মেহেরপুর প্রতিনিধি ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী স্মরণে মুজিব নগরে গ্রামীণ কৃষকদের সমন্বয়ে মুজিব জন্মোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প ও কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প দিনব্যাপি কৃষক সমাবেশ ও তিন দিন ব্যাপি কৃষি মেলার আয়োজন করে। গতকাল শনিবার দুপুরে মেহেরপুরের ঐতিহাসিক মুজিব নগর আ¤্রকাননে এ কৃষক সমাবেশ ও মেলার শুভ উদ্বোধন করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন এমপি। কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ হোসেন বলেন, বর্তমানে কৃষকদের জীবনমান অনেক উন্নয়ন হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার প্রতিবছর কৃষকদের জন্য অনেক ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষকদের বীজ সার থেকে শুরু করে একেবারে গ্রাম পর্যায়ে কৃষি সেবা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বর্তমান সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার, আধুনিক যন্ত্রপাতি দিচ্ছে, কৃষিখাতে আধুনিকায়নে বর্তমান সরকারের বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, কৃষিকে বানিজ্যিক কৃষিতে রুপান্তরিত করতে সরকার ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো কৃষকদের বাঁচিয়ে দেশ সমৃদ্ধ করা। তারই স্বপ্ন পূরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষির উপরে গুরুত্ব দিয়ে কৃষক যাতে ন্যায্য মুল্য পায় সেদিকে জোর দিয়েছেন। আগামীর কৃষি হবে আরো সমৃদ্ধ। টেকসই কৃষি অগ্রযাত্রার মাধ্যমে কৃষিতে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। কৃষক সমাবেশের শুরুতেই প্রধান আলোচক কৃষি মন্ত্রণালয়ের এপিএ এক্সপার্ট পুলের সদস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোঃ হামিদুর রহমান বলেন, একটা সময় এই জনপদে দূর্ভিক্ষ একটি নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় ছিলো যার অন্যতম কারণ ছিলো খাদ্যের প্রধান যোগান দাতা গ্রামীণ কৃষকদের প্রতি এই দেশের ততকালীন কলোনিয়াল শাসক গোষ্ঠীর অবহেলা ও নিপিড়ন মুলক আচরণ। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম বিষয়টি উপলব্ধি করে এই দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা হাতে নেন। তিনি নিজেও দেশের কৃষক সমাজকে প্রাপ্য সম্মানের জন্য কৈশোর জীবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন লড়াই সংগ্রাম করেছেন। তাই সেই গ্রামীণ কৃষকদের দ্বারা সেই মহান নেতার জন্মোৎসব আয়োজন একটা খুবই যুক্তিযুক্ত ও আবেগ তাড়িত বিষয় এবং এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। তিনি আরো বলেন, কৃষি অত্যন্ত প্রাচীন পেশা। আমাদের বাংলাদেশ এক সময় কৃষিতে পিছিয়ে ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন কৃষকদের বন্ধু। তিনিই ছিলেন আধুনিক কৃষির সূচনাকারী। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় এক ইঞ্চিও জমি খালি থাকবে না এই নির্দেশনা কে বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করছে কৃষি বিভাগ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মেহেদি মাসুদ বলেন, “বর্তমান সরকারের সময়ে আমাদের দেশে রেকর্ড পরিমান ফল উৎপাদন হয়েছে। একসময় পেয়ারা বাংলাদেশের আমদানী করা হতো কিন্তু এবছর পেয়ারা উৎপাদন দেশেই আশানুরুপ হয়েছে।” কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মকলেছুর রহমান বলেন, “নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কন্দ জাতীয় ফসলের ভুমিকা অপরিসিম। সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে কন্দ জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। যা থেকে কৃষকরা পুষ্টি ও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, “যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি খোরপোশ কৃষিকে বানিজ্যিক কৃষিতে রুপান্তর করা হবে। উচ্চমুল্যের ফসল চাষের মাধ্যমে কৃষিকে আরো আধুনিক করা হবে। সেই সাথে নিরাপদ ফসল উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কৃষকদের ন্যায্য মুল্য প্রাপ্তিতে ভুমিকা রাখবে।” অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে আরো বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এর মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বাবুল চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ। মুজিব জন্মোৎসবকে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে। তিনদিন ব্যাপি এ কৃষি মেলায় ১৩টি স্টল স্থান পেয়েছে। আগামী ২০ মার্চ এ মেলার সমাপনী হবে। এর আগে মুজিবনগর হেলিপ্যাড মাঠে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে শস্য গম কর্তনের উদ্বোধনে করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন এমপিসহ অতিথিরা।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply