কৃষি প্রতিবেদক ॥ বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। ইংরেজি ‘জ্যাকফ্রুট’ নামটি অবশ্য এসেছে পর্তুগিজ শব্দ ‘জাকা’ থেকে। এই কাঁঠালের রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। এজন্য কাঁঠালকে সুপারফুড বলা হয়। সুপরিচিত, সুস্বাদু, রসালো ও অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। কাঁঠাল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ফল। এ উপমহাদেশে কাঁঠালের ইতিহাস প্রায় ৫ হাজার বছরের পুরনো। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে প্রচুর কাঁঠাল হয়। পূর্ব আফ্রিকার উগান্ডা, তানজানিয়া, সমগ্র ব্রাজিল ও ক্যারিবীয় দীপপুঞ্জের জ্যামাইকাতে কাঁঠাল পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের সর্বত্রই কাঁঠাল হয়। সাধারণত লালচে মাটি ও উঁচু এলাকায় এটি বেশি দেখা যায়। তবে মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং পার্বত্য এলাকায় সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৭৬ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হচ্ছে এবং মোট উৎপাদন ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৯ টন। বিশ্বে কাঁঠাল উৎপাদনে শীর্ষে ভারত, এরপর দ্বিতীয়স্থানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের গাজীপুর, ভালুকা ও সাভার কাঁঠালের জন্য বিশেষ পরিচিত। কাঁঠাল বিভিন্নভাবে আমাদের উপকারে আসে, রোগপ্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও খাদ্য হজমে সাহায্য করে। কাঁঠাল শরীরের ক্ষয় প্রতিরোধ করে, বার্ধক্য নিরোধক হিসেবে কাজ করে ও চামড়ায় বলিরেখা তৈরি হতে দেয় না। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে হার্ট ভালো থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, হার্টঅ্যাটাক ও স্ট্রোক থেকে অনেকটা নিরাপদ থাকা যায়।
কাঁচা কাঁঠালের তরকারি খেতে খুব মজার। কাঁচা কাঁঠাল কেটে তার সঙ্গে প্রয়োজনমত নারিকেলের রস, মশলা ও চিংড়ি মাছসহ রান্না করলে সবাই মিলে পেটপুরে, চেটেপুটে খাওয়া যায়। মানুষের দেহে যেসব পুষ্টির প্রয়োজন প্রায় সবই আছে কাঁঠালের মধ্যে। এক সময় বাঙালির পুষ্টির অভাব পূরণ করত এই কাঁঠাল। এখনো বেশির ভাগ মানুষ পুষ্টির জন্য কাঁঠাল খেয়ে থাকেন। তবে এক শ্রেণির মানুষ কাঁঠাল দেখলে নাক ছিটকান। তারা মনে করেন কাঁঠাল গরিবের খাদ্য। তা কিন্তু নয়, কাঁঠাল কিন্তু পুষ্টির রাজা। এর বিচিতে রয়েছে নানা গুণ-যা মানব দেহের জন্য উপকারী। পুষ্টিবিদরা বলছেন, কাঁঠাল পুষ্টিগুণে ভরপুর। কাঁঠালে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি, বি-১, বি-২, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা রকমের পুষ্টি ও খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। এই সব উপাদান আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ করে কাঁঠাল। কাঁঠাল পুষ্টি সমৃদ্ধ। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা নানা ভিটামিন থাকায় তা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী। কাঁঠালে আছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এছাড়াও আমাদের সর্দি-কাশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ সামান্য। এই ফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কম। কাঁঠাল পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। কাঁঠালে প্রচুর ভিটামিন-এ আছে- যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-সি। প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে ভিটামিন-সি তৈরি হয় না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে এই ভিটামিন-সি। কাঁঠালে আছে ফাইটোনিউট্রিন্টেস- যা আলসার, ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। টেনশন এবং নার্ভাসনেস কমাতে কাঁঠাল বেশ কার্যকরী। বদহজম রোধ করে কাঁঠাল। এই ফল আঁশালো হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে। চিকিৎসা শাস্ত্রের মতে প্রতিদিন ২০০ গ্রাম তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশুর সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়। গর্ভবতী মহিলারা কাঁঠাল খেলে তার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে এবং গর্ভস্থসন্তানের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়। দুগ্ধদানকারী মা তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে ভিটামিন বি-১ ও ভিটামিন বি-১২ এর ভালো উৎস। এ ছাড়া আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, থায়ামিন, নায়াসিন, লিগন্যান, আইসোফ্ল্যাভোন এবং স্যাপোনিনের মতো ফাইটো কেমিক্যালস- যা মানব দেহের জন্য উপকারী। কাঁঠালের বিচিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো ক্যানসার প্রতিরোধী এবং বার্ধক্যের প্রভাব সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।
লেখক ঃ ইমরান সিদ্দিকী
Leave a Reply