নিজ সংবাদ ॥ “আগ্নিবীণার শতবর্ষ : বঙ্গবন্ধুর চেতনায় শাণিতরুপ” প্রতিপাদ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলায়তনে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক আরিফ উজ জাামান এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শিশির কুমার রায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আ স ম আখতারুজ্জামান মাসুম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী রফিকুল আলম টুকু, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন আখতার, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাধন কুমার বিশ^াস, জেলা কালচারাল অফিসার সুজন রহমান, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মখলেছুর রহমান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান সহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম বিশ^ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরে অবিভক্ত বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি তার সাহিত্যের মাধ্যমে বিদ্রোহ করে গেছেন। এছাড়াও তিনি যে গান রচনা করেছেন, সেই গানের কারনে তাকে বলা হয় গানের বুলবুল। একাধারে তিনি প্রেমের কবি, একাধরে তিনি বিদ্রোহী কবি। কাজী নজরুল ইসলামের জীবনি নিয়ে আলোচনা কালে জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা জানি যে তাঁর জন্মের পর খুব অল্প বয়সে তাঁর বাবা মারা গিয়েছিলো। যিনি মসজিদের ইমাম এবং মাজারের খাদেম হিসাবে কাজ করেছেন। বাবা মারা যাওয়া পর পরিবারের দায়িত্ব কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাঁধে চলে আসে। পরিবারের অভাব-অনটন এবং দূঃখ কষ্টের কারণে প্রতিবেশীরা তাকে দুখু মিয়া নাম দিয়েছিলেন। তিনি যেই মক্তবে পড়াশুনা করেছেন, সেই মক্তবে তিনি পাঠদান করেছেন এবং সেই সাথে মোয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেছেন। জীবণ এবং জীবিকার প্রয়োজনে তিনি লেটুর দলের সাথে যোগ দিয়েছিলেন, রুটির দোকানে কাজ করেছেন। তিনি ১৯১৭ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন এবং ১৯২০ সালে এসে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। তাঁর জীবন ছিলো বিচিত্র অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। কবি নজরুল ইসলামের সাহিত্য কর্ম নিয়ে আলোচনা কালে জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা তাঁর সাহিত্য কর্মের দিকে নজর দিলে দেখি, তার সাহিত্য কর্ম ছিলো মাত্র ২৩ বছরের। এরপর তিনি দীর্ঘ ৩৪ বছর অসুস্থ ছিলেন। মাত্র ২৩ বছর সময়ে তিনি যে সাহিত্য রচনা করেছেন এটি অতুলণীয়। ১৯৪১ সালে ৫ এবং ৬ এপ্রিল কোলকাতা মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির রজত জয়ন্তী একটি অনুষ্ঠান হয়েছিলো। সেই রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলাম সভাপতি হিসাবে তার শেষ ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানে তাঁকে যে সন্মাননা দেওয়া হয়েছিলো। সেদিন তিনি সেই সন্মননা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আপনারা যে সওগাঁত আজ হাতে তুলে দিলেন আমি তা মাথায় করে নিলুম, আমি ধন্য হলুম, আমি ধন্য হলুম। এর পরক্ষনেই সে বলেছেন, আমি সকল দেশের, আমি সকল মানুষের কবি। আবার সে বলেছে, কবি চাইনা দান, কবি চায় অঞ্জলী, কবি চায় প্রীতি। তিনি অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন সহ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি বিদ্রোহ করেছেন। তার যে সাহিত্য কর্ম এবং তার যে গান সেগুলো আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিফলিত হবে। নজরুল চর্চার মাধ্যমে আমরা তার কবিতা, সাহিত্য এবং গান থেকে অনেক কিছু জানতে পারবো। সভাপতির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক আরিফ উজ জাামান বলেন, কাজী নজরুল ইসলামের যে চেতনা বোধ আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত হোক। সত্যিকার অর্থে প্রতিদিনই আমরা কাজী নজরুল ইসলামকে ধারণ করি এবং ধারণ করার মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে যে সংস্কৃতিক সত্ত্বা রয়েছে সেটির আরো পরিস্ফুরন ঘটুক। আরিফ উজ জাামান তার বক্তব্যে আরো বলেন, কাজী নজরুল ইসলামকে ধারণ করতে তাঁর যে দ্রোহ চেতনা, সেই চেতনাকে স্মরন করে আমরা সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, জাতির পিতার স্বপ্ন, সোনার বাংলা বিনির্মানে এগিয়ে যাওয়ার উত্তর উত্তর প্রত্যয় ব্যক্ত করি, তাহলে আজকের এই দিনটি পালন আরো অধিকতর রুপে সার্থক হবে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply