৪২)নামে এক ব্যক্তির ভাসমান অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৫ মে) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মরদেহ কুমারখালীর মীর মশাররফ সেতুর নিচে(কয়া এলাকায়) গড়াই নদীতে ভাসতে দেখে স্থানীয়রা ৯৯৯ ফোন দিলে নৌ-পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করার পর দাফন সম্পন্ন করেছে নিহতের স্বজনরা। তিনি ঐ এলাকার মৃত হোসেন খানের ছেলে। এদিকে মাসুদ খানের রহস্যজনক মৃত্যুকে পুঁজি করে প্র্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহতের স্ত্রী হাসিনা খাতুন(৩৫) বাদি হয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে মাসুদকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এর আগে র্যাব মাসুদ এবং স্ত্রী হাসিনাকে মাদকসহ গ্রেফতারও করেছিলো। এছাড়া নিহতের ছেলে হাসিব খান র্যাব-এর সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। এলাকাবাসী জানায়, মাসুদ একজন ট্রাক হেলপার ছিলো, প্রায় ৭ বছর পূর্বে একটা দুর্ঘটনায় তার কোমরের হাড্ডিসহ পা ভেঙ্গে যায়। তার দেহের মধ্যে এখনও রড ঢোকানো আছে। সে তো পঙ্গু, বাড়িতে বসে থাকে, তার কোন শত্রু নেই। স্ত্রী বাসা বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে, ছেলে এলাকায় নিজেকে সাংবাদিক ও র্যাব-পুলিশের সোর্স পরিচয় দেয়। পরিবারের দাবি বুধবার (৪ মে) ভোর সাড়ে ৪টা থেকে মাসুদ নিখোঁজ ছিলেন। তবে কিভাবে নিখোঁজ হন এ ব্যাপারে পরিবারের কাছ থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, মাসুদ কিভাবে মারা গেছে তা রহস্যজনক। নিহতের স্ত্রী এজাহারে উল্লেখ করেন,ভোরবেলা অস্ত্রের মুখে জিম্মিকরে প্রতিপক্ষরা মাসুদকে তুলে নিয়ে যায়। লাশ উদ্ধারের সময়েও পুলিশের কাছে মারা যাওয়ার কোন কারণ জানাতে পারেনি নিহতের পরিবার। কিন্তু এই রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে মাসুদের পরিবার কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কয়েকজনের নাম দিয়ে কুমারখালি থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন। পরে কুমারখালী থানা পুলিশ ঘটনার কোন প্রত্যক্ষ কারণ খুঁজে না পাওয়ায় নাম দেওয়া এজাহার বাদ দিয়ে অজ্ঞাতনামা মামলা করতে বললে পরবর্তীতে আর কোন এজাহার জমা দেয়নি নিহতের পরিবার। নিহতের ছেলে হাসিবের দাবি, সে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘বর্তমান কথা’ নামে একটা পত্রিকায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রতিনিধি। এলাকার মাদকসহ নানা অপরাধের তথ্য আইন শৃংখলা বাহিনীকে তিনি অবগত করেন। তিনি জানান, এর আগে আমি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছি। কুষ্টিয়া পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা লাভলু বলেন, আপনারা তো সবাই জানেন আমার এলাকা অত্যন্ত একটা নি¤œমুখী এলাকা, এখানে মাদকসহ এমন কোন ক্রাইম নেই যা হয়না। এসবের বিরুদ্ধে আমি সব সময় সোচ্চার। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রতিহিংসা থেকে মাসুদের পরিবারকে দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি চাই এই হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্তসহ ন্যায় বিচার হোক। কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, গত ৫ মে বিকেলে উপজেলার কয়া এলাকার গড়াই নদী থেকে মাসুদের অর্ধগলিত ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ-পুলিশ। পরে লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এঘটনায় নিহতের স্ত্রী হাসিনা খাতুন কয়েকজনের নাম উল্লেখসহ হত্যার অভিযোগে একটা এজাহার নিয়ে এসেছিলো। আমি বলেছি, এটা হত্যা না আত্মহত্যা বুঝলেন কি করে ? পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টসহ কাগজপত্র নিয়ে আসেন তখন মামলা নিবো। কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) সাব্বিরুল আলম জানান, হাসিব নামের কেউ তার জীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয় জানিয়ে কোন লিখিত অভিযোগও আমার নজরে আসে নাই। তবে এবিষয়ে র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ও স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খানের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান, হাসিব টুকটাক দুই একটা সোর্সিংয়ের কাজ করেছে এটা ঠিক। তবে সেকারণে ওর বাবাকে মেরে ফেলেছে প্রতিপক্ষ আমি এটা মনে করিনা। প্রাথমিকভাবে আমার ধারণা যে মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে হাসিবের বাবা মাসুদকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এর আগে র্যাব মাসুদ এবং স্ত্রী হাসিনাকে মাদকসহ গ্রেফতারও করেছিলো। তবে চোর হোক আর ডাকাত হোক তাকে তো আর হত্যা করার কোন আইন নাই। আমরাও এই বিষয়টি দেখছি।
Leave a Reply