ঢাকা অফিস ॥ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে বন্ধ থাকার পর দেশের সব নদীবন্দর থেকে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। এরআগে, গত বৃহস্পতিবার নদীতে দুই ইঞ্জিনের লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিয়েছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। গতকাল শুক্রবার অন্যসব নৌযান চলাচলেরও অনুমতি মিলেছে। ঢাকা নদী বন্দরের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীনএ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় নৌ চলাচল শুরু হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ সব রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর প্রভাব কেটে যাওয়ায় দুই ইঞ্জিনের দূরপাল্লার লঞ্চের পর এক ইঞ্জিনের ছোট লঞ্চ চলাচলেরও অনুমতি দিয়েছে সরকার। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে এক ইঞ্জিনের লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। দুইদিন বন্ধ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার থেকে দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট দূরপাল্লার লঞ্চ সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের অনুমতি দেয় বিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিউটিএর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ গত ২৬ মে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের উপকূলভাগে আঘাত হানার পর ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ মে দেশের আবহাওয়ার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২ বা তদূর্ধ্ব ইঞ্জিন বিশিষ্ট লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ নৌপথে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর তেমন কোনো প্রভাব না থাকায় এবং আবহাওয়া আরও বিপদমুক্ত হওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে গতকাল শুক্রবার ৯টা থেকে এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট লঞ্চ চলাচলের অনুমতি প্রদান করা হলো। এমতাবস্থায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট লঞ্চ সাবধানতার সঙ্গে পরিচালনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব কেটে যাওয়ায় পদ্মা নদীর শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরির পর এবার লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। এ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল শুরুর তথ্য জানিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া লঞ্চঘাট পরিদর্শক মো. সোলেমান বলেন, বৈরি আবহাওয়া কেটে যাওয়ায় নৌরুটে আবারও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। বর্তমানে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ৮৫টি লঞ্চ সচল রয়েছে। নিয়ম মেনে শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ও বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়াঘাটে আসা-যাওয়া করছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে চালু হয় ফেরি চলাচল। নৌচলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়াঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী ও যানবাহন পর্যায়ক্রমে নদী পার হচ্ছে। বিআইডাব্লিউটিসি শিমুলিয়াঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ বলেন, রাতে সীমিত পরিসরে ফেরি চলাচল শুরু করে। নদীর ঢেউ ও ঝড়ো হওয়া কেটে গেছে। বর্তমানে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। নৌরুটে বহরে থাকা ১৮টি ফেরির মধ্যে ১৪টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দীর্ঘ প্রায় ৬৫ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটেও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে পুনরায় এ রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাটের ট্রাফিক ইন্সেপেক্টর আফতাব হোসেন। এর আগে গত মঙ্গলবার বিকাল ৫টা থেকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়। ফলে লঞ্চে পারাপার হওয়া যাত্রীরা ফেরিতে পারাপার হয়েছে। তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এ রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। নদী এখন শান্ত রয়েছে। ইয়াসের প্রভাবে এ রুটে ব্যহত হয়েছে ফেরি চলাচল। এখন সেটিও স্বাভাবিক রয়েছে।