1. andolonerbazar@gmail.com : AndolonerBazar :

দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঘেষে অবৈধভাবে অবাধে কাটা হচ্ছে বালি    

  • সর্বশেষ আপডেট : বুধবার, ৫ মে, ২০২১

বিশেষ প্রতিনিধি \ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর ভাঙ্গনরোধে নির্মিত স্থায়ী বাঁধের পাড় ঘেষে অবাঁধে অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে বালি। ফলে আবারও হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্থায়ী বাঁধ। উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের গোলাবাড়ি ও ইসলামপুরে পদ্মা নদীর পাড় ঘেষে বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্থায়ী বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় অবাঁধে কাটা হচ্ছে বালি। এছাড়াও বৈরাগীরচর বাজারের নীচেও পদ্মা নদীতে থেকে অবৈধভাবে অবাঁধে কাটা হচ্ছে বালি। এলাকার প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে বালি কাটার এ উৎসবে মাতলে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেননা বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, ফিলিপনগরের গোলাবাড়ি ও ইসলামপুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্থায়ী বাঁধ ঘেষে এবং কোথাও মাত্র দেড়’শ থেকে দু’শ গজ নিকটে পদ্মা নদীর পাড় ঘেষে অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে বালি। প্রতিদিন শত শত ট্রলি ভর্তি বালি সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি বালি কাটার সাথে জড়িত থাকার কারনে কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, যেভাবে পদ্মা নদীর পাড় ঘেষে বালি কাটা হচ্ছে তাতে আগামী বর্ষা মৌসুমেই বাঁধে ধ্বস নামবে। আবারও বাড়ি ঘর পদ্মা গর্ভে বিলীন হবে, সেইসাথে সহায় সম্পদ হারা হতে হবে আমদের। এছাড়াও অবৈধভাবে বালি কাটার ফলে পদ্মা নদী তরীবর্তী ফসলি বা আবাদী জমিও ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন হবে। কিন্তু যারা বালি কাটছে তারা এলাকার প্রভাবশালী ও ভয়ংকর প্রকৃতির। তাই তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে সাহস করে না। প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই থেকে তিনশত ট্রলি বালি কাটা হয়ে থাকে। আর এসব ট্রলি থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে থাকেন একটি প্রভাবশালী চক্রটি। আদায় হওয়া এ অর্থ উচ্চ পর্যায় থেকে নিম্নপর্যায় পর্যন্ত অনেকের মধ্যেই ভাগ বন্টন হয়ে থাকে বলে এলাকাবাসী জানান।

এলাকাবাসী আরও জানান, ফিলিপনগরের গোলাবাড়ি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্থায়ী বাঁধ ঘেষে একই এলাকার ভাদু মন্ডলের ছেলে সাইদ ও তার ভাই মিঠুর নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের মহা উৎসবে মেতেছে। প্রতিদিন ওই চক্রটি শত শত ট্রলি বালি কেটে পুকুর ভরাটসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। ট্রলি প্রতি ৫’শ টাকা করে আদায় করে থাকেন সাইদ। প্রতিদিন কমপক্ষে একশত ট্রলি বালি উত্তোলন করা হলে শুধুমাত্র গোলাবাড়ি এলাকা থেকে কমপক্ষে অর্ধলক্ষ টাকা আদায় হয়ে থাকে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

এছাড়াও ফিলিপনগরের ইসলামপুর এলাকাতে পদ্মা নদীর পাড় ঘেষে অবৈধভাবে বালি কাটা হচ্ছে। ইসলামপুর এলাকার রনি, টেটন, সুমন ও রাকিবুলের নেতৃত্বে চক্রটি প্রতিদিন অবৈধভাবে বালি কাটায় লিপ্ত রয়েছে। বৈরাগীরচর বাজারের নীচে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঘেষে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে অবাঁধে কাটা হচ্ছে বালি। বৈরাগীরচর এলাকার প্রভাবশালী জাহিদুল ইসলাম জাহিদের নেতৃত্বে মতলেব মেম্বর, নাসির মেম্বর ও হাম্বার খা সহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে অবাধে বালি কাটায় লিপ্ত রয়েছে। এরা প্রভাবশলী ও দূর্ধর্ষ প্রকৃতির হওয়ার কারণে ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনা। আবার কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর চলে নির্যাতন ও হামলা মামলার হুমকি।

পদ্মা নদীর পাড় ও বাঁধ ঘেঁষে বালি কাটার ফলে প্রতিবছরই পদ্মা নদীর ভাঙ্গন অব্যাহত থাকে। গত বর্ষা ও বন্যা মৌসুমেও পদ্মার ভাঙ্গনে শত শত বিঘা ফসলী জমি বিলীন হয়েছে। ভুরকা এলাকায় পদ্মা নদী থেকে মাত্র কয়েক’শ গজ দূরে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের বিদ্যুতের খুটি। যা রয়েছে হুমকির মুখে। তাই পদ্মা নদীর পাড় ঘেষে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগী এলাকাবাসী।

পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালি কাটার বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, এলাকা থেকেও বালিকাটার বিষয়ে অনেকে অভিযোগ করেছেন। অভিযানে গেলে তারা পালিয়ে যায়। তাই আমার একার পক্ষে বালিকাটা বন্ধ করা দুস্কর হচ্ছে। বালিকাটা বন্ধে প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ। তবে যারা বালি কাটছে তাদের আটক করে আমাকে খবর দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। তারপরও বালিকাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ১১২ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন রোধে ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তবে এভাবে অবাঁধে বালিকাটা অব্যাহত থাকলে পদ্মার ভাঙ্গনে এ বাঁধেও ধ্বস নামবে এমন শঙ্কায় রয়েছেন গোলাবাড়ি, ইসলামপুর এবং বৈরাগীরচর সহ ফিলিপননগর ও মরিচাবাসী। তাদের দাবি প্রভাবশালী মহলের অবৈধভাবে বালি কাটা বন্ধে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

 

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর
© All rights reserved ©2021  Daily Andoloner Bazar
Site Customized By NewsTech.Com