ঢাকা অফিস ॥ যে দুজনকে গ্রেপ্তারের পর নারায়ণগঞ্জে দুটি ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালানো হয়, তারা নব্য জেএমবির ‘স্লিপার সেলের সদস্য’ বলে দাবি করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। নারায়ণগঞ্জে অভিযানে শক্তিশালী বোমা ও বিস্ফোরক পাওয়ার পরদিন সোমবার ঢাকায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান সিটিসিসি প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন (ডেভিড কিলার) এবং কেরানীগঞ্জ থেকে কাউসার হোসেনকে (মেজর ওসামা) গ্রেপ্তারের পর নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালানো হয়েছিল। আসাদুজ্জামান বলেন, ওই দুজন নব্য জেএমবির আমির মাহাদী হাসান ওরফে আবু আব্বাস আল বাঙ্গালীর নির্দেশনায় আলাদাভাবে কাজ করে আসছিলেন। মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। রোববার রাতে সিটিটিসি ও সোয়াট নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের পাঁচগাঁও এলাকায় মামুনের বাড়িতে অভিযান চালায়। ওই এলাকার একটি মসজিদে মুয়াজ্জিন ছিলেন লালমনিরহাটের মামুন। এরপর কাউসারের কাছে পাওয়া তথ্যে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর কাজীপাড়া এলাকায় আরেকটি বাড়িতেও চলে অভিযান। দুটি বাড়িতেই শক্তিশালী বোমা তৈরি করা হয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। গত মে মাসে নারায়ণগঞ্জের একটি পুলিশ বক্সে যে বোমা পেতে রাখা হয়েছিল, তার তদন্তেই এই দুটি আস্তানার সন্ধান মেলে বলে জানান সিটিটিসি কর্মকর্তারা। পাঁচ বছর আগে নজিরবিহীন গুলশান হামলার পর নব্য জেএমবিসহ জঙ্গি সংগঠনগুলোর মেরুদন্ড ভেঙে দেওয়ার দাবি করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, গোপনে সেগুলো আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টাও চালাচ্ছে। নব্য জেএমবির আমির হিসেবে এখন যে মাহাদী হাসান অরফে আবু আব্বাস আল বাঙ্গালীর নাম শোনা যাচ্ছে, তার সঙ্গে মামুন ও কাউসারের যোগাযোগ ছিল বলে জানান সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দুজনই বোমা তৈরির কারিগর ও প্রশিক্ষক। দুজন জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলেও তারা ‘স্লিপার সেল’ হিসেবে আমিরের অধীনে কাজ করছে। মামুনকে উদ্ধৃত করে সিটিটিসি জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে যে বোমাটি পেতে রাখা হয়েছিল, সেটি তারই আস্তানায় তৈরি। কাউসার নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রশিক্ষক হিসেবে অন্যান্য সদস্যদের অনলাইনে ও অফলাইনে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন বলে সিটিটিসির দাবি। গ্রেপ্তার দুজনের মধ্যে যোগাযোগ ছিল কি না- এ প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গিরা ‘স্লিপার সেল’ হিসেবে কাজ করে আসছে। আমিরের নির্দেশে তারা আলাদা আলাদাভাবে কাজ করত। তাদের মধ্যে আপাতত কোনো যোগসাজশ আমরা লক্ষ্য করেনি। তবে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলমান। আবু আব্বাসকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সচেষ্ট বলে জানান তিনি। গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। তারা সামরিক বাহিনীতে ছিল কি না- এ প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, “এটা তাদের সাংগঠনিক নাম (কিলার ডেভিড/মেজর ওসামা)। তাদের সংগঠনের সামরিক শাখা রয়েছে, সেটার সদস্য তারা।” তারা কত দিন এই কর্মকা-ে জড়িত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারা গত ১৫ মে একটি হামলার চেষ্টা করেছে। রোববার তাদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে।” তাদের পরিকল্পনা কী ছিল- উত্তরে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ঈদের পর পর গত ১৭ মে তারা পুলিশ বক্সে বোমা রেখে এসেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল এ ধরনের বিস্ফোরকের মাধ্যমে তাদের যে ‘টার্গেট’ ছিল, সেখানে হামলা করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল তাদের অন্যতম ‘টার্গেট’। কলকাতা পুলিশ সম্প্রতি তিনজনকে আটক করে বলেছে, তারা বাংলাদেশি জঙ্গি। তাদের বিষয়ে সিটিটিসি জানে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশের পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশ তিন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে- এমন তথ্য আমাদের জানা নাই। তবে আমরা আটকের তথ্য পেয়েছি। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করব।”
You cannot copy content of this page
Leave a Reply