ঢাকা অফিস ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে চব্বিশ ঘণ্টায় ১১৯ জনের মৃত্যুতে দুঃখজনক এক নতুন রেকর্ডের সাক্ষী হতে হল বাংলাদেশকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কেবল খুলনা বিভাগেই মারা গেছেন ৩২ জন; ঢাকা বিভাগে ২৪ জন এবং রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগে ২২ জন করে মানুষের প্রাণ নিয়েছে এ ভাইরাস। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল এক দিনে ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এতদিন সেটাই ছিল এক দিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা। গত একদিনে মারা যাওয়া ১১৯ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা ১৪ হাজার ১৭২ জনে দাঁড়াল। গত এক দিনে দেশে আরও ৫ হাজার ২৬৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪০৬ জনের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য এসেছে সরকারের খাতায়। আগের দিন দেশে ৪ হাজার ৩৩৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সেই হিসাবে এক দিনে শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে হাজারের কাছাকাছি। আর মৃত্যুর সংখ্যা ৭৭ জন থেকে এক লাফে একশ পেরিয়ে গেছে। শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীদের মধ্যে ১৬৪৮ জনই ঢাকা বিভাগের। খূলনা বিভাগেও ১২ শর বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার রয়েছে ২১ শতাংশের ওপরে। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৩ হাজার ২৪৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৪ হাজার ১০৩ জন। করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায় জুনের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় আজ সোমবার থেকে আবার সারা দেশে লকডাউনের বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১২ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রামে মারা যাওয়া ২২ জনের মধ্যে ৮ জনই ছিলেন বন্দরনগরীর বাসিন্দা। এছাড়া খুলনা বিভাগে ৩২ জন, রাজশাহী বিভাগে ২২ জন, রংপুর বিভাগে ৯ জন, সিলেট বিভাগে ৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জন এবং বরিশাল বিভাগে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এই ১১৯ জনের মধ্যে ৫৯ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৩৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ছিল ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৯ জনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৬ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের ৭৫ জন ছিলেন পুরুষ, ৪৪ জন ছিলেন নারী। ৯৯ জন সরকারি হাসপাতালে, ১৪ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ২ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ছাড়া দুইজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঢাকা নগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ১০৮১ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া রাজশাহী জেলায় ৩২৫ জন, চট্টগ্রাম জেলায় ৩০০ জন, খুলনা জেলায় ২৯৯ জন, কুষ্টিয়ায় ১৯৫ জন, বাগেরহাটে ১৭৭ জন, যশোরে ১৩৫ জন, পাবনায় ১৩৫ জন, নাটোরে ১৩১ জন, ময়মনসিংহে ১২৯ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১২০ জন, টাঙ্গাইলে ১০১ জন এবং বগুড়ায় ১০১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৫৪টি ল্যাবে ২৪ হাজার ৪০০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৫ লাখ ৬ হাজার ৭৮১টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৫৯ শতাংশ যা আগের দিন ২২ শতাংশের বেশি ছিল। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬ শতাংশ। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা আট লাখ পেরিয়ে যায় গত ৩১ মে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১১ জুন তা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গতকাল রোববার রেকর্ড ১১৯ জনের মৃত্যুর খবর দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১৮ কোটি ৮ লাখ ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৯ লাখ ১৮ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এ ভাইরাস।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply