ঢাকা অফিস ॥ বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিলের এমআরটি লাইন-৬ এর দ্বিতীয় মেট্রো ট্রেন সেট ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। গত মঙ্গলবার রাতে এগুলো ঢাকায় এসে পৌঁছায়। গতকাল বুধবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিক। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ট্রেন সেট ঢাকাতে চলে এসেছে। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের ছয় কোচ বিশিষ্ট দ্বিতীয় মেট্রো ট্রেন সেট ২১ এপ্রিল জাপানের কোবে সমুদ্রবন্দর থেকে জাহাজে যাত্রা শুরু করে। তা ৯ মে বাংলাদেশের মোংলা সমুদ্র বন্দরে পৌঁছায়। মোংলা বন্দরে শুল্ক ও ভ্যাট সম্পর্কিত নানা কার্যক্রম শেষ করে ২৪ মে মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে বার্জে করে দ্বিতীয় মেট্রো ট্রেন সেট নদী পথে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ২৬ মে দ্বিতীয় মেট্রো ট্রেন সেট বহনকারী বার্জ ঝালকাঠিতে পৌঁছানোর পর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আশঙ্কায় নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে ঝালকাঠিতেই নোঙ্গর করে রাখা হয় বলেও ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়। তারা বলছে, ঝালকাঠি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে পুনরায় ২৮ মে মেট্রো ট্রেন সেট বহনকারী বার্জ যাত্রা শুরু করে। তারপর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দ্বিতীয় মেট্রো ট্রেন সেট উত্তরার ডিপোতে এসে পৌঁছায়। মেট্রোরেলের প্রথম ট্রেন সেটের ইতোমধ্যে প্রদর্শনীও হয়েছে ঢাকার উত্তরার ডিপোতে। এদিকে জাপান থেকে দুই দফায় ১২টি কোচ আনার পর এবার একসঙ্গে ১২টি কোচ দেশে আনার পরিকল্পনা করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। আগামী ১১ থেকে ১৪ জুনের মধ্যে জাপান থেকে দেশের পথে রওনা দেবে কোচগুলো। ডিএমটিসিএল আশা করছে ১৩ থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে ১২টি কোচ একসঙ্গে দেশে এসে পৌঁছাবে। প্রজেক্ট ম্যানেজার-সিপি-৮ (উপ-সচিব) এবি এম আরিফুর রহমান বলেন, জাপান থেকে ছয়টি করে কোচ দেশে আসছে। এবার একসঙ্গে ১২টি কোচ দেশে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে শতর্কতার সঙ্গে আমরা ৬টি মেট্রোরেল কোচ জেটি থেকে ডিপোতে নেওয়ার কাজ শুরু করেছি। সড়কের বৃষ্টির পানি থাকায় দেরিতে জেটি থেকে ডিপোতে নেওয়া শুরু হয়। আমাদের ডিপোর ভেতরে যে রেলওয়ে ট্র্যাক আছে সেখানে কোচগুলো বসানো হয়েছে। প্রতিটা কোচে পৃথক পৃথকভাবে ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমরা শুরু করেছি। তিনি আরও বলেন, প্রথম দিন তিনটি কোচ জেটি থেকে ডিপোতে নেওয়া হচ্ছে। বাকি তিনটি কোচ বৃহস্পতিবার ডিপো এলাকায় নেবো। মেকানিক্যাল-ইলেকট্রিক্যাল, ওয়াশিংসহ প্রতিটি কোচের ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এর পরেই কোচগুলো লাইনে তোলা হবে। এ কাজে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগতে পারে। এ কাজের জন্য ইতালি থেকে এক ধরনের যন্ত্র আনা হয়েছে বলে জানায় ডিএমটিসিএল। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ৬টি মেট্রোরেল কোচ ডিপোতে রেলওয়ে ট্র্যাকে বসিয়ে ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এর পরে কোচ একসঙ্গে করেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ী এলাকায় মেট্রোরেলের জেটি থেকে ক্রেন দিয়ে লিফটিং জিগের মাধ্যমে কোচ লরিতে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। তিনটি কোচ দিয়াবাড়ীর ডিপোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, সব মিলিয়ে ২৪ সেট ট্রেনের মোট ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ট্রেনগুলোয় ডিসি ১৫০০ ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা থাকবে। স্টেইনলেস স্টিল বডির ট্রেনগুলোয় থাকবে লম্বালম্বি সিট। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে দুটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি বগির দুই পাশে থাকবে চারটি করে দরজা। জাপানি স্ট্যান্ডার্ডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্ত প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা হবে ১ হাজার ৭৩৮ জন। ভাড়া পরিশোধের জন্য থাকবে স্মার্ট কার্ড টিকিটিং ব্যবস্থা। মেট্রোরেলে ২৪টি ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় আপ ও ডাউন রুটে ৬০ হাজার যাত্রী আনা-নেওয়া করতে সক্ষম হবে। মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের এপ্রিল পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি ৬৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। তবে সরকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ আগামী বছর চালু করতে চায়। এই অংশের কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply