ক্রীড়া প্রতিবেদক ॥ একটা ট্রফির জন্য লিওনেল মেসি কতোটা উন্মুখ হয়ে ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া গেল ম্যাচ শেষে। আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি জানিয়েছেন, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়েই পুরো নব্বই মিনিট খেলে গেছেন দলের অধিনায়ক! সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়েছিলেন মেসি। দেশটির একজন ডিফেন্ডারের কড়া ট্যাকলে হ্যামস্ট্রিংয়ে আঘাত পান আলবিসেলেস্তে অধিনায়ক। তবে কিছুক্ষণ পরই উঠে দাঁড়ান তিনি। এ সময় রক্ত ঝরতেও দেখা যায় তার পা থেকে। তারপরও খেলে যান পুরো ম্যাচ। সে ম্যাচে পাওয়া ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেননি লিও। তারপরও থেমে থাকেননি। দলের প্রয়োজনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকেই। খেলে গেছেন পুরো ৯০ মিনিট। দলকে পাইয়ে দিয়েছেন অধরা ট্রফিটা। ম্যাচ শেষে গোপন তথ্যটা ফাঁস করলেন কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি। জানান, লিও আগের ম্যাচে পাওয়া ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেনি। তারপরও টানা ২ ম্যাচ খেলে গেছে সে। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। এদিন নিজের দীর্ঘদিনের আক্ষেপটাও ঘুচলেন লিওনেল মেসি। তাকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার মানেন অনেকে ফুটবলবোদ্ধাই। আন্তর্জাতিক ট্রফি ছাড়াই তাকে এমন স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছেন তারা। গুটিকয়েক যারা সন্দিহান ছিলেন কিংবা তর্কে মাততেন, তাদের যুক্তি ছিল ওই একটাই ‘দেশের হয়ে মেসির নেই কোন শিরোপা’। সেই বিতর্কেরও অবসান হয়েছে। আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকে সর্বকালের সেরা মানতে আর দ্বিধা নেই কারো। নিজের ৫ম ফাইনালে এসে অবশেষে অধরা ট্রফিটা ছুঁতে পারলেন আলবিসেলেস্তে ক্যাপ্টেন। এর আগে অসংখ্যবার হেরেছেন। দেশের হয়ে গেল দেড়যুগে কম চেষ্টা তো করেননি! অবশেষে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে জিতলেন নিজের ১ম ট্রফি। প্রথমার্ধ্বেই লিড নেয় আর্জেন্টিনা। দি পলের পাস থেকে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে দলকে জয়সূচক গোলটি এনে দেন দি মারিয়া। ওই এক গোলই আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছে ২৮ বছর পর একটি শিরোপা জয়ের সুযোগ। পুরো আসরটা মাতিয়ে রেখেছেন লিও। দেশের জন্য একটা ট্রফি জিততে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে নেমেছিলেন এবার। আসরের একেবারে শুরু থেকেই নায়কের বেশে ৬ বারের ব্যালন ডি’অরজয়ী তারকা। চিলির বিপক্ষে ফ্রি কিক থেকে দুর্দান্ত এক গোলে আসরে যাত্রা শুরু। বলিভিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোলে গ্রুপপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের পর্বে। কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়েডরের বিপক্ষে আরো একটি ফ্রি কিক গোল। আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা লিও। কেবল তাই নয়, সতীর্থদের দিয়ে গোল করাতেও সবার আগে মেসি। ৫টি অ্যাসিস্ট করে টুর্নামেন্টে সেরা। পুরো আসরে আর্জেন্টিনার করা ১২ গোলের ৯টিতেই সরাসরি অবদান রেখেছেন বিশ্বসেরা ফুটবলার। আসরের সেরা ফুটবলার, সেরা গোলদাতা আর সঙ্গে বহু সাধনার একটা ট্রফি। লিওনেল মেসির পূর্ণতা এলো যেন! আর এই এক আসরেই সমালোচকদের সব জবাব দিয়ে দিলেন তিনি। জানিয়ে দিলেন, এই ধরণীতে যত ফুটবলার এলো-গেলো, আমিই সবার সেরা।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply