দৌলতপুর প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ইউপি নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী সহিংসতা ততই বাড়ছে। দৌলতপুর থানা পুলিশসহ সংশ্লি¬ষ্ট প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণে প্রতিদিনই ঘটছে সংঘর্ষ, হামলা, গোলাগুলি, নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যাওয়ার জন্য প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে দেওয়া হচ্ছে প্রাণনাশসহ নানা ধরণের হুমকি। আর এমন সহিংস ঘটনায় দৌলতপুর থানা পুলিশের নীরব ভূমিকা ও পক্ষপাতমূলক আচরণে আগামী ২৮ নভেম্বরের ইউপি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়েও জনমনে দেখা দিয়েছে নানা সংশয়। সৃষ্টি হচ্ছে উদ্বেগ উৎকন্ঠার।
গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ভাগজোত বাজারে নির্বাচনের পোষ্টার টাঙ্গানোকে কেন্দ্র করে নৌকা ও মশাল প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন গুলিবিদ্ধসহ ৬ জন আহত হয়েছেন। এ সময় জাসদ প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় পৃথক অভিযোগ দায়ের হলেও সংঘর্ষ, গোলাগুলি, বোমা বিষ্ফোরণ ও নির্বাচনী অফিস ভাংচুরের এমন তান্ডলীলার ঘটনা দৌলতপুর থানার ওসি নাসির উদ্দিন অস্বীকার করেছেন। গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন এবং থানায় কেউ লিখিত অভিযোগও করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সিরাজ মন্ডল বলেছেন, নৌকার সমর্থকদের ওপর হামলা ও মারপিট করে আহত করার ঘটনায় পরদিন বুধবার সকালে দৌলতপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে আটক করেনি। এমন ঘটনা শুধু রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে নয়, এমন ঘটনা প্রতিদিনই ঘটেছে আদাবাড়িয়া, প্রাগপুর, ফিলিপনগর, মরিচা, হোগলবাড়িয়া. রিফাইতপুর, পিয়ারপুরসহ প্রায় সব ইউনিয়নে। তবে এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ হলেও পুলিশ রয়েছে নিস্ক্রিয়।
অপরদিকে বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় না থাকলেও ওইসব প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাড়নোর জন্য দেওয়া হচ্ছে প্রাণনাশসহ নানা ধরণের হুমকি। হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বিল¬াল হোসেনকে তারাগুনিয়া থানামোড় এলাকায় প্রকাশ্য জনসন্মুখে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাড়ানোর জন্য সাবেক স্বতন্ত্র এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর বড় ছেলে এমরান চৌধুরি কলিংস নানা ধরণের হুমকি দিয়েছেন। এসময় তিনি বিল¬াল হোসেনকে বলেন, যদি ভাল চান তা’হলে সাংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান, তা নাহলে মামল হামলাসহ বিভিন্ন ধরণের সমস্যা হলে আপনার কিছু বলার থাকবে না। কারন এবারের নির্বাচন অস্তিত্ব ও মর্যাদার নির্বাচন, যেকোন মূল্যে চাচা সেলিম চৌধুরীকে বিজয়ী করবোই। তাই আপনি মান সম্মান নিয়ে নির্বাচনের মাঠ থেকে বসে যান। সেটাই আপনার জন্য মঙ্গল হবে। এরপর দলবল নিয়ে (প্রতীক বরাদ্দের দিন) সশস্ত্র মহড়া দিয়ে উপজেলা পরিষদে যান এমরান চৌধুরি কলিংস।
একইভাবে রিফাইতপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী পথ সভায় সাবেক স্বতন্ত্র এমপি পুত্র এমরান চৌধুরি কলিংস বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আবিদ হাসান মন্টি সরকারকে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানো হুমকি দিয়ে বলেছেন, আমরা এখনও রুদ্র আচরণ শুরু করিনি, সময় আছে মান সম্মান নিয়ে ঘরে উঠুন। আমরা যদি রুদ্র মূর্তি ধারণ করি তাহলে কি হবে তা আপনি নিজেও জানেন না। তাই সময় আছে মান সম্মান নিয়ে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান তা নাহলে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। ভাল চানতো ভোট বর্জন করুন অথবা সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে বসে যান। আপনিও ভাল থাকুন আপনার লোকজনদেরও ভাল রাখুন। সাবেক স্বতন্ত্র এমপি পুত্র এমরান চৌধুরি কলিংসের এমন বক্তব্য ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও ভয়াবহ এমন বক্তব্য ও নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘনের দায়ে দৌলতপুর থানা পুলিশসহ সংশি¬ষ্ট প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি বা হুমকিদাতাদের সতর্কও করেননি।
নির্বাচনের আগে অশালীন আচরণ ও হুমকিমূলক বক্তব্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ সাধারণ ভোটারদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়, উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা। তাই ২৮ নভেম্বর দৌলতপুরে ইউনিয়নের পরিষদের নির্বাচন পার্শ্ববর্তী ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলায় গত ১১ নভেম্বর হয়ে যাওয়া নির্বাচনের মত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার দাবি সবার। আর এ জন্য এখনই প্রয়োজন প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা।
Leave a Reply