বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সোমবার দৈনিক আন্দোলনের বাজার ও জাতীয় পত্রিকা প্রথম আলো’র কুষ্টিয়ার খবরের শিরোনাম ছিল ‘কুষ্টিয়ায় করোনা ওয়ার্ডে চাহিদা বাড়ছে অক্সিজেনের’। তাতে বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত ভর্তি থাকা অর্ধেক রোগীদের প্রতিদিন অক্সিজেন সরবরাহ করতে হতে হচ্ছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তিনটি ওয়ার্ডে করোনা রোগীতে ঠাসা। সেখানে ১০০ বেডের বিপরীতে বর্তমানে ১১৭ ভর্তি আছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপোর্ট আছে দশজনের জন্য। এছাড়া ৩৪৭টি ছোট বড় সিলিন্ডার আছে।
কিন্তু রোগীদের চাপে হাসপাতালে থাকা সরকারি অক্সিজেন যেন কোনভাবেই চাহিদা মেটাতে পারছিল না। গত রোববার রাতে অক্সিজেনের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়। এমন খবর জানার পরপরই কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ দ্রুত জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও ব্যবসায়ী নেতা অজয় সুরেকাকে নির্দেশ দেন। এক ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেনসহ ১০০ সিলিন্ডার সরবরাহের। দ্রুত শহরের মনির অক্সিজেন ডিপোতে গিয়ে সিলিন্ডার নিয়ে হাসপাতালে পৌছে দেন।
আওয়ামী লীগ নেতা অজয় সুরেকা বলেন, ‘গত ঈদুল ফিতরের আগে সাংসদ হানিফ জেলার ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। করোনাকালে অসহায়দের সহায়তার জন্য তিনি করোনা তহবিল গঠন করেন। সেখানে যে পরিমাণ টাকা উঠে সেখান থেকে কিছু টাকা রেখেছিলেন। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন ভবিষ্যতে অক্সিজেন কেনা লাগতে পারে। এবং সেটাই সত্য হল। এই ১০০ সিলিন্ডার সোমবার রাতের মধ্যেই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে পৌছে দেওয়া হয়েছে।
এই নেতা বলেন, আরও খুশির খবর হল মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে আরও ১০০ সিলিন্ডার (বড় সাইজ) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই সিলিন্ডারগুলোও সাংসদ হানিফের অনুরোধে মনির অক্সিজেন ডিপোর মালিক মনিরুল ইসলাম কোন টাকা ছাড়াই সরবরাহ করছেন।
যোগাযোগ করা হলে মনিরুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শহরের মোল্লাতেঘরিয়া এলাকায় অক্সিজেন ডিপোটা দেন। এবং সেটা সাংসদ হানিফের সহযোগিতায় করতে পেরেছেন। চীন ও ভারত থেকে তিনি সব কিছু সরবরাহ করছেন। বর্তমানে স্পার্ক কোম্পনীর সাথে চুক্তি করে রিফিল করছেন। তিনদিন আগে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেন ঘাটতি দেখার বিষয়টি জানার পর নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারিনি। তাই সাংসদ হানিফের নির্দেশে নিজের যতটুকু আছে তার সবটুকু উজাড় করে দেবার চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে আরও দেবো। তিনি সিলিন্ডারের কোন দাম নিচ্ছেন না। অক্সিজেন রিফিল করতে নামমাত্র একটা দাম নিচ্ছেন যা খুবই সামান্য। এর একটা সিলিন্ডার দিয়ে একজন রোগীকে অন্তত পাচদিন অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব।
রোগীদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ: এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা অজয় সুরেকা করোনা ওয়ার্ডে রোগীদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছেন। কেননা ভর্তি রোগীদের কোন স্বজনদের নিরাপত্তার স্বার্থে হাসপাতালে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সেখানে জেলা ছাত্রলীগের কর্মিরা স্বেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে সেখানে ২৫টি পানির জার সরবরাহ শুরু করেছেন। রোগীদের বিছানায় পানি পৌছে দিতে ছাত্রলীগের কর্মিরা কাজ করবে। রোগী ভর্তি হার না কমা পর্যন্ত এ সেবা অব্যহত রাখা হবে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন,‘করোনার এই মূহুর্তে সাংসদ হানিফ ও আওয়ামী লীগ নেতা অজয় সুরেকা যে মহতি কাজ করছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। চিকিৎসক হিসাবে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র ও হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অনেক জেলায় অক্সিজেন সংকটে রোগী মারা যাচ্ছে। এটা যাতে কুষ্টিয়ায় না হয় সেজন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা খুবই ভালো। যার যেটুকু সম্ভব জেলার বিত্তবানেরা এগিয়ে আসলে করোনা নিয়ন্ত্রনে আনা যাবে।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংসদ মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন,‘ জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে দশবার করে হলেও জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, চিকিৎসক সবার সাথে কথা হয়। তাদের প্রয়োজনের কথা শোনা হয়। এবং সেটা পুরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। কুষ্টিয়াতে প্রতি মাসেই দুই থেকে তিনবার যাওয়া হয়। গেলেই হাসপাতালে যায়। নিজে হাসপাতাল চিত্র দেখে সব কিছু করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে আরও করবো।’
You cannot copy content of this page
Leave a Reply