ঢাকা অফিস ॥ সুনামগঞ্জের পাঁচ সংসদ সদস্যের সুপারিশে রেলমন্ত্রীকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ডিও লেটার (আধা-সরকারি পত্র) দেয়া সঙ্গত ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, আমাদের (পরিকল্পনামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী) মধ্যে কোনো মতভেদ নেই, উই আর স্টিল ফ্রেন্ড (আমরা এখনও বন্ধু)। আমরা মহান সংগঠন আওয়ামী লীগে কাজ করি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা কাজ করি। কেবিনেটে আছি। গতকাল মঙ্গলবার একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) নিজেই স্ট্যাটাস দিয়ে ৫০ বছরের বন্ধুত্বের কথা বলেছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের বন্ধুত্ব ৫০ বছরের বেশিও হতে পারে। যে বিষয় নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে, তা তেমন কোনো বড় বিষয় নয়। নীতিগত বিষয় নয় যে, আমাদের মধ্যে মতভেদ আছে। আমরা দুজনই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ করি এবং সরকারের সিদ্ধান্ত আমরা শেয়ার করি। এটা সরকারের সিদ্ধান্তের কোনো বিষয় ছিল না। এটা এলাকাভিত্তিক কিছু টানাপড়েন। সুনামগঞ্জের এ সংসদ সদস্য বলেন, আমার জেলার সংসদ সদস্যরা আমার কিছু বিষয়ে মানসিকভাবে খুশি নন। এটা আমরা সেটেল করবো। তার (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) কাছে বোধহয় তারা (সুনামগঞ্জের এমপি) গিয়েছিলেন। তিনি একটা ডিও লেটার দিয়েছেন। তার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, আমি মনে করি এটা সঙ্গত ছিল না। কারণ তিনি জানতেন সুনামগঞ্জে ছয়জন এমপি আছেন। আমি যে সুনামগঞ্জের এমপি সেটা তিনি ভালোভাবেই জানতেন। যেহেতু ৫০ বছেরে বন্ধুত্ব, আরও বেশি করে জানার কথা। তিনি বলেন, আমি স্ট্যাটাসে বলেছিও, তার (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) জায়গায় যদি অন্য কেউ হতেন, তিনি ফোন করতেন যে কিরে ভাই তোমার এলাকার লোকজন আমার কাছে এসেছেন, ব্যাপার কী। তখন আমি বলতাম। আমি অবাক হয়েছি, আমার সঙ্গে কথা না বলে বা জিজ্ঞাসা না করে এটা বলা। এটা একটু সারপ্রাইজড (অবাক), বাট আই এম নট শকড। ইট কেন বি রিপেয়ার্ড (এটা ঠিক হয়ে যাবে)। ভয়ঙ্কর কোনো ক্ষতি হয়নি। আমি মনে করি, এটা মিস ইনফরমেশন হয়ে গেছে। ইট উইল কাভার। আমাদের উভয়ের মধ্যে বড় কোনো মতভেদ আছে বলে আমি মনে করি না- যোগ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। সুনামগঞ্জে রেললাইন স্থাপন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ‘মুখোমুখি অবস্থান’ স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি সিলেটের সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচারের পর ড. মোমেন গত ১৪ জুন তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে সেটিকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই স্ট্যাটাসের সপ্তাহখানেক পর গত ২০ জুন এম এ মান্নান তার অবস্থান জানান পাল্টা ফেসবুক পোস্টে। সম্প্রতি সুনামগঞ্জে রেললাইন স্থাপনের বিষয়ে জোরেশোরে আলোচনা চলছে। এ ক্ষেত্রে ৩-৪টি রুট নিয়ে আলোচনা চলছে। এরইমধ্যে সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোমেন সুনামগঞ্জের পাঁচজন সংসদ সদস্যের পক্ষে অবস্থান নিয়ে একটি ডিও লেটার (আধা-সরকারি পত্র) দেন রেলমন্ত্রীকে, যে বিষয়ে সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মান্নান জানতেন না। পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাসের সূত্রপাত সেই ডিও লেটার থেকেই। দীর্ঘ ২৪ দিনেও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয়নি। এমনকি গ্রেপ্তার করা যায়নি ছিনতাইকারীকে। ফোন উদ্ধারের ব্যাপারে নতুন কোনো তথ্য আছে কি-না জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, লন্ডনে রানির বাড়ির সামনে থেকেও ফোন চুরি হয়। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ১২-১৪ কোটির মতো লাইভ ফোন আছে। এর মধ্যে প্রত্যেকদিন মরবে বা হারিয়ে যাবে, এটা যেকোনো সমাজেই হচ্ছে। আমি শুনেছি লন্ডনেও এ রকম হয়। আমার দেশি বহু লোক লন্ডনে বাস করে। তারা বলে যে, রানির বাড়ির সামনে থেকে ফোন নিয়ে গেছে আমার। তিনি বলেন, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমি একজন নাগরিক হিসেবে যা দেখছি, আমার জীবদ্দশায় ট্রিমেন্ডাস ইম্প্রুভমেন্ট (বিস্ময়কর উন্নতি) দেখেছি। আমাদের সরকার আছে বলে নয়। এই ঢাকা শহরে ৪০ বছর আগে চলাফেরা করতে গিয়ে কত রকমের দুর্ভোগের শিকার যে আমরা হয়েছি! তার তুলনায় এখন মেয়েছেলেরা ভালো পরিবেশে ঘোরাফেরা করতে পারে। এটা আরও ইম্প্রুভ (উন্নতি) করা দরকার। এটা নিত্য আমরা চালিয়ে যাব। মন্ত্রী বলেন, আর যে মোবাইলটা গেছে সেটা পাওয়া যায়নি, কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, মোবাইলটাকে তারা আর চার্জ করছে না। ইট ইজ অ্যা ডেড ফোন নাউ (এটা এখন মৃত ফোন)। ডেডবডি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যদি একটাকে চার্জ করতো তাহলে লোকেট (শনাক্ত) করা সহজ হতো। এটা এভাবেই আছে। এটা নিয়ে আমি দুঃখিত বা শঙ্কিত নই। এটা একটা অর্ডিনারি এক্সিডেন্টের (সাধারণ) ঘটনা। এর আগে গত ৩০ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর বিজয় সরণি থেকে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়ে যায়। যানজটে আটকে থাকা অবস্থায় মন্ত্রী এ ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply