ক্রীড়া প্রতিবেদক \ দিনেশ চান্দিমালের চোখে রঙিন পোশাকে এখনও শ্রীলঙ্কার সেরা অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা। হুট করে থিসারার অবসর তিনি মানতেই পারছেন না। যেমন বিশ্বাস করতে পারছেন না শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœও। থিসারার বিদায়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়ার ঝড় বয়ে যাচ্ছে লঙ্কান ক্রিকেটে। মাত্র ৩২ বছর বয়সেই সোমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন থিসারা। টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি বছর চারেক আগেই। তবে সীমিত ওভারে যথেষ্টই কার্যকর তিনি। খেলেছেন তিনি শ্রীলঙ্কার সবশেষ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। চান্দিমালের মতে অবশ্য শুধু কার্যকর নন, থিসারাই এখনও সেরা। দুজনের একটি ছবি দিয়ে টুইটারে এই ব্যাটসম্যান জানান তার প্রতিক্রিয়া। “ তোমার অবসরের খবরে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি। ঝড় আসবে-যাবে, তুমি আরেকটু ধৈর্য ধরতে পারতে! এখনও সীমিত ওভারে শ্রীলঙ্কার সেরা অলরাউন্ডার। যাই হোক, তোমার সঙ্গে খেলতে পারা ছিল দারুণ, পান্ডা! তোমার ভবিষ্যত পথচলার জন্য শুভকামনা।” লঙ্কান সংবাদমাধ্যমের খবর, এই মাসের বাংলাদেশ সফরে ওয়ানডে দলে তরুণদের সুযোগ দিতে থিসারাসহ আরও কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারকে বাইরে রাখার কথা জানার পরই এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ‘ঝড়’ বলতে চান্দিমাল হয়তো ইঙ্গিত করেছেন সেদিকেই। সতীর্থদের কাছে থিসারার আদুরে নাম ‘পান্ডা।’ টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক করুনারতেœ টুইটারে ‘ধন্যবাদ পান্ডা’ লিখে জানান তার ভাবনা। “ বিশ্বাস করা কঠিন যে তুমি মাঠ ছেড়ে যাচ্ছো। বছরের পর বছর ধরে তোমার নিবেদনের জন্য ধন্যবাদ, যা আমাদের দারুণ বিনোদন দিয়েছে। আশা করি, তোমার সামনের সময় উপভোগ্য হবে। ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা, পান্ডা!” কিছুদিন আগেই অবসরে যাওয়া উপুল থারাঙ্গার প্রতিক্রিয়াও ছিল প্রায় একই। “ সাদা বলের ক্রিকেটে থিসারা ছিল দুর্দান্ত এক ক্রিকেটার, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের জন্য যে দারুণ করেছে। তোমার অবদনের জন্য কৃতজ্ঞতা। তোমার অভাব অনুভূত হবে।” বয়সভিত্তিক দল থেকে জাতীয় দল পর্যন্ত থিসারার সতীর্থ অলরাউন্ডার দিলশান মুনাবিরা যেন মানতেই পারছেন না এই অবসর। “ ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তোমার আরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে। অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত এত এত স্মৃতি আমাদেরৃ মাঠে তুমি সবসময় সেরাটাই দিয়েছো। তোমার সামনের সময় সুন্দর হোক।” শ্রীলঙ্কার স্কুল ক্রিকেটে ঝড় তোলার পর দুটি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে অনেক সম্ভাবনা নিয়ে ২০০৯ সালে জাতীয় দলে আসেন থিসারা। ক্যারিয়ার শেষের পরিসংখ্যান বলছে, তার সম্ভাবনার অনেকটুকুই পূর্ণতা পায়নি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। বড় একটি বাধা ছিল চোট। ফিটনেস সমস্যা ভুগিয়েছে তাতে অনেক। অনেক সময় ধারাবাহিকতাও ছিল না প্রত্যাশিত। টেস্ট খেলতে পেরেছেন কেবল ৬টি। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টেও ৪ উইকেট নেন, খেলেন ৭৫ রানের ইনিংস। তবু উপেক্ষিত থাকার পর এই সংস্করণ ছেড়ে দেন অভিমানে। ১৬৬ ওয়ানডেতে তার রান ২ হাজার ৩৩৮, উইকেটে ১৭৫টি। ৮৪ টি-টোয়েন্টিতে রান ১ হাজার ২০৪ ও উইকেট ৫১টি। তবে এই সংখ্যাগুলি বিশেষ কিছু মনে না হলেও তার উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কমই। বল হাতে ছিলেন বরাবরই উইকেট শিকারী। ব্যাট হাতে বিধ্বংসী, নিজের দিনে গুঁড়িয়ে দিতে পারতেন যে কোনো বোলিং আক্রমণ। সবসময়ই ম্যাচ জেতানোর মতো একজন। তার স্ট্রাইক রেটই সেটার স্বাক্ষী। ওয়ানডে ব্যাটিংয়ে গড় মাত্র ১৯.৯৮। কিন্তু স্ট্রাইক রেট ১১২.০৮, কমপক্ষে ২ হাজার রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ওয়ানডে ইতিহাসে যা চতুর্থ সর্বোচ্চ। টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইক রেট ১৫১.৬৩! বল হাতে দারুণ কিছু পারফরম্যান্স, ব্যাট হাতে স্মরণীয় কিছু ইনিংসে তিনি রাঙিয়েছেন ক্যারিয়ার। দুই বছর আগে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২০ রান তাড়ায় সাত নম্বরে নেমে তার ৭৪ বলে ১৪০ রানের ইনিংস ভুলবার নয় কখনোই। ১২৮ রানে ৭ উইকেট হারানো দলকে বলতে গেলে একাই জয়র কাছে নিয়েগিয়েছিলেন তিনি ১৩ ছক্কার ইনিংসে। ওয়ানডেতে ৫ উইকেট পেয়েছেন চারবার, শ্রীলঙ্কার হয়ে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। দুটি যুব বিশ্বকাপ, চারটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, তিনটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও দুটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তিনি খেলেছেন শ্রীলঙ্কার হয়ে। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ৯ বলে ২২ রানের দুর্দান্ত ক্যামিও খেলার পর গৌতম গুম্ভিরের উইকেট নেন তিনি। সেদিন তবু ভারতের কাছে হেরে বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণ হয়নি। সেই আক্ষেপ কিছুটা ঘোচাতে পারেন তিন বছর পর বাংলাদেশে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেই ভারতকে হারানোর পথে রান তাড়ায় শেষ দিকে নেমে ৩ ছক্কায় করেন ১৪ বলে অপরাজিত ২২। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে তার ছক্কাতেই নিশ্চিত হয় শ্রীলঙ্কার ট্রফি জয়। থিসারার ব্যাটিং-বোলিং ঝলক এখন দেখা যাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply