জীবননগর প্রতিনিধি ॥ রাত হলেই ট্রাক্টরের উচ্চ শব্দে কেঁপে ওঠে ভৈরব নদের পাড়। জনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষ ট্রাক্টরের উচ্চ শব্দে ঘুমাতে না পেরে এক প্রকার অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। শুধু এক বা দু’দিনের জন্য না, প্রতিনিয়ত জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের ভৈরব নদের উভয় পাশে রাতের আঁধারে এক্সিভেটর দিয়ে অবৈধভাবে মাটি কাটার হিড়িক পড়ে। রাত ১০টা থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত ১৪-১৫টি ট্রাক্টরযোগে অবৈধভাবে কাটা ওই মাটি জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন ইটের ভাটায় বিক্রি করে দেওয়া হয়। জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ৪১ কিলোমিটার ভৈরব নদ। প্রতিদিন রাতেই উপজেলার কোথাও না কোথাও ভৈরব নদের মাটি প্রভাবশালীরা বিক্রি করে থাকেন। সম্প্রতি জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া, বাঁকা এবং মনোহরপুর ইউনিয়নের মাটি খেকোদের দৌরাত্ম চরম আকার ধারণ করেছে। এই মাটি বিক্রির পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ রাত থেকে জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের ভৈরব নদের পাড়ের মাটি অবৈধভাবে কেটে ইটভাটায় বিক্রি শুরু করেছে ওই মহলটি। রাত ১০টা বাজার পরই স্থানীয় মা-বাবা ইটভাটার নিজস্ব এস্কিভেটর দিয়ে মাটি কেটে ১০-১২ টি ট্রাক্টরযোগে মাটি ভাটায় নিচ্ছে। গত ১১ মার্চ রাতে ট্রাক্টর যাতায়াতের জন্য মনোহরপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রশিদের দেড় বিঘা কৃষি জমি নষ্ট করে রাস্তা করা হয়েছে। ওই রাতেই জমির মালিকের সহদর মো. হাফিজুর রহমান বেল্টু ট্রাক্টর চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করেন। তাতে কোনো ফল না পেয়ে অবশেষে তিনি জীবননগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী মো. হাফিজুর রহমান বেল্টু জানান, ফসলি জমি ক্ষতি করে মাটি পাচার চক্রের সদস্যদের বাঁধা দিলেও তারা কোন কথাই শোনেননি। পরে মাটি বহনকারী ট্রাক্টরের এবং মা-বাবা ইটভাটার স্বত্বাধিকারী মো. শাজাহানকে মুঠোফোনে মাটি কাটা বন্ধের জন্য অনুরোধ করলে তিনি বলেন, আমার সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই। মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খাঁন ও তার আপন ভায়রাভাই ফজলুর রহমানের সাথে কথা বলেন। আমি তাদের কথামতো মাটি কাটছি। অভিযুক্ত মনোহরপুর গ্রামের ফজলুর রহমান জানান, ইট ভাটার মালিক আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছে তা ঠিক না। আমি শুধু একদিন মাটি কেটে বিক্রি করেছি। মা-বাবা ইট ভাটার স্বত্বাধিকারী মো. শাজাহান জানান, আমি ইট ভাটার জন্য মাটি কিনে থাকি। মাটি কোথা থেকে কে দিল সেটা আমার জানার বিষয় না। মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খাঁন বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। আগামী ইউপি নির্বাচনে আমার জনসমর্থনে ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষরা এমন অভিযোগ তুলছে। তিনি আরও বলেন, আমার ভাইরাভাই ফজলুর রহমান কয়েকদিন আগে ভৈরব নদের পাড়ে তার নিজের জমি থেকে মাটি কাটছিল। কিন্তু ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হওয়ায় আমি তাকে মাটি না কাটার জন্য অনুরোধ করেছি। জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম জানান, ভৈরব নদ থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে থাকে তাহলে তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply