ঢাকা অফিস ॥ দেশে ষোল দিনে আরও এক হাজার মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসে মৃতের মোট সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও জনের ৩৩ মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ৫ জনে। সংক্রমণের বিস্তার রোধে কঠোর লকডাউনের মধ্যেই গত ২৫ এপ্রিল দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের মোট সংখ্যা ১১ হাজার পেরিয়েছিল। তার সঙ্গে আরও এক হাজার নাম যুক্ত হতে সময় লাগল ১৬ দিন। অবশ্য এই সময়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা বেশ কিছুটা কমে এসেছে। ৩৩ জনের মৃত্যুর যে তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছে, তা সাত সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে সবশেষ ২৪ মার্চ করোনাভাইরাসে এর চেয়ে কম মৃত্যু দেখতে হয়েছিল বাংলাদেশকে, সেদিন মোট ২৫ মারা যাওয়ার খবর এসেছিল। এদিকে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৩০ জন। সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৬ হাজার ২৫৭ জনে। এর আগে গত ১৯ এপ্রিল করোনায় দেশে ১১২ জনের মৃত্যু হয়। যা দেশে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাছিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গ বিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৪৪ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ১৫ হাজার ৩২১ জন। সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪৫৪টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১২৮টি, জিন এক্সপার্ট ৩৫টি, র্যাপিড অ্যান্টিজেন ২৯১টি। এসব ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১৪ হাজার ৩২টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৪ হাজার ১৮৪টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫৬ লাখ ৬১ হাজার ৯২৬টি। এতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ১৫ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৩৩ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন, সিলেট বিভাগে ৩ জন, রংপুর বিভাগে ২ জন। এ ছাড়া রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগে ১ জন করে ২ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ২১ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ১০ জন। আর বাড়িতে মারা গেছেন ২ জন। মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরে ঊর্ধ্বে ১৬ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। এতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ৩১৬ জন ও আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৩৫৭ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন এক লাখ ২৬ হাজার ৮০৭ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৫১৬ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ২৯১ জন। এর আগে গত ৭ এপ্রিল দেশে একদিনে করোনা শনাক্ত হয় সাত হাজার ৬২৬ জন। যা দেশে একদিনে করোনা শনাক্তে সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর গত ৬ এপ্রিল একদিনে করোনা শনাক্ত হয়েছিল সাত হাজার ২১৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা সাড়ে সাত লাখ পেরিয়ে যায় গত ২৭ এপ্রিল। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১ মে তা সাড়ে ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ১৯ এপ্রিল রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে সময় টানা চার দিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল একশর ওপরে।